উত্তাল ঢেউয়ে জেগে উঠেছিল দীর্ঘ সৈকত। সৃষ্টি করেছিল নতুন মোহনা। জোয়ার ভাটার টানে সেই মোহনার রূপ বদলায়। জলের স্রোত বাড়ে-কমে। তবে চিরচেনা সমুদ্রের গর্জন তোলা ঢেউয়ের দেখা মেলে না এই সৈকতে। বালুঘেরা দীর্ঘ সমুদ্র পাড়ের পাশেই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। সেখানেই ছোট্ট করে সাজানো সী-বীচ।
নাম 'দখিনা হাওয়া।' যেখানে সমুদ্রের শান্ত ঢেউ পায়ের পাতায় ভিজিয়ে অনুভূতি দেয় 'সাগর ছোঁয়ার সুখ।'
পাড়জুড়ে দাঁড়িয়ে নারকেল বন। হু হু বাতাসে পাতা থেকে পাতায় শিহরণ খেলে উপকূলের সামুদ্রিক হাওয়ার কোলাহল। মনপুরা দ্বীপে বেড়ানোর মোক্ষম সময় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির শেষাংশ। এরপরে গরম, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস। এসবের সঙ্গে নিত্যদিনের সয়ে যাওয়া জীবনের ছাপ বোঝা যায়, 'ঢেউয়ের ফেলে যাওয়া পুরো সৈকত।'
বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের ধাক্কায় প্রায় এক কিলোমিটার বালুকাময় সমুদ্র সৈকতটি জেগে ওঠে। স্থানীয়রা বলেন, 'মেঘনা নদী শেষ হয়ে সমুদ্র সৈকতের শুরু এখানেই।’ উপকূলের চিরচেনা রূপ নিয়ে ভোলা জেলার সড়ক সংযোগহীন দ্বীপ মনপুরা উপজেলার সাকুচিয়া ইউনিয়নের সাকুচিয়া গ্রামে এ সমুদ্র তীর।
ঢেউয়ে জেগে উঠলেও সারা বছর শান্তশিষ্ট এ সমুদ্র সৈকত। সমুদ্রের নির্জনতা উদাসীন করে তুলবে যে কাউকেই। সেজন্য সৈকত পাড়ের বালুর মাঠে কিছু হেলান চেয়ার আর গোলাঘর বসানো হয়েছে। যেখানে দর্শনার্থীরা বসে কাটিয়ে দেবেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। হিমেল হাওয়া আর শান্ত তট যেনো তৈরি করে এক রোমাঞ্চিত পরিবেশ। যেখানে হারিয়ে যাওয়া যায় অনায়াসে।
সৈকতে দাঁড়িয়ে তীরে রাখা কাঠের হেলান চেয়ারের মতো সমুদ্রকেও যেনো একই রূপে বসিয়ে দেয়া হয়েছে বলেই মনে হবে। জানা গেলো, ওটা আসলে মেঘনা নদীর বঙ্গোপসাগরে মিশে যাওয়ার মোহনা।
সেখানে সমুদ্রের বুক চিরে উড়ে গেল কতগুলো অচেনা পাখি, হয়তো বা অজানা পথে, হয়তো বা ঘরে ফেরার টানে! পড়ন্ত বিকেলে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে মনে হলো জোয়ার আসছে— সমস্ত কোলাহল ছাপিয়ে শোনা যাচ্ছিল তার কলকল শব্দ। যেখানে গর্জনের দেখা নেই।
রাতে থাকার কিংবা খাবারের জন্য ভালো ব্যবস্থা নেই মনপুরার দখিনা হাওয়া সৈকতের তীরে। উপজেলা শহরের ভেতরে হাজিরহাট ও জনতার ঘাট এলাকায় আবাসিক হোটেল ও খাবারের দোকান রয়েছে। সেখানে যেতে হবে মোটরসাইকেলে করে।
ছোট্ট জায়গা। কিন্তু মুগ্ধতায় চাঁদরে ঘিরে নেবে যে কাউকেই। তাই তো নির্জন সমুদ্র সৈকতটিতে ক্রমেই ভিড় জমাতে শুরু করেছে ভ্রমণ পিপাসুরা।