আনোয়ার হোসেন শাহীনমাগুরা, ৬ এপ্রিল : বিয়ের দাবিতে বিষের বোতল হাতে নিয়ে প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন মিনা খাতুন। ঘটনাটি জেলার শ্রীপুর উপজেলার গোয়ালবাড়ি গ্রামে।
গ্রামবাসী জানান, বিয়ের জন্য টানা ১৩ দিন অবস্থান করছেন মিনা খাতুন। তার অভিযোগ, প্রেমিক রিপন লস্কর (২৫) বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তাকে বিয়ে করছেন না। বিয়ের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মিনা এই বাড়ি ছাড়বেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। আর তা না হলে তিনি প্রেমিকের বাড়িতেই সবার সামনে বিষপানে আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।
মিনা খাতুন (২০) জানান, রিপনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কের কথা পাড়ার লোকজন, আত্মীয়স্বজন কারো অজানা নেই। কিন্তু বিয়ের জন্য বার বার সময় নিয়ে এখন অস্বীকার করছেন রিপন। এখন তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমার সঙ্গে প্রতারণা করছেন।
মিনা বলেন, ‘এ মুখ আমি মানষেরে কি এরে দেহাব। যে কারণে বিষের ( কীটনাশক) বোতল সঙ্গে কইরে এ বাড়ি চলি আইছি। আমি এর শ্যাষ দেখতি চাই। হয় বিয়ে, নয় বিষ খাইয়ে এ জীবন শ্যাষ কইরে দেব।’
প্রেমিক রিপন লস্কর (২৫) গোয়ালবাড়ী গ্রামের মৃত আব্দুল মালেক লস্করের ছেলে। বর্তমানে তিনি সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে কুমিল্লায় কর্মরত আছেন। মিনা একই উপজেলার বরইচারা গ্রামের মিরাজ শখের একমাত্র মেয়ে।
রোববার দুপুরে সরেজমিন গোয়ালবাড়ি গ্রামে রিপন লস্করের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, বিয়ের দাবিতে প্রেমিকা মিনা ওই বাড়ির শোবার ঘরের একটি কক্ষে অবস্থান করছেন। সাংবাদিক পরিচয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে দীর্ঘক্ষণ পর তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
মিনা জানান, তিন বছর আগে বরইচারা গ্রামে এক প্রতিবেশীর বিয়েতে সেনাসদস্য রিপন তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। বিয়ে করার শর্তে সে সময় মিনা ওই প্রস্তাবে সাড়া দেন। এর পর থেকে প্রতিনিয়ত মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ হত। রিপন ছুটিতে বাড়ি এলে তারা স্বামী-স্ত্রীর মত চলাফেরা ও জীবনযাপন করতেন। এরই মধ্যে ২০১২ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হয় মিনা। দুই পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী, স্বজনরা অনেকেই বিষয়টি জানতেন। ফলে বার বার বিয়ের জন্য চাপ দিলেও রিপনের চাকরির বয়স পাঁচ বছর পূর্ণ না হলে বিয়ে করবেন না বলে জানান।
সময়ক্ষেপনের পর ‘নষ্ট চরিত্র’ অভিযোগ দিয়ে রিপন মিনাকে বিয়ে করবে না বলে জানান। এ ঘটনার পর ২৫ মার্চ প্রেমিকা মিনা বিয়ের দাবিতে বরইচারার বাবার বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রেমিক রিপনের গোয়ালবাড়ি গ্রামে চলে আসেন। সেই থেকে কীটনাশকের বোতল সঙ্গে নিয়ে বিয়ের দাবিতে এখানেই আবস্থান করছেন তিনি।
মিনা জানিয়েছেন, স্ত্রীর স্বীকৃতির জন্য আমৃত্যু তিনি এ বাড়িতে অবস্থান করবেন। রিপন তাকে বিয়ে না করলে বিষ খেয়ে জীবন শেষ করে দেবেন।
রিপনের ছোট ভাই জানান,‘মেয়েটির চরিত্র খারাপ বলে ভাই বিয়েতে রাজি হচ্ছেন না।’
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান জানান, ‘ঘটনাটি সত্য, বিয়ে বা বিষয়টি মীমাংসার জন্য তিন গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এক হয়ে বসেছিলাম। কিন্তু রিপন কোন শালিস মানেননি।’
শ্রীপুর থানার ওসি আকতারুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমরা শুনেছি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব। সেনা ছাউনিতে থাকায় রিপনের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।’
রাইজিংবিডি/রণজিৎ/সন্তোষ