সাতসতেরো

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের ৭৬তম জন্মদিন

বাংলা একাডেমির সভাপতি ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের ৭৬তম জন্মদিন আজ। 

প্রখ্যাত এই ঔপন্যাসিক ১৯৪৭ সালের ১৪ জুন রাজশাহী শহরে জন্মগ্রহণ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে বাংলায় বিএ অনার্স এবং ১৯৬৮ সালে এমএ পাস করেন।

কর্মজীবনে সেলিনা হোসেন দীর্ঘদিন বাংলা একাডেমিতে চাকরি করেছেন। একাডেমির পরিচালক পদে থাকা অবস্থায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন। পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির।

নন্দিত এ কথাসাহিত্যিকের লেখালেখির শুরু ষাটের দশকের মধ্যভাগে রাজশাহী মহিলা কলেজে পড়ার সময়। সে সময়ের লেখা নিয়ে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘উৎস থেকে নিরন্তর’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। 

তার রচিত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে – ‘উত্তর সারথি’ (১৯৭১) ‘জলোচ্ছ্বাস’ (১৯৭৩), ‘জ্যোৎস্নায় সূর্যজ্বালা’ (১৯৭৩), ‘মগ্ন চৈতন্যে শিস’ (১৯৭৯), ‘নীল ময়ূরের যৌবন’ (১৯৮২), ‘পদশব্দ’ (১৯৮২), ‘চাঁদবেনে’ (১৯৮৪), ‘ক্ষরণ’ (১৯৮৮), ‘কাঁটাতারে প্রজাপতি’ (১৯৮৯), ‘খুন ও ভালোবাসা’ (১৯৯০), ‘কালকেতু ও ফুল্লরা’ (১৯৯২), ‘ভালোবাসা প্রীতিলতা’ (১৯৯২), ‘টানাপোড়েন’ (১৯৯৪), ‘দীপান্বিতা’ (১৯৯৭), ‘যুদ্ধ’ (১৯৯৮), ‘লারা’ (২০০০), ‘মোহিনীর বিয়ে’ (২০০১), ‘আণবিক আঁধার’ (২০০৩), ‘ঘুমকাতুরে ঈশ্বর’ (২০০৪), ‘মর্গের নীল পাখি’(২০০৫), ‘অপেক্ষা’ (২০০৭), ‘দিনের রাশিতে গিটঠু’ (২০০৭), ‘মাটি ও শস্যের বুনন’ (২০০৭), ‘পূর্ণছবির মগ্নতা’ (২০০৮), ‘ভূমি ও কুসুম’ (২০১০), ‘যমুনা নদীর মুশায়রা’(২০১১), ‘আগস্টের একরাত’ (২০১৩), ‘গেরিলা ও বীরাঙ্গনা’ (২০১৪), ‘দিনকালের কাঠখড়’ (২০১৫) প্রভৃতি।

তার দুটি গ্রন্থ ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ ও ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ নিয়ে চলচ্চিত্র এবং কয়েকটি গল্প নিয়ে নাটক নির্মিত হয়েছে।

তার উপন্যাসে প্রতিফলিত হয়েছে সমকালের সামাজিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সংকটের সামগ্রিকতা। বাঙালির অহংকার ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ তার লেখায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। 

সেলিনা হোসেনের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি, কানাড়ি, রুশ, মালে, মালয়ালম, ফরাসি, জাপানি, ফিনিশ, কোরিয়ান প্রভৃতি ভাষায় সেলিনা হোসেনের বেশ কয়েকটি গল্প অনূদিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ‘যাপিত জীবন’ ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি’ উপন্যাসটি পাঠ্যসূচিভুক্ত। 

শিলচরে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পাঁচটি উপন্যাস এমফিল গবেষণাভুক্ত। ২০০৫ সাল থেকে শিকাগোর ওকটন কলেজের সাহিত্য বিভাগে দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্য কোর্সে তার ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ উপন্যাসটি পাঠ্যসূচিভুক্ত হয়।

সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কারসহ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০১০ সালে একুশে পদক পান সেলিনা হোসেন। সে বছরই রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডি.লিট উপাধি দেয়।

কথাসাহিত্যিককে জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।