পরিবেশ

ওয়ালটনে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত 

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য- ‘একটাই পৃথিবী, প্রকৃতির ঐক্যতানে টেকসই জীবন’। বৃক্ষ রোপণ, বর্ণাঢ্য র‌্যালি, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ওয়ালটন করপোরেট অফিস ও হেডকোয়ার্টারে পালিত হয়েছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস।  

রোববার (৫ জুন) ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’র এনভায়রনমেন্ট, হেল্থ অ্যান্ড সেফটি (ইএইচএস) বিভাগের উদ্যোগে বেটার বাংলাদেশ টুমরোর সহযোগিতায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। পাশাপাশি সহযোগিতা করেছে সামাজিক উন্নয়নমূলক এনজিও দ্য আর্থ। 

সকালে রাজধানীতে ওয়ালটন করপোরেট অফিস ও গাজীপুরের চন্দ্রায় হেডকোয়ার্টারে বর্ণাঢ্য র‌্যালির মধ্য দিয়ে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন কার্যক্রম শুরু হয়। 

র‌্যালিতে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এস এম জাহিদ হাসান, কর্নেল (অব.) এস এম শাহাদাত আলম, ইয়াছির আল-ইমরান, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এ এম সূফিয়ান চৌধূরী, তানভীর আনজুম, বেটার বাংলাদেশ টুমরোর সহকারী প্রকল্প পরিচালক মাশহারার ভূঁইয়া, ইএইচএস বিভাগের প্রধান মো. লিটন মোল্লা, দ্য আর্থ এর নির্বাহী পরিচালক মো. মামুন মিয়াসহ করপোরেট অফিস ও হেডকোয়ার্টারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।

র‌্যালি শেষে করপোরেট অফিস ও হেডকোয়ার্টার প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করা হয়। এরপর পরিবেশ রক্ষায় করণীয় ও ওয়ালটনের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগসহ নানা বিষয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

পরিবেশ দিবস উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর ওয়ালটন করপোরেট অফিস প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করছেন ওয়ালটনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ

ওয়ালটনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এস এম জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমাদের একটাই পৃথিবী। অনেক গবেষণা, খোঁজ করেও বসবাসের উপযোগী আর কোনো গ্রহ বা উপগ্রহ পাওয়া যায়নি। মানুষই এই পৃথিবী ধ্বংস করছি। আমরা এমনভাবে পরিবেশ বিনষ্ট করছি যে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খুব খারাপ একটা পৃথিবী রেখে যাচ্ছি। সেজন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে ক্ষমা করবে না। সৃষ্টিকর্তার অনেক যত্নে এই পৃথিবী তৈরি করেছেন। তাই পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সচেতন হতে হবে। যত্রতত্র প্লাস্টিক, পলিথিন বর্জ্য যেন আমরা না ফেলি। ওয়ালটনও পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করে না। ওয়ালটন হেডকোয়ার্টারে ইটিপি যথাযথভাবে পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া, যতভাবে পরিবেশ ভালো রাখা যায় তার জন্য ওয়ালটন সার্বিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। আমাদের তথা ওয়ালটনের অঙ্গীকার- আসছে যে শিশু তার জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী রাখা।’ 

ওয়ালটনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর কর্নেল (অব.) এস এম শাহাদাত আলম বলেন, ‘একটাই পৃথিবী- এই স্লোগানকে সামনে রেখে আজ আমরা বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করছি। আমরা এককভাবে পরিবেশ রক্ষা করতে পারবো না। পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। সবাই মিলে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী পরিবেশকে রক্ষা করবো। আমরা যেন বাড়ির কোনায় অন্তত একটি করে গাছ লাগাই। ঘরের বারান্দায় টপে ফুলের গাছ লাগাই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা একটা সুন্দর পৃথিবী রেখে যেতে চাই।’ 

সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. ইয়াছির আল-ইমরান বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশের তালিকায় ভারত ও চীনের পরে বাংলাদেশের অবস্থান। অন্যদিকে, বড় শহরগুলোর মধ্যে দূষণের দিক দিয়ে বিশ্বে রাজধানী ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। ইন্টারন্যাশনাল গ্লোবাল বার্ডেন ডিজিজ প্রজেক্টের প্রতিবেদনে বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর ক্ষেত্রে বায়ুদূষণকে চার নম্বরে দেখানো হয়েছে। বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর ৫৫ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকরী পদক্ষেপ ও জনসচেতনতা না বাড়ালে ভবিষ্যতে ভয়াবহ বায়ুদূষণে পড়বে বাংলাদেশ। তাই আমাদের প্রত্যেকের এই বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে।’

