রাইজিংবিডি স্পেশাল

বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি: এ বছরেই বিচার সম্পন্নের আশা

২০২০ সালে ২৯ জুন বুড়িগঙ্গায় ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায় মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ। এতে মর্নিং বার্ডের ৩৪ যাত্রী মারা যান। এ ঘটনায় ময়ূর-২ লঞ্চের মালিকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করে নৌ-পুলিশ। মামলাটি তদন্ত করে গত বছর ১১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়। মামলাটিতে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু হয়েছে। সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে আছে মামলাটি। সাক্ষীরা ঠিকমতো সাক্ষ্য দিতে এলে এ বছরেই মামলার বিচার সম্পন্ন হবে, এমনটাই আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।

মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়ার আদালতে বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ১২ জুন এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। ওই দিন তিনজন সাক্ষ্য দেন। আগামী ৩ জুলাই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।

মামলা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিমল সমাদ্দার বলেছেন, ‘এটা চাঞ্চল্যকর মামলা। মামলাটি নিয়ে আমরা খুবই সিরিয়াস। মামলাটি যেন দ্রুত শেষ করা যায়, রাষ্ট্রপক্ষ আমরা সে চেষ্টাটাই করছি। ইতোমধ্যে ৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিতে অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সাক্ষ্যে একটা বিষয় মোটামুটি উঠে এসেছে, ময়ূর-২ লঞ্চটি দ্রুত গতিতে ঘাটে যাওয়ার সময় মর্নিং বার্ডকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দিছে। এ কারণে এতগুলো প্রাণ গেছে। একজন সাক্ষী আদালতে বলেছেন, ময়ূর-২ লঞ্চের সুকানিকে বলেছিল লঞ্চটি সরিয়ে নিতে। কিন্তু, তার কথায় কর্ণপাত করা হয়নি।’

রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, ‘সাক্ষী আসলে আমরা নিয়ে নিচ্ছি। সাক্ষীরা এভাবে আসলে এ বছরেই মামলার বিচার শেষ হবে বলে আশা করছি। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো যেন ন্যায়বিচার পায় এবং আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত হয়, সে লক্ষ্যে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে কাজ করে যাচ্ছি।’

ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ ছোয়াদের আইনজীবী সুলতান নাসের বলেন, ‘উনি তো লঞ্চের মালিক। উনার টাকা আছে, ব্যবসা করছে। যাত্রীদের সেবা করছে। উনি তো ঘটনার সাথে জড়িত না। উনার অপরাধ—উনি লঞ্চের মালিক। উনার লঞ্চ ও স্টাফদের সনদ ছিল কি না? সনদ আছে। তারপরও মামলায় জড়িয়ে দিয়েছে। ট্রায়াল ফেস করছি। আশা করছি, সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে তাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে সক্ষম হবো।’     

আসামি জাকির হোসেনের আইনজীবী শামীমুল ইসলাম বলেন, ‘লঞ্চে শিফটভিত্তিক ডিউটি হয়। জাকির হোসেনের শিফট তখন ছিল না। উনি লঞ্চেই ছিলেন। তবে, দুর্ঘটনার সময় ঘুমিয়ে ছিলেন। এ ঘটনায় নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরও তদন্ত করেছে। ওখানে কিন্তু জাকিরের নাম আসেনি। বিষয়টি আমরা আদালতকে অবহিত করেছি। কিন্তু আদালত তা আমলে নেননি। এমনকি তাকে জামিনও দিচ্ছেন না। এখন পর্যন্ত ৮ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। কেউ কিন্তু তার নাম বলেনি।’

২০২০ সালের ২৯ জুন মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ সদরঘাটে পৌঁছানোর আগে চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায়। দুর্ঘটনায় মর্নিং বার্ডের ৩৪ যাত্রী মারা যান।

ঘটনার পরের দিন ৩০ জুন রাতে নৌ পুলিশের সদরঘাট থানার এসআই মোহাম্মদ শামসুল বাদী হয়ে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ এনে ময়ূর-২ লঞ্চের মালিকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি সদরঘাট নৌ থানা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর শহিদুল আলম ১১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। গত ১৮ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এখন পর্যন্ত ৫১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। 

আসামিরা হলেন—ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ ছোয়াদ, মাস্টার আবুল বাশার মোল্লা, সহকারী মাস্টার জাকির হোসেন, চালক শিপন হাওলাদার, শাকিল হোসেন, সুকানি নাসির হোসেন মৃধা, গিজার হৃদয় হাওলাদার, সুপারভাইজার আব্দুস সালাম, সেলিম হোসেন হিরা, আবু সাঈদ ও দেলোয়ার হোসেন সরকার। আসামিদের মধ্যে আবুল বাশার, নাসির হোসেন, শাকিল হোসেন, জাকির হোসেন ও শিপন হাওলাদার কারাগারে আছেন। অপর সাত আসামি জামিনে আছেন।