রাইজিংবিডি স্পেশাল

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিক্রয় কার্যক্রমে অনিয়মের অভি‌যোগ

দ্রব্যমূ‌ল্যের ঊর্ধ্বগ‌তি ঠেকা‌নো যা‌চ্ছে না কোনোভা‌বে। বাজা‌রে সব নিত্যপণ্যের দাম প্রতি‌দিনই কো‌নো না কো‌নো অজুহা‌তে বাড়‌ছে। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা‌য়ীরা পরস্পর‌কে দোষা‌রোপ কর‌ছেন। আর ভোক্তারা বল‌ছেন, এটা পাইকা‌রি ও খুচরা ব্যবসায়ী‌দের যৌথ সি‌ন্ডি‌কেট।

বাজা‌রের অ‌স্থিরতা অবস্থা থে‌কে সাধারণ মানুষ‌কে স্ব‌স্তি দি‌তে দীর্ঘ‌দিন ধ‌রে সরকা‌রি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর‌পো‌রেশন অব বাংলা‌দেশ (টি‌সি‌বি) নির্ধা‌রিত প‌রি‌বেশ‌কদের মাধ্য‌মে সারা‌দে‌শে খোলা ট্রা‌কে ক‌রে পণ্য বি‌ক্রি কর‌ছে। যা‌তে ডাল, তেল, চি‌নি, পেঁয়াজ, খেজুর, ছোলা বি‌ক্রি করা হয়। বাজা‌রের চে‌য়ে এসব প‌ণ্য কি‌নে কে‌জি‌তে ২০ থে‌কে ৫০ টাকাও সাশ্রয় হয় সাধারণ মানুষ‌দের।

রোজার প্রথম দিন থে‌কে টি‌সি‌বির পাশাপা‌শি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারা দেশে ন্যায্যমূল্যে গরুর মাংস, খা‌সির মাংস, দুধ ও ডিম বিক্রি করছে। কিন্তু, তা‌দের বিক্রয়কেন্দ্রকে ঘি‌রে প্রথম দিন থে‌কেই অভি‌যোগ কর‌তে থাকেন এসব মালামাল কিন‌তে আসা সাধারণ মানুষজন।

সোমবার (৫ এপ্রিল) স‌রেজ‌মিনে গি‌য়ে দেখা যায়, রাজধানীর খামারবা‌ড়ির সাম‌নে ইসলা‌মিয়া চক্ষু হাসপাতা‌লের প‌শ্চিম গেটে ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে সকাল ১০টা থে‌কে মানুষজন প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। সকাল ১০টায় গা‌ড়ি আসার কথা থাক‌লেও তা আসে ১১টার পর। কিছুক্ষণ পরই (‌দুপুর ১২টা) বিক্রয়কর্মীরা জানান, গরু, খাসি ও মুরগির মাংস শেষ। এ সময় ক্ষো‌ভে ফে‌টে প‌ড়েন লাই‌নে দাঁড়া‌নো ২৫-৩০ জন মানুষ।

তা‌দের একজন নাজমা বেগম। তিনি এসে‌ছেন তল্লাবাগ থে‌কে। নাজমা বেগম রাইজিংবি‌ডি‌কে ব‌লেন, ‘১০টার সময় লাইনে দাঁড়িয়ে‌ছি। গা‌ড়ি এসে‌ছে ১১টার প‌রে। আমার আগে ২০ জ‌নের মতো মানুষ‌কে মাংস দি‌য়ে‌ছে। এখন ব‌লছে, মাংস শেষ। গরুর মাংস কেনার জন্যই এসে‌ছিলাম। খা‌লি হা‌তে ফি‌রে যা‌চ্ছি।’

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে মানুষের ভিড়

নুরুল আমিন ব‌লেন, ‘বাজা‌রে গরুর মাংস ৭০০ টাকা। ভাবলাম, এখানে ৫৫০ টাকায় কিনতে পার‌বে। তাই, লাইনে দাঁড়ি‌য়ে‌ছি। এখন দেখি মাংস শেষ। তাই, শুধু ডিম কি‌নে নি‌য়ে যা‌চ্ছি।’

সাংবাদিক পরিচয় জেনে লাইনে দাঁড়া‌নো ‌রিপন আহ‌মেদ নামের এক শিক্ষার্থী অনু‌রোধ ক‌রে বল‌লেন, ‘আপনারা ‌প্লিজ একটু খোঁজ নি‌য়ে দে‌খেন। এরা কো‌নো মাংসের দোকা‌নের স‌ঙ্গে কন্ট্রাক্ট ক‌রে বে‌শিরভাগ মাংস বে‌শি দা‌মে বে‌চে দি‌য়ে‌ছে। নইলে এতগু‌লো মাংস যা‌বে কোথায়?’

এত তাড়াতা‌ড়ি সব মাংস শেষ হওয়ার বিষ‌য়ে জান‌তে চাইলে বিক্রয়কর্মী র‌বিন ব‌লেন, ‘আমরা ১০০ কে‌জি গরুর মাংস, ৩০ কে‌জি খা‌সির মাংস ও ১০০ কে‌জি মুরগির মাংস এনে‌ছি। সব শেষ। এখন শুধু ডিম আর দুধ আছে।’

র‌বি‌নের হিসাব শু‌নে লাই‌নে দাঁড়া‌নো মানুষজন চিৎকার ক‌রে ওঠেন। তা‌দের একজন ম‌জিবর রহমান। তি‌নি উপ‌স্থিত ক‌য়েকজন সাংবা‌দিক‌কে অনু‌রোধ ক‌রেন, ওরা যে মালামাল বি‌ক্রি কর‌ছে, সেই হিসাবটা দেখ‌তে। র‌বিন প্রথ‌মে রা‌জি না হ‌লেও উপ‌স্থিত মানুষ ও সাংবা‌দিক‌দের চা‌পে প‌ড়ে হিসাব দেখান। তার কা‌ছে র‌ক্ষিত বই‌য়ের কার্বন ক‌পি‌তে মোট ৪৫ কে‌জি গরুর মাংস, ২০ কে‌জি খা‌সির মাংস ও ৬০ কে‌জি মুরগির মাংস বিক্রির হিসাব পাওয়া যায়।

তাহ‌লে বা‌কি মাংস গে‌লে কোথায়? র‌বিন বা অন্য পাঁচজন বিক্রয়কর্মীর কেউ এ ‌বিষ‌য়ে কো‌নো সদুত্তর দি‌তে পা‌রে‌ননি। উপ‌স্থিত ক‌য়েকজন চিৎকার ক‌রে বলেন, ওরা বাকি মাংসগুলো ‌দোকা‌নে বি‌ক্রি ক‌রে দি‌য়ে‌ছে।

উল্লেখ্য, বাজা‌রে গরুর মাংসের কে‌জি ৭০০ টাকা, খা‌সির মাংস ১০০০ টাকা, জ্যান্ত ব্রয়লার মুরগি ১৮৫ টাকা, দুধ ৮০ টাকা, ডিম (ডজন) ১১০ টাকা দা‌মে বি‌ক্রি হ‌চ্ছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিক্রয়কে‌ন্দ্রে গরুর মাংসের কে‌জি ৫৫০ টাকা, খা‌সির মাংস ৮০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি (ড্রেসিং করা) ২০০ টাকা, দুধ ৬০ টাকা ও ডিম (ডজন) ৯০ টাকা দা‌মে বি‌ক্রি করা হয়।