বেটার বাংলাদেশ টুমরো’র সহকারী প্রকল্প পরিচালক মাশহারার তার বক্তব্যে বলেন- ‘নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে হবে। বায়ু বা পানি দূষণের কারণে পরিবেশকে দূষিত করে তোলার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হতে পারে। সকল প্রকার শক্তি এবং পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে অপচয় রোধ করতে হবে। একটি সুন্দর আবাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে।’

ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক ও বেটার বাংলাদেশ টুমরো’র প্রকল্প পরিচালক তানভীর আনজুম বলেন, ‘টেকসই উদ্ভাবনের মাধ্যমে পরিবর্তনকে প্রচার এবং প্রভাবিত করতে ওয়ালটন একটি টেকসই বেটার বাংলাদেশ টুমরো উদ্যোগ চালু করেছে। যা দ্য আর্থ (The Earth) এর সাথে যৌথভাবে ক্লাইমেট ক্যাম্প (Climate Camp) আয়োজনের  উদ্যোগ নিয়েছে। যার মূল উদ্দেশ্য সবাই মিলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে একটি কার্যকরী পলিসি প্রণয়ন করে একটি তরুণ প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্লাইমেট ক্যাম্পকে সহযোগিতা করা।’

দ্য আর্থ এর নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন মিয়া বলেন- ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও বায়ুদূষণের কারণে ইকোসিস্টেম প্রভাবিত হচ্ছে। তাই ইকোসিস্টেম ভালো রাখার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে। বর্জ্য পদার্থ রিসাইকেল করতে হবে। কাঁচ, প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম বা খবরের কাগজ ফেলে দেওয়ার পরিবর্তে রিসাইকেল করা প্রয়োজন। এর ফলে আবর্জনা জমে দূষণ ছড়াবে না। এমনকি এই বর্জ্যগুলো পোড়ানোর ফলে নির্গত ধোঁয়া পরিবেশের ক্ষতি করতে পারবে না। তাই প্লাস্টিক বা কাঁচের বোতল, এমনকি খবরের কাগজ না ফেলে পুনর্ব্যবহার করা যেতে পারে।’

ইএইচএস বিভাগের প্রধান মো. লিটন মোল্লা জানান, ‘ওয়ালটন দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার, পরিবেশ বান্ধব রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার, গাছ রোপণ করা, পানির অপচয় কমানো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার, গ্রিন বিল্ডিং স্থাপন, রিসাইকেল ও পুনঃব্যবহারযোগ্য করে মালামাল ব্যবহার করা, তরল বর্জ্য শোধন করে পুনরায় ব্যবহার করা, ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে কাগজের ব্যবহার কমানো, প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি।

গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের পার্শ্ববর্তী এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হয়

এরপর পরিবেশ ও জৈব বৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এবং স্লোগান, আইডিয়া প্রদানে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

এ ছাড়াও পোনামাছ অবমুক্তকরণ, বৃক্ষরোপণ অভিযান, ওয়ালটন এগ্রিকালচার সেকশনের উদ্যোগে বৃক্ষ প্রদর্শনী, সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম, স্থানীয় স্কুলে কুইজ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং উপস্থিত অতিথিদের মাঝে ‘লাইফ সেভিং কার্ড’ বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। 

এই অনুষ্ঠানে পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা সিস্টেম (ইএমএস) ইনচার্জ মো. মোস্তাফিজুর রহমান রাজু, ইটিপি ইনচার্জ মো. নাজমুল হাসান দিপু, ফায়ার সেইফটি ম্যানেজমেন্ট সেকশন ইনচার্জ মো. গোলাম মোস্তাফা এবং পিসিএম ইনচার্জ মো. রায়হানসহ ইএইচএস বিভাগের সকল কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। ইভেন্টের সমন্বয়কারী ও সঞ্চালনায় ছিলেন ইএইচএস অপারেশন ইনচার্জ মো. সাদেকুর রহমান।