খেলাধুলা

কনকাশন সাব থেকে সাকিবদের ত্রাস রাজিথা

ঢাকায় যখন তিনি পা রাখেন, হয়তো কল্পনাও করেননি তার জন্য কী অপেক্ষা করছে! দুই ফার্নান্দো, বিশ্ব ও আসিথাকে ছাপিয়ে একাদশে জায়গা পাওয়ার প্রত্যাশা একদমই ছিল না কাসুন রাজিথার। কিন্তু ভাগ্যদেবী যে তার জন্য লিখে রেখেছিলেন এক রোমাঞ্চকর গল্প, নিজেকে চেনার গল্প কিংবা অর্জনের গল্প। 

রাজিথার এই যাত্রাকে এক কথায় বলা যেতে পারে, ‘কারও সর্বনাশ তো কারও পৌষ মাস।’ শরিফুল ইসলামের শর্ট বলে মাথায় আঘাত পেয়ে চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন ছিটকে যান বিশ্ব। যদিও তিনি আঘাত পেয়েছিলেন দ্বিতীয় দিন। কিন্তু পরদিনও মাথায় ব্যথা অনুভব করায় কনকাশন সাব হিসেবে আবির্ভাব ঘটে রাজিথার। 

এরপর বোলিং তোপে ক্যামেরার সব ফোকাস কেড়ে নিলেন ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি দৈর্ঘের রাজিথা। ২৪.৪ ওভার বোলিং করে ৬০ রান দিয়ে একাই নিয়ে নিলেন ৪ উইকেটে। লঙ্কান ইনিংসে তিনি সেরা উইকেট শিকারি বোলার। আসিথার সঙ্গে তৈরি হলো দারুণ ‘পেয়ার’।

মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পেয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কান টিম ম্যানেজমেন্ট ঢাকা টেস্টের একাদশ থেকে রাজিথাকে ছেঁটে ফেলার সাহস পাননি। অগত্যা ফুল ফিট হলেও বিশ্বকে থাকতে হয় ডাগ আউটে। রাজিথাও দুই মুঠো ভরে দিলেন আস্থার প্রতিদান। ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে প্রথমবারের মতো ক্যারিয়ারে ফাইফার নিলেন। 

ঢাকা টেস্টে ইনিংসে ৫ উইকেট নেন রাজিথা (ছবি: বিসিবি)

শুধু তাই নয়, রাজিথা-আসিথা যেন হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের যম। প্রথম সকালে ২৪/৫-এর নায়ক তারাই। ভুগিয়েছেন দ্বিতীয় দিনও। প্রথম ইনিংসে রাজিথা-আসিথা জুটি নিয়েছেন বাংলাদেশের ৯ উইকেট! ইবাদত হোসেন যদি রানআউট না হতেন তাহলে প্রথম শ্রীলঙ্কান পেসার জুটি হয়ে ১০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়তে পারতেন।  

দ্বিতীয় ইনিংসেও রাজিথার আক্রমণ বিদ্যামান। চতুর্থ দিন শেষ বিকেলে ধস নামিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। দারুণ এক ডেলিভারিতে মুশফিকুর রহিমকে বোল্ড করে পঞ্চম দিন সকালে লঙ্কান শিবিরে স্বস্তি এনে দেন রাজিথা। 

যার খেলার কথাই ছিল না, সেই রাজিথা এখন পর্যন্ত সিরিজে নিয়েছেন ১১ উইকেট! বল গতির সঙ্গে মুভ করার  দারুণ দক্ষতা এই ডানহাতি ফাস্ট বোলারের। ঢাকা  টেস্ট খেলতে নামার আগে সমান ১০টি করে ম্যাচ খেলেছেন তিন সংস্করণেই। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্টে ১১ উইকেট নিয়ে তার যাত্রা শুরু হয়েছিলে। পরের বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে ছিলেন দ্বিতীয় সেরা উইকেট শিকারি। এরপর কুঁচকির চোটে ছিটকে যান দল থেকেই। চট্টগ্রাম টেস্ট দিয়ে তার প্রত্যাবর্তন ঘটে দেড় বছর পর। 

ইনজুরি থেকে ফিরে রাজিথা যেন হয়েছেন আরও ভয়ঙ্কর।  ‘আমি অনেক অনেক অনুশীলন ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলাম ফিজিও-ট্রেনারের সঙ্গে। আমার অনেক ইনজুরি ছিল। গত ১৮ মাস পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলাম। এ কারণেই আমি আজ এখানে এবং পারফর্ম করছি।’- ঢাকা টেস্টে ফাইফার নেওয়ার পর নিজের প্রত্যাবর্তন নিয়ে ঠিক এভাবেই বলেছিলেন রাজিথা। 

রাজিথার প্রত্যাবর্তনের গল্প যে কারও জন্য হতে পারে অনুপ্রেরণার। চতুর্থ দিন শেষ বিকালে বলা সাকিব আল হাসানের একটি কথা দিয়ে ইতি টানা যাক, ‘শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত শেষ বলাটা ঠিক না।’ ইনজুরিতে নিজেকে শেষ বলে ভাবেননি রাজিথা, ফিরে এসেছেন আরও দারুণভাবে, আরও আগ্রাসীভাবে।