স্বাস্থ্য

করোনা শনাক্তের হার বাড়ছে

বাংলাদেশে প্রতিদিনই করোনাভাইরাস শনাক্তের হার বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে করোনার নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শনাক্তের হারও বাড়ছে। এক সপ্তাহ আগেও নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ১০ শতাংশের নিচে। গতকাল ২৪ জুন ১ হাজার ৬৮৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ১২.১৮ শতাংশ। তার আগের দিন করোনা শনাক্ত হয়েছিল ১ হাজার ৩১৯ জনের নমুনায়। অর্থাৎ আনুপাতিক হারে যত পরীক্ষা বাড়ছে, ততই শনাক্তের পরিমাণ ও হার বাড়ছে।

করোনা শনাক্তের হার এরকম বাড়তে থাকায় কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক টেকনিক্যাল কমিটি কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আছে—স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনসাধারণকে পুনরায় উদ্বুদ্ধ করতে সব ধরনের গণমাধ্যমে অনুরোধ জানানো, ঘরের বাইরে সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, 'নো মাস্ক নো সার্ভিস' নীতি প্রয়োগ করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা ইত্যাদি। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, ৩ থেকে ১১ জুন এক সপ্তাহে করোনার নমুনা পরীক্ষা ৪-৬ হাজারের মধ্যে থাকলেও শনাক্তের হার ছিল ১ শতাংশ। ১২ জুন ৫ হাজার ২৮০ নমুনার বিপরীতে শনাক্ত ২ শতাংশ, ১৫ জুন ৫ হাজার ৯৮৬ নমুনার বিপরীতে ৪ শতাংশ, ১৬ জুন ৬ হাজার ২০০ নমুনার বিপরীতে ৬ শতাংশ, ১৯ জুন ৮ হাজার ৭৪ নমুনার বিপরীতে ৭ শতাংশ, ২০ জুন শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়ায় ১১ শতাংশ, ২২ জুন শনাক্তের ছিল ১৩ শতাংশ, ২৩ জুন ৯ হাজার ২১৪ নমুনার বিপরীতে ১৪ শতাংশ এবং ২৪ জুন ১৩ হাজার ৮৩৩ নমুনার বিপরীতে শনাক্তের হার ১২.১৮ শতাংশ।

দেশে ২০২১ সালে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাবের সময়ও দেখা গেছে, ৪৫ হাজার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের তাণ্ডবের সময় ৪৬ হাজার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ৩৩ শতাংশ। তখনও করোনার নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছিল শনাক্তের হার। গত বছর জুন মাসের এই দিনে শনাক্তের হার ছিল ২০ শতাংশ। শনাক্তের হার ১০ শতাংশ বেড়ে ৩০ শতাংশ হতে তখন সময় লেগেছিল ১০ দিন। আর ২০২১ এর জানুয়ারিতে ওমিক্রন তাণ্ডবের সময় শনাক্তের হার ২ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ ছাড়াতে সময় লেগেছিল ২৩ দিন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬ থেকে ১২ জুনের তুলনায় গত সপ্তাহে (১৩ থেকে ১৯ জুন) করোনা রোগী বেড়েছে ৩৮৩ শতাংশ। গত সপ্তাহে (১৩-১৯ জুন) রোগী শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ২১২ জন ও তার আগের সপ্তাহে (৬-১২ জুন) ৪৫৮ জন।

উল্লেখ্য, করোনা রোগী বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক কিছু দিন আগে বলেছিলেন, ‘আমরা যেভাবে সব ছেড়ে দিয়ে চলাফেরা করছি, তাতে নমুনা পরীক্ষা বাড়লে করোনা রোগীর সংখ্যাও বাড়বে।’

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনার নতুন ঢেউয়ে প্রবেশ করার কথা। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘সংক্রমণ বর্তমানে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। লক্ষণ দেখে বোঝা যাচ্ছে, করোনার ক্ষেত্রে আমরা একটা নতুন ঢেউয়ে প্রবেশ করেছি। তবে আশার কথা হচ্ছে, যেহেতু দেশের বেশিরভাগ মানুষই টিকার আওতায় এসেছেন, তাই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হয়তো কম হবে। যারা টিকা নেননি, তাদেরকে অবশ্যই টিকা নিতে হবে।’