প্রবাস

রোমে বাংলা নববর্ষ ও রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী উদযাপন  

ইতালির রোমের বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে দূতাবাস প্রাঙ্গণে বাংলা নববর্ষ ১৪২৯, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে।

রোমের বাংলাদেশ দূতাবাস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রোববার (২৩ মে) ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 

আয়োজনে বাংলা নববর্ষ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন, কর্ম ও দর্শনের ওপর বিশেষজ্ঞ আলোচক, বিদেশি বন্ধু ও কম্যুনিটি নেতাদের অংশগ্রহণে আলোচনা, দূতাবাসের সদস্য ও শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

রোমে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান তার স্বাগত বক্তব্যের শুরুতে বাংলা নববর্ষকে বাঙালি জাতির অসাম্প্রদায়িক চেতনার উৎস এবং একান্তই আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শাশ্বত বাহক হিসেবে অনন্য এক উদযাপন হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, বাঙালি জাতির নিজস্ব পঞ্জিকাবর্ষের প্রথম দিনটি নববর্ষ হিসেবে দেশের সঙ্গে সঙ্গে বিদেশেও বর্ণাঢ্যভাবে উদযাপিত হয়।

রাষ্ট্রদূত আহসান গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলা নববর্ষকে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপনের ঘোষণা দেন।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে বাংলা নববর্ষের ওতপ্রোত ভূমিকা উপলব্ধি করে বাংলা নববর্ষ ভাতা প্রবর্তন করেছেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগেই বাংলাদেশের রবীন্দ্র চর্চার বিকাশে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামেও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে।

রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাঙালির জাতীয় জীবনের সঙ্গে সর্বদা প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে তাদের বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান দুই স্তম্ভ এবং বিশ্ব সাহিত্যের মূল্যবান সম্পদ হিসেবে অভিহিত করেন। 

তিনি আশা প্রকাশ করেন, ইতালিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি ভাই-বোনেরাও নববর্ষ এবং রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মধ্যে আবহমান বাংলার সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেবেন।

বিশেষজ্ঞ আলোচনা পর্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন রোমে অবস্থিত বিশ্বখ্যাত রোমের লা স্পাইঞ্জা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জর্জিও মিলানেত্তি। তিনি তার বক্তব্যে সংস্কৃতির বহমানতাকে দেশ-দেশান্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি ইতালিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে বলে স্মরণ করিয়ে দেন এবং ইতালি ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণতা বাড়বে বলে মত প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সাতক্ষীরায় প্রায় ৫০ বছর যাবৎ ‘ঋশিল্পী’ সংগঠনের সঙ্গে কর্মরত বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী ইতালিয়ান দম্পতি গ্র্যাজেলা মেলানো ও ভিনকেজো ফালকোন সশরীরে অংশগ্রহণ করেন এবং বাংলা ভাষায় তাদের আবেগ প্রকাশ করেন, যা অংশগ্রহণকারীদের গভীরভাবে উদ্বেলিত করে।

অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে ইতালিতে বসবাসরত বাংলাদেশ কম্যুনিটির নেতা, সাংবাদিক, ইতালিয়ান নাগরিক, দূতাবাসের সদস্য ছাড়াও রোমের টোর ভারগাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।

কোভিড মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে ইতালি সরকার কর্তৃক আরোপিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শুধুমাত্র দূতাবাসের সদস্যদের উপস্থিতিতে সীমিত পরিসরে দূতাবাসে এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।