সাতসতেরো

কিরীটী রায়ের জন্মদাতার জন্মদিন আজ

কিরীটী রায়।  সত্তর-আশির দশকের সদ্য ফোটা কিশোরী থেকে প্রায় সব যুবতীর ‘হার্টথ্রব’ আর কিশোর-যুবকদের কাছে তিনি যেন লৌহমানব! কিরীটী। নামটা বলা মাত্রই বইয়ের পাতা ফুঁড়ে উঠে আসে ‘ইরেজিস্টেবল’ এক পুরুষ। 

কিরীটী রায় ভারতীয় বাংলা ঔপন্যাসিক নীহাররঞ্জন গুপ্ত সৃষ্ট একটি বিখ্যাত গোয়েন্দা-চরিত্র। কালোভ্রমর উপন্যাসের মধ্য দিয়ে সত্যসন্ধানী এই গোয়েন্দা চরিত্রের আবির্ভাব ঘটে।

পরবর্তীতে কিরীটী চরিত্রের উপর ভিত্তি করে বেশকিছু চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে।

প্রায় সাড়ে ছ-ফুট লম্বা। গৌরবর্ণ। মজবুত হাড়ের ফ্রেমে বলিষ্ঠ এক পৌরুষ। মাথা ভর্তি ব্যাকব্রাশ করা কোঁকড়ানো চুল। চোখে পুরু লেন্সের কালো সেলুলয়েড চশমা। নিখুঁতভাবে কামানো দাড়িগোঁফ। ঝকঝকে মুখ। মুখে হাসি যেন লেগেই আছে। আমুদে, সদানন্দ। এবং প্রখর রসবোধ। অসাধারণ বাকচাতুর্য। কিন্তু মিতবাক। এই কিরীটী রায়ের জন্মদাতার নীহার রঞ্জন গুপ্ত’র ১১১তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯১১ সালের ৬ জুন বাংলাদেশের নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামে তার জন্ম।।

বাবার নাম সত্যরঞ্জন গুপ্ত ও মায়ের নাম লবঙ্গলতা দেবী। চাকরিজীবী বাবা বিভিন্ন কর্মস্থলে অবস্থানকালে নীহার রঞ্জন গাইবান্ধা হাইস্কুলসহ বেশ কয়েকটি স্কুলে পড়ালেখা করেন। ১৯৩০ সালে ভারতের কোন্ননগর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। পরবর্তীতে কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে আইএসসি পাস করে কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজে থেকে ডাক্তারি পড়েন। এরপর লন্ডন থেকে চর্মরোগ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

নীহার রঞ্জন গুপ্ত দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তরিত হন। তিনি মেজর পদেও উন্নীত হন। চাকরি সূত্রে চট্টগ্রাম, বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার), মিশর পর্যন্ত বিভিন্ন রণাঙ্গনে ঘুরে বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেন। ভারত বিভক্তির পর ১৯৪৭ সালে পরিবারসহ স্থায়ীভাবে কলকাতায় বসবাস করেন।

নীহার রঞ্জন গুপ্তের উপন্যাসের সংখ্যা দুইশ'রও বেশি। ‘মঙ্গলসূত্র’, ‘উর্বশী সন্ধ্যা’, ‘উল্কা’, ‘বহ্নিশিখা’, ‘অজ্ঞাতবাস’, ‘অমৃত পাত্রখানি’, ‘ইস্কাবনের টেক্কা’, ‘অশান্ত ঘূর্ণি’, ‘মধুমতি থেকে ভাগীরতী’, ‘কোমল গান্ধার’, ‘অহল্যাঘুম’, ‘ঝড়’, ‘সেই মরু প্রান্তে’, ‘অপারেশন’, ‘ধূসর গোধূলী’, ‘উত্তর ফাল্গুনী’, ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’, 'কলোভ্রমর, ‘ছিন্নপত্র’, ‘কালোহাত’, ‘ঘুম নেই’, ‘পদাবলী কীর্তন’, ‘লালু ভুলু’, ‘কলঙ্ককথা’, ‘হাসপাতাল’, ‘কজললতা’, ‘অস্থি ভাগীরথী তীরে’, ‘কন্যাকুমারী’, ‘সূর্য তপস্যা’, ‘মায়ামৃগ’, ‘ময়ূর মহল’, ‘বাদশা’, ‘রত্রি নিশীথে’, ‘কনকপ্রদীপ’, ‘মেঘকালো’, ‘কাগজের ফুল’, ‘নিরালাপ্রহর’, ‘রাতের গাড়ী’, ‘কন্যাকেশবতী’, ‘নীলতারা’, ‘নূপুর’, ‘নিশিপদ্ম’, ‘মধুমিতা’, ‘মুখোশ’, ‘রাতের রজনী গন্ধা’- এসব তারই রচিত উপন্যাস।  তার অনেক উপন্যাস বাংলা ও হিন্দি ভাষায় চলচ্চিত্রায়ণ করা হয়েছে।

১৯৮৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি কলকাতায় মারা যান।