প্রবাস

কুয়েতে ১৭ বছরে ৩৯৬১ প্রবাসীর মৃত্যু

অর্থ উপার্জনের জন্য বিদেশে এসে মারা যাওয়া প্রবাসীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। শুধুমাত্র কুয়েতে গত ১৭ বছরে প্রায় চার হাজার বাংলাদেশি প্রবাসী মৃত্যুবরণ করেছেন।

উপসাগরীয় দেশ কুয়েতে প্রায় তিন লাখ প্রবাসী বাংলাদেশিরা রয়েছেন। দেশটিতে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যত প্রবাসী মারা গেছেন, তার চেয়েও বেশি মারা গেছেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। করোনাকালীন দুশ্চিন্তা থেকে হৃদরোগে ও স্ট্রোক করে প্রাণ হারিয়েছেন বড় একটি অংশ।

দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, করোনার আগে প্রতি মাসে গড়ে ১৪ থেকে ১৫ জন প্রবাসীরা মারা গেছেন। মহামারি করোনাকালীন মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেড়েছিল। ২০০৫ সাল থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত, প্রায় ১৭ বছরে ৩৯৬১ জন প্রবাসী মৃত্যুবরণ করছেন। অর্থাৎ এই ১৭ বছরে গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ২০ জন প্রবাসী মারা যান। এদের মধ্যে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ৬৫৪ জন, বাকিরা আত্মহত্যা, হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগে প্রাণ হারিয়েছেন। ২০২১ সালে জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে ৪৪০ জন প্রবাসী মারা গেছেন। এদের মধ্যে শুধুমাত্র হৃদরোগে মারা গেছেন ১৯০ জন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান ১০৮ জন। বাকিরা আত্মহত্যা, হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগে প্রাণ হারিয়েছেন। অর্থাৎ এ বছরটিতে গড়ে প্রতি মাসে ৩৬ জনেরও বেশি প্রবাসী মারা যান।

প্রবাসীদের হৃদরোগের  কারণ ও এ থেকে নিজেকে কীভাবে রক্ষা করা যেতে পারে, এসব বিষয় নিয়ে কুয়েতের আব্বাসিয়া এলাকার রয়েল সিটি ক্লিনিকে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশী ডাক্তার নাজমা তালুকদার বলেন, ‘শুরুর দিকে করোনা সংক্রমণ যখন কুয়েতে বাড়ছিল, ঠিক তখন আমরা দেখেছি কিছু লোক চিকিৎসা সেবা নিতে এসে বলেছেন তারা বুকে ব্যথা অনুভব করছেন। এক পর্যায়ে আমরা টেস্ট করে নিশ্চিত হয়েছিলাম যে, কারো হার্টের সমস্যা আবার অনেকে ডায়াবেটিস, প্রেসার ও এজমা রোগে ভুগছেন। এসবের মূল কারণই ছিল দুশ্চিন্তা। তখন ওই সময়টাতে দুশ্চিন্তা করা অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল, যেহেতু তখন বৈশ্বিক মহামারিতে বিশ্বের সব দেশেই মানুষ মারা যাচ্ছে। অনেক প্রবাসী দেশে যেতে পারছেন না।’

ডাক্তার নাজমা স্বাস্থ্য সচেতনতার নানা দিক উল্লেখ করে বলেন, ‘প্রতি বছর সারা বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ হার্ট অ্যাটাক বা হৃদযন্ত্রের সমস্যায় মারা যান। হার্ট যদি কোনো কারণে অসুস্থ হয় তবে নানা সংকেত দিয়ে আমাদের জানান দেয়। অনেক সময় আমরা সাধারণ কোনো রোগ ভেবে তা উপেক্ষা করি। তাই হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যকর খাদ্য, ব্যায়াম, ভালো ঘুম এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। যেগুলো আপনাকে হৃদরোগ থেকে রক্ষা করতে কার্যকর বলে প্রমাণিত।’

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের দেয়া তথ্যমতে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে যেসব মধ্য বয়সী কর্মীদের লাশ বাংলাদেশে গিয়েছে তাদের বেশির ভাগের মৃত্যু স্ট্রোকের কারণে। বাকিরা হৃদরোগ, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, সড়ক দুর্ঘটনা, ক্যানসার, আত্মহত্যা কিংবা প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছেন। আর এসব প্রবাসীদের বয়স ২৮ থেকে ৪০ এর মধ্যেই ছিল।