খেলাধুলা

‘সে কি মজা করছে?’

সাইমন হার্মারকে সুইপ করে স্কয়ার লেগ দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠালেন মুশফিকুর রহিম। ৪৭ থেকে তার রান পৌঁছে গেল ৫১ তে। ১৩৪ বলে ফিফটি।

সময় নিলেন ১৯২ মিনিট। সময়ের হিসেবে তার মন্থরতম ফিফটি। দল যখন খাদের কিনারায় তখন দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে প্রোটিয়া আক্রমণ রুখে দেন মুশফিক। দলের সিনিয়র ক্রিকেটার, অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। তার থেকে প্রত্যাশাও আকাশচুম্বি। তাইতো ফিফটিতে পৌঁছতে অজস্র সময় নিয়েছেন।

ধারাভাষ্যকার মার্ক নিকোলস প্রশংসা করতে পিছপা হননি, ‘মুশফিক দারুণ পেশাদার।’ কিন্তু এক বল পর মুশফিক যা করলেন তাতে মার্ক নিকোলস প্রশ্ন করলেন, ‘সে কি এখানে মজা করছে? কি হচ্ছে?’

মধ্যাহ্ন বিরতি হতে বাকি ৫ মিনিট। প্রোটিয়া খেলোয়াড়রাও যেন চাইছিলেন দিনের প্রথম সেশনটা শেষ হোক। তাই আলগা বোলিং করছিলেন। কিন্তু তাতেই মিলে যায় মুশফিকের উইকেট। ফিফটিতে পৌঁছার এক বল পরই মুশফিক রিভার্স সুইপ করলেন। বল নিচু হয়ে তার অফস্টাম্পে আঘাত করে। উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে এলগার, ভেরানেরা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। সত্যিই কি মুশফিক রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হলেন?- তাদের অবয়ব এমনই ছিল।

৮০তম টেস্ট খেলতে নেমে মুশফিকের এমন শট স্রেফ আত্মঘাতি। ফলোঅন যখন চোখ রাঙানি দিচ্ছিল তখন মুশফিকের উইকেট উপহার দিয়ে আসা স্রেফ অবিশ্বাস্য। অথচ দলের এমন কঠিনতম সময়ে ফিফটি ভুলে নতুন করে ইনিংস শুরু করার কথা তার। প্রোটিয়া আক্রমণের বিরুদ্ধে আবার নতুন করে এগিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তালগোল পাকানো শটে প্রতিশ্রুতিশীল ইনিংসের সমাধি হয় সেখানে।

রিভার্স সুইপে মুশফিক একাধিকবার দলকে ডুবিয়েছেন। আবার অনেক সময় রানও পেয়েছেন। এটি তার প্রিয় শটের একটি। কিন্তু সময়, পরিস্থিতি বুঝে খেলতে হয় এমন শট। এটি এমন একটি শট যা কখনো শতভাগ আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলা যায় না। বল যে কোনো সময় গতি, দিক পরিবর্তন করতে পারে। কখনো স্বাভাবিকের তুলনায় জোরে আসতে পারে, কখনো আস্তে আসতে পারে। কখনো বেশি বাক খেতে পারে। কখনো কম বাক খেতে পারে। অসমান বাউন্সে বল উচু নিচু হতে পারে।

অথচ এমন শট নিয়ে মুশফিক বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে একবার বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, এটা আমার প্রিয় শটগুলির একটি এবং আমার একটি শক্তির জায়গাও। এরকম পরিস্থিতি আসেনি (এই ম্যাচে), এলে অবশ্যই আবার খেলবো এবং এটাও বলতে চাই, পরিস্থিতি এলে একটা নয়, আরও চার-পাঁচটাও খেলতে পারবো।’