সাতসতেরো

সীতাকুণ্ডের হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড কি বৃষ্টি হয়ে ঝরবে? 

‘চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার পর সেখানে কনটেইনারে থাকা হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড বাতাসের সঙ্গে মিশে আকাশে মেঘের সঙ্গে মিশেছে। এ কারণে আগামী এক সপ্তাহ অথবা পনেরো দিন বৃষ্টিতে না ভেজার জন্য সতর্ক করা হলো।’

এ ধরনের একটি পোস্ট গত দুদিন থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে সত্যতা যাচাই না করে সেই পোস্ট শেয়ার করছেন এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। 

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের ধর্ম, রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে এবং এই পোস্টের সত্যাসত্য নির্ণয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের কয়েকজন অধ্যাপকের সঙ্গে। তারা এ ধরনের পোস্টকে ‘গুজব’ উল্লেখ করে বলেছেন ‘এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা  ও সত্যতা নেই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ভেঙে ধীরে ধীরে পানি ও অক্সিজেন উৎপন্ন হয়। অতি উচ্চ তাপমাত্রায় এই প্রক্রিয়া খুব দ্রুত হয়। এটি একটি শক্তিশালী অক্সিডার কিন্তু পরিবেশগতভাবে নিরাপদ। এটি নিজে জ্বলে না কিন্তু অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে।’ 

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড কি বৃষ্টিতে মিশে পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে? এ প্রশ্নের জবাবে এই অধ্যাপক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় বাতাসে যদি বেশি পরিমাণ সালফার ডাই-অক্সাইড থাকে তখন এটি সালফিউরিক এসিড তৈরিতে সাহায্য করতে পারে। ফলে সেই এলাকায় বৃষ্টি হলে এবং তার মাত্রা ২-৫ এর মধ্যে থাকলে তাকে এসিড বৃষ্টি বলা হবে। সত্যিকার অর্থে এমন ঘটনা আমাদের দেশে না-হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ এখানে এসিডের জন্য ব্যবহৃত গ্যাসের উৎস নেই বললেই চলে। সুতরাং এ ধরনের কথা একেবারেই গুজব।’

একই কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাইনুল করিম। তিনি বলেন, ‘হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড কিছুটা বাতাসে মিশতে পারে, কিন্তু মিশে বৃষ্টি পড়বে এমন না। যদিও পানির সঙ্গে মেশে তাহলে তো এর কোনো ক্ষতিকর কিছু থাকবে না। এটি তখন তার আসল রূপ হারাবে। তাছাড়া হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড বাতাসে মিশে বৃষ্টি হবে এর কোনো সত্যতা নেই।’ 

গত শনিবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর এলাকায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আগুনে পুড়ে এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ৯ সদস্যসহ নিহত হয়েছেন ৪১ জন। আহত হন প্রায় ২৫০ জন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১০২ জন দগ্ধ রোগী এবং ১৯ জনকে ঢাকায় এনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।