ইউরোপে আয়তন বিবেচনায় রাশিয়ার পর সবচেয়ে বড় দেশ ইউক্রেন। দেশটির আয়তন ৬ লাখ ৩ হাজার ৬২৮ বর্গ কিলোমিটার। রাজধানী কিয়েভ। সম্প্রতি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে রাজনৈতিক বৈরিতা তুঙ্গে উঠেছে। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ লাগার উপক্রম। রাশিয়া ইউক্রেনের তুলনায় প্রায় ২৮ গুণ বড়। জনসংখ্যাও প্রায় ১৪ কোটি ২৩ লাখ বেশি।
সমর শক্তি বিবেচনায় দুই দেশের বিরাট পার্থক্য। রাশিয়ার দখলে ৬ হাজার ২৫৫টি পারমাণবিক বোমা থাকলেও ইউক্রেনের কাছে পারমাণবিক বোমা নেই। রাাশিয়ার আছে ১২ হাজার ৪২০টি ট্যাঙ্ক। অন্যদিকে ইউক্রেনের আছে ২ হাজার ৫৯৬টি ট্যাঙ্ক। এয়ারক্রাফট আছে রাশিয়ার ৭৭২টি, ইউক্রেনের আছে ৬৯টি। সামরিক তুলনায় প্রাথমিক এসব তথ্য থেকেই জানা যায় রাশিয়ার তুলনায় ইউক্রেন অনেক দুর্বল। কিন্তু ইউক্রেনের আছে বেশ পুরনো ইতিহাস, ঐতিহ্য। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে যায় দেশটি। চলুন ইউক্রেনের কিছু অজানা কথা জেনে নেওয়া যাক।
‘টানেল অব লাভ’ এর কথা শুনেছেন? ইউক্রেনের ক্লিভান এলাকায় এটি দেখা যায়। পুরনো রেল লাইনের উপরে সবুজ লতাপাতার আচ্ছাদন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিশাল আকারের এক টানেল। স্থানীয়রা মনে করেন এখানে যেসব প্রেমিক জুটি আসে, তাদের ইচ্ছে পূরণ হয়।
ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটেছিল ইউক্রেনের প্রিপসাত এলাকায়। চেরনোবিল নিউক্লিয়ার প্লান্টে ১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল ওই দুর্ঘটনায় প্রায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়, তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হন অসংখ্য মানুষ। এখনো প্রিপসাতের মতো কয়েকটি শহর আছে ইউক্রেনে যেখানে কোনো মানুষের বসবাস নেই।
বিশ্বের দ্বিতীয় গভীর সাবওয়ে স্টেশন আছে ইউক্রেনে। কিয়েভ মেট্রোরেলের আরসেনালনা স্টেশনটি ভূমি থেকে ৩৪৬ ফুট গভীরে অবস্থিত। ইউক্রেনে লুভিউ সিটিতে আছে কয়েকশ বছরের পুরনো অনেক কফি হাউজ। ইউক্রেন ও অস্ট্রিয়া দুই দেশই ইউরোপে প্রথম কফি শপ চালুর দাবি করে।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সূর্যমুখীর বীজ উৎপাদন হয় ইউক্রেনে। দেশটিতে বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে সূর্যমুখী ফুলের বাগান। বলা হয় ইউক্রেনে যে পরিমাণ জমি সূর্যমুখী চাষে ব্যবহার হয়, তা স্লোভেনিয়ার আয়তনের সমান।
ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে ইউক্রেন খুব সমৃদ্ধ এক দেশ। ছয়টি সাংস্কৃতিক ও একটি প্রাকৃতিক ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট আছে ইউক্রেনে। দেশটির বেশিরভাগ শহরের আছে পুরনো ইতিহাস, সেখানে ইতিহাস সংরক্ষণের ব্যবস্থাও ভালো। ইউক্রেনে অনেক দৃষ্টিনন্দন দুর্গ, প্রাসাদ ও চার্চ আছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শিক্ষিতের হার ইউক্রেনে। দেশটির প্রায় ১০০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ শিক্ষিত। ইউক্রেন ছাড়া শুধু উত্তর কোরিয়ায় শিক্ষার হার এমন বেশি।
ইউক্রেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গম উৎপাদনকারী দেশ। তাই ইউক্রেনকে ‘ইউরোপের রুটির ঝুড়ি’ বলা হয়।
ইউক্রেনের সাংস্কৃতিক ভূখণ্ড বলা হয় লুভিউ সিটিকে। সেখানে বিশ্বের প্রথম গ্যাস ল্যাম্প তৈরি করা হয় ১৮৫৩ সালে। জান জে ও ইগনেসি লুকাসিউজ নামের দুই ব্যক্তি সেই গ্যাস ল্যাম্প উদ্ভাবন করেন।
ইউরোপের মধ্যে জীবনধারায় সবচেয়ে কম ব্যয়ের দেশ ইউক্রেন। দেশটিতে খাবার ও যাতায়াত সব ক্ষেত্রেই কম খরচ হয় পর্যটকদের।
সূত্র: ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস