খেলাধুলা

শেষ বিকেলে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে ড্র করাচি টেস্ট

জিততে হলে ৫০৬ রান করে বিশ্বরেকর্ড গড়তে হবে, নয়তো টিকে থাকতে হবে ১৭২ ওভার। কোনোটিই এতটুকু সহজ নয়। তারপর আবার ২১ রানে পড়ে গেছে ২ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার পেসাররা যেন একেকটা গোলা ছুড়ছেন, আর অন্য দিক থেকে আসছে স্পিনারদের ভয়ঙ্কর সব ঘূর্ণি। সেই আঘাতে পাকিস্তান যেন ডুবন্ত জাহাজ। করাচি টেস্টে চতুর্থ দিন দ্বিতীয় সেশনের শুরুর দিকের চিত্র এটি। কিন্তু শক্ত হাতে জাহাজের হাল ধরেন বাবর আজম। আস্তে আস্তে সেই ডুবতে থাকা জাহাজকে সামনে এগিয়ে নিতে থাকেন। কিন্তু হঠাৎ করেই হাল ছেড়ে দিতে হয় তাকে। তাতে আবার জয়ের স্বপ্ন পেয়ে বসে অস্ট্রেলিয়াকে, শেষ বিকেলে ছড়ায় রোমাঞ্চ। ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ যাদের তকমা, সেই পাকিস্তান অবশ্য এবার অনিশ্চয়তার ভেলাকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত ড্রয়ের বন্দরে নিয়ে যেতে পেরেছে মোহাম্মদ রিজওয়ানের সেঞ্চুরিতে। 

চতুর্থ দিন সকাল সকাল ৯৭ রানে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণার পর বড় লক্ষ্যে নেমে পাকিস্তানের যে সূচনা হয়েছিল, তাতে আত্মবিশ্বাস স্বাভাবিকভাবে নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু দাঁড়িয়ে যান বাবর, সঙ্গী আব্দুল্লাহ শফিক। বাকি দুই সেশন অস্ট্রেলিয়ার মারণাস্ত্রদের ভোঁতা করে দেন তারা ১৭১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে মঙ্গলবারের খেলা শেষ করে, দুই বছর পর বাবর টেস্ট সেঞ্চুরি করে অপরাজিত ছিলেন।

শেষ দিন প্রতিরোধ করতে হবে ৯০ ওভার, কিংবা জিততে দরকার ৩১৪ রান। আর অস্ট্রেলিয়ার চাই ৮ উইকেট। বাবর আর শফিক যেখানে দিন শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই শুরু করলেন নতুন দিন। ২ উইকেটে ১৯২ রানে বুধবারের খেলা শুরু। অবশেষে লাঞ্চের ঠিক দুই ওভার আগে জমে যাওয়া এই জুটি ভাঙেন প্যাট কামিন্স। অল্পের জন্য শফিক মিস করেন সেঞ্চুরি। তাকে ২০ রানে জীবন দেওয়া স্টিভেন স্মিথ এবার আর ভুল করেননি। কামিন্সের ষষ্ঠ স্টাম্পে ফেলা বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ধরা পড়েন স্মিথের হাতে। ৩০৫ বলে ৯৬ রানের ইনিংস থেমে যায়। ভাঙে ২২৮ রানের দারুণ এক জুটি।

দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে আরেকটি উইকেট। কামিন্সের বলে ৯ রানে ফাওয়াদ আলম অ্যালেক্স ক্যারির গ্লাভসে ধরা পড়েন। ২৭৭ রানে নেই ৪ উইকেট। ততক্ষণে বাবর কিন্তু হাল ছাড়েননি, আগের সেরা ১৪৩ রানকে পেছনে ফেলে প্রতিরোধের ব্যাটন ধরে ছিলেন। কামিন্সের গোলা আর স্পিনারদের ভয়ঙ্কর আক্রমণ সামলে নেন। এবার তার সহযোগী রিজওয়ান।

বাবর যে কোনো বাধা ছাড়াই ব্যাটিং করে গেছেন তা নয়। চা বিরতির আগে ১৫৭ রানে তাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেছিলেন নাথান লিয়ন। ডিআরএসে আম্পায়ার্স কলে নট আউটের সিদ্ধান্ত টিকে যায়। মিচেল সোয়েপসনের বলে টানা দুইবার ট্র্যাভিস হেড ও মার্নাস লাবুশেনের হাত ফসকে জীবন পান বাবর। বেশ সতর্ক থেকে প্রথম ডাবলের পথে হাঁটছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে চতুর্থ ইনিংসে চারশ বা তার বেশি বল মোকাবিলার কীর্তি গড়ার পর অধিনায়ক হিসেবে শেষ ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোরও করে ফেলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই ছন্দপতন, লিয়নের জোড়া আঘাত। যার প্রথম শিকার বাবর নিজেই।

দিন শেষ হওয়ার ১২.২ ওভার আগে অধিনায়কের বিদায়ে ম্যাচে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। লিয়নের এক্সট্রা বাউন্স পাওয়া বল বাবরের ডিফেন্সিভ শটে ব্যাট-প্যাড হয়ে শর্ট ফরোয়ার্ড লেগে দাঁড়ানো মার্নাস লাবুশেনের হাতে ধরা পড়ে। ৪২৫ বলে ১৯৬ রানে থামেন বাবর। রিজওয়ানের সঙ্গে তার ১১৫ রানের এই জুটি ভাঙার পর বিপদে পড়েছিল পাকিস্তান। পরের বলে ফাহিম আশরাফকে স্লিপে স্মিথের ক্যাচ বানিয়ে হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করেন লিয়ন। যদিও সাজিদ খান অজি স্পিনারকে হতাশ করেন।

সাজিদকে নিয়ে রিজওয়ান প্রান্ত অদল বদল করে ম্যাচ বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সাজিদ। দিনের ৮ ওভার বাকি থাকতে সপ্তম উইকেটের পতন ঘটে। লিয়নের বলে তিনি (৯) স্লিপে ক্যাচ দেন স্মিথকে।

একমাত্র নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান হয়ে দলকে ড্রয়ের দিকে এগিয়ে নিতে থাকেন রিজওয়ান। তিন ওভার বাকি থাকতে বড় বাঁচা বেঁচে যান তিনি। নিজের ৯১ রানে এক্সট্রা কভারে উসমান খাজা তার ক্যাচ ফেলে দিলেন জীবন পান।

জীবন পাওয়া রিজওয়ান শেষের আগের ওভারে পেয়ে যান ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। লিয়নের ওই ওভারে দুটি চার মারার পর শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে ১৭৩ বলে শতকের দেখা পান। দিনের শেষ ওভারে চার বল পরই স্টাম্প ঘোষণা করেন আম্পায়ার। ৭ উইকেটে ৪৪৩ রানে থামে পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংস। ম্যাচসেরা বাবরের মহাকাব্যিক ইনিংস আক্ষেপে শেষ হলেও তা কিন্তু বৃথা গেল না।

তিন ম্যাচের সিরিজে এখনো কেউ এগিয়ে যেতে পারেনি। সিরিজ নির্ধারণী শেষ টেস্ট হবে লাহোরে আগামী ২১ মার্চ।