মিডিয়া

সময় পূর্বাপরের বর্ষপূর্তিতে বন্ধু-সুধীজনদের মিলনমেলা

‘‘কাউকে বিপদে ফেলতে চাইলে তাকে একটি পত্রিকা বের করার দায়িত্ব দিয়ে দাও। সেই অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সবাই নিতে পারে না। মাঝপথে ছেড়ে দেয়, নয়তো সরে দাঁড়ায়। পাক্ষিক ‘সময় পূর্বাপর’-এর সম্পাদক এই দুটোর কোনোটাই করেননি। পিছু তো হটেনইনি বরং লড়ে চলেছেন। রয়েছেন জেতার চেষ্টায়। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই সময়ে কোনো সাপ্তাহিক পত্রিকা অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকা অনেক কঠিন। সম্পাদক হাসান মাহমুদ সেই কঠিনকেই ভালবেসেছেন। 

‘পূর্বাপরের প্রতিটি সংখ্যা দেখলেই বোঝা যায় এখানে রয়েছে সৃষ্টিশীলতার স্নেহ-ছোঁয়া। শিল্প সাহিত্যের প্রতি অকুণ্ঠ ভালবাসা এবং আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির প্রগাঢ় অনুভবের একটা উপস্থিতি রয়েছে এই সাপ্তাহিকের পুরো অবয়ব জুড়েই। আমরা আশায় আছি, এই লড়াইয়ে সম্পাদক হাসান মাহমুদ জিতবেন। উদাহরণ তৈরি করবেন।”

বিশিষ্ট অনুবাদক আলী আহমেদ সময় পূর্বাপরের চতুর্থ বর্ষপূর্তির আনন্দ অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলছিলেন। শিল্পকলা একাডেমিতে তার এই আশাবাদকে উপস্থিত সুধীজনরা হাততালি দিয়ে সমর্থন জানান। 

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মূখ্যসচিব কবি কামাল চৌধুরী এই বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সচিব শ্যামসুন্দর সিকদার। মঞ্চে সন্মানিত অতিথিবৃন্দের সারিতে ছিলেন কবি মাসুদুজ্জামান ও কবি শামীম রেজা। সত্তর দশকের অন্যতম কবি ও নাট্যজন ফরিদ আহমদ দুলালও অনুষ্ঠান আলোকিত করেন।

 

কবি ফারুক মাহমুদের সভাপতিত্বে এবং সম্পাদক হাসান মাহমুদের সঞ্চালনায় শুক্রবার (১০ জুন) বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পূর্বাপরের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানমালা কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, নাট্যকার ও বন্ধু-সুধীজনদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। 

বিকেলে একাডেমির প্রবেশদ্বারে ঢাক বাজিয়ে অতিথিদের বরণ করা হয়। মনোমুগ্ধকর মঙ্গলানৃত্য দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়। কবিতা, গান, নাচে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অতিথিদের দারুণ উপযোগী বক্তব্য এবং সম্পাদক হাসান মাহমুদের স্কুল জীবনের সহপাঠিদের উৎসবমুখর উপস্থিতিতে আনন্দময় পরিবেশে বর্ষপূর্তির পুরো অনুষ্ঠানমালা জম্পেশ আনন্দ-আড্ডায় রূপ নেয়। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অথিতিদের পূর্বাপরের পক্ষ থেকে উত্তরীয় উপহার দেওয়া হয়। 

বিশেষ অতিথি শ্যামসুন্দর সিকদার তার ২০ মিনিটের বৃক্ততায় যা বলে গেলেন সেটাই যেন জীবনচিত্রের অবিস্মরণীয় এক কবিতা হয়ে উঠলো! নিজের শুরুর জীবনের কষ্টের কথা কি অবলীলায় এবং আক্ষেপহীন কণ্ঠে বলে গেলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি ছোটবেলায় পত্রিকার হকারি করেছিলাম। পড়ার খরচ মেটানো সম্ভব ছিল না। তাই পেটের ক্ষুধা মেটাতে পরিবারকে সাহায্য করতে আমি কিশোরবেলায় পত্রিকার হকারি করেছি। হাতে-কাঁধে নিয়ে পত্রিকা বিক্রি করেছি। পত্রিকার গন্ধ আমার শরীরে লেগে আছে। সেই ভাললাগা, ভালবাসাকে সঙ্গী করেই আমি বেড়ে উঠেছি। লড়াই করতে শিখেছি। কষ্ট করেছি। তাই আজ হাসতে পারছি। জীবনের লড়াই আসলে কোন একজনের বা একদিনের গল্প নয়। আমাদের প্রায় সবাইকেই নিত্য এমন কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সময় পূর্বাপরের সম্পাদক হাসান মাহমুদের মধ্যে আমি সামনের সময়ের বিজয়ীকেই দেখছি।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কবি কামাল চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশে পত্রিকা আছে অনেক। কিন্তু ভাল সম্পাদকের বড় অভাব। একজন সম্পাদককে অনেককিছুতেই দক্ষ হতে হয়। ভাল লেখা যোগাড় থেকে সুদক্ষ সম্পাদনা, কঠিন পরিস্থিতিতেও প্রকাশনা অব্যাহত রাখা এবং অবশ্যই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া- এসব কাজ মোটেও সহজ নয়। সত্যি কথা বলতে, হাসান মাহমুদ প্রথমে যখন পূর্বাপরের সম্পাদকের দায়িত্ব নেয়, আমি নিজেও খুব আস্থাশীল ছিলাম না। কিন্তু আমি আজ সত্যিই আনন্দিত যে, হাসান আমার ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করেছে। ও ধীরে ধীরে সফল হচ্ছে। আজকের চতুর্থ বর্ষপূর্তির এই আনন্দঘন আয়োজনই তার প্রমাণ।’

সম্পাদক হাসান মাহমুদের স্কুলের সহপাঠী সুবীর দাস বলেন, ‘পূর্বাপর আমাদের চুরাশিয়ান (১৯৮৪ এসএসসি ব্যাচের প্লাটফর্ম) বন্ধু-শিল্পী, কবি ও সাংবাদিক হাসান মাহমুদের সম্পাদনায় একটি অসাধারণ সাপ্তাহিক পত্রিকা। জ্ঞান অন্বেষণ-আহরণের এক কমপ্লিট প্যাকেজ এই পত্রিকা।’

মিলনায়তনে উপস্থিত বন্ধু-সুধীজনদের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি ঘটে।