আনোয়ার হোসেন রানা, ছিলেন ১৫’শ টাকার কর্মচারী। অংশীদারদের অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন সম্পদের প্রাচুর্য। নামে-বে নামে তার রয়েছে তার প্রচুর জমি, করেছেন অত্যাধুনিক বাড়ি। সম্পদের বিশালতার পরিচয় দিতে ব্যবহার করেন কোটি টাকা দামের একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি। এ যেন ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আনোয়ার হোসেন রানার চার শ্যালিকার দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) করা অভিযোগে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও করা হয়েছে শাশুড়ির শতকোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় জামিনে থাকা আনোয়ার হোসেন রানার বিরুদ্ধে।
দুদক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো অভিযোগের চিঠি সূত্রে জানা গেছে, নন্দীগ্রাম উপজেলা আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রানা অংশীদারদের ঠকিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি জ্ঞাত আয়বর্হিভূত কোটি কোটি টাকা সম্পদ অর্জন করেছেন।
অভিযোগে তার চার শ্যালিকা উল্লেখ্য করেন, আমাদের বাবা মরহুম আলহাজ সেখ সরিফ উদ্দিন উত্তরবঙ্গে প্রতিষ্ঠিত ‘সরিফ বিড়ি’সহ একাধিক ব্যবসাসফল প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ১৯৮৬ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের মা দেলওয়ারা বেগম পাঁচ বোনকে নিয়ে ব্যবসার হাল ধরেন এবং তা ধীরে ধীরে আরও সম্প্রসারিত করেন। আমাদের পাঁচ বোনের মধ্যে সবার বড় বোন আকিলা শরিফা সুলতানা খানমের স্বামী আলহাজ সাইফুল ইসলাম ২০০৬ সালে মারা যান। ওই সময়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানের ১৫’শ টাকা বেতনের কর্মচারী ছিলেন আনোয়ার হোসেন রানা। বড় বোনের স্বামী মারা যাওয়ার পর কর্মচারী আনোয়ার হোসেন রানা বিধবা শরিফা সুলতানাকে ২০০৯ সালে ভুল বুঝিয়ে পালিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। উল্লেখ্য, আনোয়ার হোসনে রানার পূর্বের স্ত্রী-সন্তান রয়েছে।
চিঠিতে আরও অভিযোগ করা হয়, আমাদের বোনকে বিয়ের পর রানা আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে শুরু করে। বাবার রেখে যাওয়া সম্পদের দিকে তার নজর পড়ে। আমাদের বয়স্ক বিধবা মায়ের সরলতা ও অক্ষরজ্ঞানহীনতার সুযোগে এক প্রকার অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সম্পত্তিসমূহ অংশীদার অর্থাৎ আমাদের ঠকিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে দলিল করে নেয়। এক্ষেত্রে আমাদের বড় বোন অর্থাৎ তার স্ত্রী তাকে সহযোগিতা করে।
অভিযোগে বলা হয়, আনোয়ার হোসেন রানা বিরুদ্ধে তার শ্বশুরের বগুড়ার শাকপালা মৌজার ২০ শতাংশ জমি, সূত্রাপুর মৌজার ৯৮ শতক জমি এবং ঢাকার মোহাম্মপুরের ১৪০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট দখল করে নেয়। এছাড়াও আমাদের মা দেলওয়ারা বেগমের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে সংরক্ষিত এফডিআর ও গচ্ছিত প্রায় শত কোটি টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেয়। আর এসব ঘটনা অভিযোগ আকারে বগুড়া সদর থানায় দেওয়ার পর পুলিশ তদন্ত করে মামলা হিসেবে গ্রহণ করে। এরপর ওই অভিযোগ রানা ও তার স্ত্রী গ্রেপ্তার হন। সেই মামলায় বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছেন।
বগুড়ার নন্দীগ্রামের কলেজপাড়াসহ আশপাশে নামে-বে নামে তার প্রচুর জমি, সেখানে অত্যাধুনিক বাড়ি করেছেন। বর্তমানে সেসব সম্পদের দাম কয়েক কোটি টাকার উপরে। যা আমাদের বোনকে ২০০৯ সালে বিয়ে করার আগে কখনোই ছিল না। সম্পদের বিশালতার পরিচয় দিতে কোটি টাকা দামের একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার শুরু করে। গাড়ির নম্বর: ১. ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৯১৪৩, হোন্ডা সিআরভি জীপ ২. হেভেল-৯ হার্ড জীপ ৩. সুজুকি ক্যালটাস কার ৪. রেজিস্ট্রেশন ছাড়া বিভিন্ন গাড়ি।
শহরের শাকপালায় নামে বেনামে দুইটি (এসআর প্রিন্টিং প্রেস এবং শরীফা প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন) স্বয়ংক্রিয় প্রিন্টিং প্রেস গড়েছে, সেখানে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। প্রেসগুলোতে বিড়িতে ব্যবহারের জন্য অবৈধভাবে ব্যান্ডরোল ছাপাতে এবং তা আমাদের প্রতিষ্ঠিত সরিফ বিড়িতে ব্যবহার করে সরকারকে প্রায় ২৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে জানতে আনোয়ার হোসেন রানার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, শাশুড়ির শতকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামি আনোয়ার হোসেন রানা জামিনে রয়েছেন। গত বছর শাশুড়ির শতকোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়টি বগুড়াসহ দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল।