লাইফস্টাইল

সহবাসে আগ্রহ কমার ৪ কারণ

সঙ্গী বা সঙ্গীনির যৌনকামনা কমে গেলে ধারণা হতে পারে যে সম্পর্কে বুঝি ফাটল ধরতে চলেছে। বাজে ধারণার ডালপালা ছড়াতে থাকে- সে কি অন্য কারো প্রতি ঝুঁকে পড়েছে? অন্য কাউকে কি অন্তরঙ্গ সময় দিচ্ছে? হ্যাঁ এমনটাও হতে পারে।

কিন্তু পরকীয়ার বাইরেও কারণ আছে। কারণগুলো শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে আশা করা যায় সংসার দীর্ঘস্থায়ী হবে। এখানে নারী-পুরুষের সহবাসে আগ্রহ হ্রাসের চারটি সাধারণ কারণ উল্লেখ করা হলো।

* মানসিক চাপ: চাকরি, পারিবারিক সমস্যা ও আর্থিক সংকট সবকিছুই একজন মানুষকে মানসিক চাপে (স্ট্রেস) রাখতে পারে। এমনকি শারীরিক সমস্যাও মানসিক চাপের মাত্রা বাড়াতে পারে। মানসিক চাপ যৌনকামনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে সত্য। তবে পুরুষেরা দীর্ঘসময় মানসিক চাপে ভুগলে যৌনকামনা কমার পাশাপাশি বিশেষ অঙ্গও দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সমস্যাকে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন বলে, যেখানে যৌনকর্মের সময় পেনিস যথেষ্ট খাড়া হতে পারে না। মানসিক চাপে টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন কমে যায় বলে সমস্যাটি দেখা দেয়। কানাডার যৌন স্বাস্থ্য শিক্ষক সোনিয়া বার্নেট বলেন, ‘যখন আমরা অন্যান্য বিষয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি, তখন যৌনজীবন নিয়ে চিন্তা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।’

* মানসিক সমস্যা: কেবল মানসিক চাপ নয়- উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও শুচিবাইয়ের মতো মানসিক সমস্যাও যৌনকামনাকে প্রভাবিত করতে পারে।ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের (বিষণ্নতা) একটি লক্ষণ হলো- এমনকিছুর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা যা একসময় করতে ভালো লাগত, এমনকি সহবাসও হতে পারে। বিষণ্নতার ওষুধও যৌনকামনা কমাতে পারে। ভেরি ওয়েল মাইন্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিষণ্নতার ওষুধ পুরুষকে ইরেক্টাইল ডিসফাংশনে ভোগাতে পারে এবং নারীর অর্গাজম অর্জনে প্রতিবন্ধক হতে পারে।

উদ্বেগ শরীর ও মনকে নানা উপায়ে প্রভাবিত করে। উদ্বেগে আচ্ছন্ন ব্যক্তি বর্তমান মুহূর্তে বেশিক্ষণ থাকতে পারেন না, এমনকি যৌন বিষয়েও।উদ্বিগ্নতায় শরীরের পেশিতে প্রতিক্রিয়াও হয়, যার ফলে যৌনতাকে উপভোগ করা যায় না।

* সম্পর্কের পর্যায়: দাম্পত্য জীবন বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যায়। প্রথমদিকে যৌনতাকে বেশ উপভোগ করা হয়। কিন্তু সময় পরিক্রমায় স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই আগ্রহ কমে যায়। এটাকে স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদি দুজনের কেউ মানসিক চাপে থাকেন, তাহলে তার আগ্রহ আরো হ্রাস পায়। সাধারণত সংসারে বাচ্চা আসলে নারীর যৌনকামনা পূর্বের তুলনায় কমে যায়। নবজাতককে সামলাতে গিয়ে এতটাই কাহিল হয়ে পড়েন যে যৌনতায় তেমন আগ্রহবোধ করেন না। এসময় স্ত্রীকে আগের মতো পেতে চাইলে স্বামীকে বাড়তি পদক্ষেপ নিতে হবে, যেমন- ইমোশনাল সাপোর্ট দিতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হলেও যৌনকামনা কমে যায়, তখন ভালোবাসার স্থানে ঘৃণা এসে বসে থাকে। ঘৃণা নিয়ে যৌনতাকে উপভোগ করা যায় না। ভালোবাসা যত বাড়বে, সহবাস তত উপভোগ্য হবে।

অনেকেই মনে করেন, সংসার টিকে থাকে যৌনতার ওপর। কিন্তু আসলে এর পুরোটা সত্য নয়। সহবাস হলো দাম্পত্য সম্পর্কের মাত্র একটা দিক। সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখতে অন্যান্য উপকরণেরও প্রয়োজন আছে, যেমন- পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা। স্বামী-স্ত্রীতে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাবোধ বজায় থাকলে পরস্পরকে আরো কাছে পেতে ইচ্ছে হয়। এটাই তো ভালোবাসা। অন্যদিকে মনে সন্দেহ দানা বাধলে সহবাস তো দূরের কথা, তাকাতেও ইচ্ছে হয় না। সন্দেহের তীর সংসারকে ছেদ করতে বেশি সময় নেয় না।

* শারীরিক অবসাদ: শারীরিক অবসাদ তথা অত্যধিক ক্লান্তিও যৌনকামনা কমিয়ে ফেলতে পারে। কর্মক্ষেত্র, পরিবার ও মানসিক চাপ সবকিছু শারীরিক শক্তির মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। স্বামী-স্ত্রীর কেউ শারীরিক অবসাদে ভুগলে যৌনতার প্রতি অনাগ্রহী হতে পারেন। কিছুক্ষেত্রে ভালোবাসার চেয়ে বিশ্রাম বেশি প্রয়োজন, যেমন- শারীরিক অবসাদ। এমনকি এসময় ইমোশনাল সাপোর্টের চেয়েও বিশ্রামের প্রয়োজনীয়তা বেশি। ক্লান্ত-শ্রান্ত একটা মানুষকে কেবল ভালোবাসা দিয়েই প্রাণবন্ত করা যায় না। সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে প্রায়সময় শারীরিক অবসাদে ভুগতে দেখলে তার বোঝা বা চাপ কমানোর চেষ্টা করা উচিত। পুরুষ যেমন কর্মক্ষেত্রের চাপে ক্লান্ত হতে পারেন, নারীও সংসার সামলাতে গিয়ে তেমনটা হতে পারেন।

তথ্যসূত্র: বেস্ট হেলথ