ক্যাম্পাস

বসন্তের সুবাস বইছে নিটারে

ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে বাংলাদেশের প্রকৃতি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। পাতাঝরা শীতের বৈরাগ্য আর থাকে না। ডালে কচি কিশলয় উঁকি দেয়। পত্রপল্লবে ভরে যায় বৃক্ষের শাখা। মুকুলে মুকুলে মৌমাছির গুঞ্জন, কোকিলের কুহু তানে ভরে যায় মন। 

এদিকে ছায়া সুনিবিড় ক্যাম্পাস জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-নিটারের গাছে গাছে জন্মানো নতুন কুঁড়ি আর নানা রঙের ফুলই জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তা। শীতল হাওয়ার রুক্ষতা যখন সব আর্দ্রতা শুষে নিয়েছে, তখন আচমকাই প্রকৃতি তার দখিন দুয়ার উন্মুক্ত করে দেয়। না-শীতল, না-বর্ষণমুখর কিংবা গ্রীষ্মের গরম হাওয়াও নয়, এলোমেলো নরম দখিনা বাতাস-ই মনে শান্তি আনে। বসন্ত হচ্ছে অনুভব ও আবেগের ঋতু। আগুন রাঙা এই ফাগুন শুধু প্রকৃতিকেই উচ্ছ্বাস আর আবেগের রঙে রাঙায় না, এ আবেগ ছড়িয়ে পড়ে তরুণ প্রাণে।

‘রাঙা হাসি রাশি রাশি অশোকে-পলাশে’ বসন্তের ফুলের উল্লেখ রয়েছে এমন বহু গান-কবিতা আছে। মনে পড়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সেই গানー

‘‘আহা, আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে/এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়।’’ ঠিক তেমনি জবা, গাঁধা, গোলাপ, শিমুল, পলাশ ও কৃষ্ণচূড়ার রঙিন ফুলে বাতাস বইছে নিটারে। নিটার পেন্টাগনে রয়েছে প্রায় ৮০ রকমের ফুলের সমাহার।

আর ২ দিন বাকি, শুরু হতে যাচ্ছে ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম মাস ফাল্গুন। এদিন দেখা যাবে হলুদ শাড়ি আর খোঁপায় গোঁজা ফুলে তরুণীরা ব্যস্ত বসন্ত বরণে। মহামারির জন্য নিটারে এবারের চিত্র দেখা যাবে একটু ভিন্ন। শিক্ষার্থীবিহীন এক বসন্ত। প্রতিবছর বসন্ত বরণের আমেজ থাকলেও এবার তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই নিটারে। 

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, থিয়েটার, কামিনী তলা, প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনের সামনে লাল, নীল, খয়েরি ও হলুদ ফুলের সমাহার। এছাড়াও ক্যাম্পাস চত্বর এবং রাস্তার দুই ধারে গাঁদা ও গোলাপের সমাহার। পাতাঝরা শীতের রুক্ষতা কাটিয়ে গাছের ডালে ডালে উঁকি দিচ্ছে নতুন পাতা ও কুঁড়ি। সবুজ হয়ে উঠেছে চারপাশ। নবপত্রপল্লবে শোভিত হয়ে উঠছে ক্যাম্পাস। প্রকৃতিতে নতুনত্বের ছোঁয়া। ক্যাম্পাসের মাঠে পলাশের রক্তিম রঙ্গে রঙিন।

নানা কারণে ইতোমধ্যে পরিবর্তন এসেছে প্রকৃতিতে। কোনো ঋতুই এখন আর আগের মতো নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য বহন করে না। শীতকালে শীতের দেখা নেই। বর্ষায় বৃষ্টি মেলে না। এসব দেখেই হয়তো কবি চরণ লিখেছেন এভাবে ‘ফুল ফুটক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’। অথবা কবিকে স্মরণ করিয়ে দিতে হচ্ছে বসন্তের আগমনের কথা ‘হে কবি! নীবর কেন-ফাগুন যে এসেছে ধরায়, বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?’

কবির ভাষ্যমতে, ‘বসন্ত এলো যে ধরায়, উদাসী কোকিলের সুর মন ভরায়, কৃষ্ণচূড়ায় রাজপথ সাজে সংগীতের কলতান কানে বাজে।’ গানের সুরে বলতে হয়- ‘বাতাসে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা। কারা যে ডাকিল পিছে, বসন্ত এসে গেছে।’