সাতসতেরো

বাটালি হিলের সেই গায়ক এখন পাবলিক টয়লেটের কেয়ারটেকার 

‘বাটালি হিলের সেই বিকেল কেন আর কাছে আসে না…’ নব্বই দশকের বিখ্যাত এই গানটি বাণিজ্যশহর চট্টগ্রামে সাড়া জাগিয়েছিল। তখন দেশের ব্যান্ডসংগীতের সোনালি যুগ। চট্টগ্রাম থেকে একে একে উঠে আসছে তরুণতুর্কীর দল। ‘ব্লু হরনেট’ ব্যান্ডের দলটিও তখন সুনাম কুড়িয়েছিল এই গানের মাধ্যমে। 

গানটি যে তরুণ লিখে গেয়েছিলেন তিনি মনসুর। সেই সময়ের তরুণপ্রাণ, সংগীতে জীবন সপে দেওয়া মনসুর আজ বয়সের ভারে বার্ধক্যের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছেন। সংগীত জীবন থেকে বহুদূরে ছেড়ে গেছে অনেক আগেই। সে আরেক গল্প। তবে হঠাৎ করেই যে দৃশ্যটি সামনে চলে এসেছে তা বেদনাদায়ক! বিশেষ করে ব্যান্ডসংগীতকে যারা ভালোবাসেন তারা চমকে উঠেছেন এতো দিন পর মনসুরকে দেখে। এই গায়কের এখন জীবন চলে গণশৌচাগারের কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পালন করে।  

মনসুর এখন 

নগরীর জামালখান মোড়ের গণশৌচাগারের তত্ত্বাবধায়কই যে বাটালি হিলের সেই বিকেল বেলা গানের কণ্ঠশিল্পী মনসুর বিষয়টি অনেকেই জানতেন না। তাকে আবিষ্কার করেন জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ। মনসুরকে নিয়ে একটি লাইভ ভিডিও করেন তিনি। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় ভক্তদের স্মৃতিকাতরতা।

নিয়তির রেখা বড় বিচিত্র। জীবনের হিসাব কখন কাকে কোথায় নিয়ে যায় কে জানে? শৈবাল দাশের ভিডিও থেকে জানা যায়, ছোট থেকেই গানপাগল মনসুর। ১৯৮৬ সালে হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজে পড়ার সময় গানপাগল বন্ধুদের সঙ্গে মিলে ব্যান্ড দল গড়ে তোলেন। নিজেরাই গান লিখতেন, সুর করতেন এবং গাইতেন। ব্যান্ড নিয়ে ব্যস্ত থাকায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা হয়নি মনসুরের। পরিবার থেকে দূরত্ব বাড়ে তার। নব্বইয়ের দশকে ব্লু হরনেট বের করে তাদের প্রথম অ্যালবাম। অ্যালবামের ১৪টি গানের মধ্যে মনসুরের লেখা ছিল ৩টি গান— ‘বাটালি হিলের সেই বিকেল’, ‘ছোট্ট একটি মেয়ে’, ‘সারাটি রাত’।  

নিজের গড়া ব্যান্ড দলের সঙ্গে মনসুর 

জীবনের এক পর্যায়ে মনসুর জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। এরপর ১৯৯২ সালের দিকে ব্যান্ড ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করতে চাইলেও সেখানে সফলতা আসেনি। ইতোমধ্যে বাবা-মা মারা গেলে আর ঘরে ফেরেননি তিনি। পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তিনি। এমনকি বিয়েটাও করা হয়নি তার। এরপর ২০১৮ সালে শৌচাগার দেখাশোনার দায়িত্ব নেন মনসুর। বেতন ৯ হাজার টাকা। 

বর্তমানে ফুটপাথই মনসুরের ঠিকানা। শৈবাল দাশ জানান, মনসুর শারীরিকভাবে অসুস্থ ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ পঞ্চানন আচার্য্যের অধীনে মনসুরের চিকিৎসা চলছে। এই ব্যান্ডশিল্পীকে বাঁচাতে সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন।