সাক্ষাৎকার

‘স্কুলের গভর্নিং বডি শিক্ষকদের উপর জুলুম বেশি করছে’

শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এ নিয়ে শিক্ষকরা কী ভাবছেন, কেন বারবার ঘটছে এ ধরনের ঘটনা, রাইজিংবিডির সঙ্গে একান্ত আলাপে নিজের মতামত জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াঁজো ফোরামের মুখপাত্র মো. নজরুল ইসলাম রনি

রাইজিংবিডি: শিক্ষক লাঞ্ছনা, হত্যাকাণ্ডের মতো জঘন্য ঘটনাগুলো কেন বাড়ছে বলে আপনি মনে করেন?

নজরুল ইসলাম রনি: শিক্ষক সুরক্ষা কোনো আইন নেই। এ ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের শাসন করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের শাস্তি না দেওয়ার প্রবিধান রয়েছে। নৈতিকতা শিক্ষার অভাব তো রয়েছেই। পারিবারিক শিক্ষা নেই বললেই চলে। গুরুজনদের প্রতি সম্মান দেখানো পারিবারিক শিক্ষা এখন সমাজে প্রায় দেখাই যায় না। 

রাইজিংবিডি: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডি রয়েছে। তাদের বিষয়ে যদি কিছু বলেন?

নজরুল ইসলাম রনি: বর্তমানে গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটিই শিক্ষকদের উপর জুলুম নির্যাতন করছে সব চেয়ে বেশি। এসব দেখে ছাত্ররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আসলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটির দরকার নেই। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো অন্যগুলো পরিচালিত হলে এ ধরনের ঘটনা কমে যেত। ম্যানেজিং কমিটি কঠিন হলে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা অনেক কমতো।

রাইজিংবিডি: এসব ঘটনা বন্ধে শিক্ষকদের বা আপনাদের সমিতি কোনো ভূমিকা রাখতে পারে কিনা?

নজরুল ইসলাম রনি: বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বাশিস) পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা নিয়েছি আমরা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাশ বর্জন ও কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ করেছি। আগামী শনিবার দেশব্যাপী মানব বন্ধন ও সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। শিক্ষক নির্যাতন ও হত্যাকারীর ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন সংগ্রাম চলবে।

রাইজিংবিডি: এসব ক্ষেত্রে শিক্ষক রাজনীতির ভূমিকা আছে কিনা?

নজরুল ইসলাম রনি: শিক্ষক রাজনীতি এবং ছাত্র রাজনীতি এখন আত্মকেন্দ্রিক। পেশাজীবী সংগঠনের মতো শিক্ষক সমিতিগুলো তেমন কোনো ভূমিকা রাখছেন না। রাজনীতি লেজুড়বৃত্তিক হওয়ার কারণে শিক্ষক সমিতি শিক্ষকদের পক্ষে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। তারা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকে।

রাইজিংবিডি: ছাত্র রাজনীতির প্রভাব কেমন বলে মনে হয় আপনার?

নজরুল ইসলাম রনি: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির কারণে অনেক ছাত্র বেপরোয়া। তারা বড় ভাইয়ের ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করে। আসলে গঠনমূলকও সৃজনশীল রাজনীতি এখন আর নেই। শিক্ষককে হত্যা করা হলো অথচ ছাত্ররা বা ছাত্র সংগঠনগুলো রাজপথে মিছিল করলো না। এটা কেমন কথা? ছাত্র ও শিক্ষকদের সম্পর্ক একটা চমৎকার সম্পর্ক হওয়া উচিত।

রাইজিংবিডি: শিক্ষার্থীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলছেন আপনি। তাদের মধ্যে নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে করণীয় কী হতে পারে?

নজরুল ইসলাম রনি: ছাত্রদের বেপরোয়া হয়ে ওঠা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। নৈতিকতার অবক্ষয় মাত্র। পারিবারিক শিক্ষার অভাব রয়েছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও অনেক দায়ী। সামাজিক অবক্ষয় মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ছাত্ররা অভিভাবকদের কথা শুনছে না। শিক্ষকদের কথা শুনছে না। মোবাইল নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা ক্লাশে প্রবেশ করছে। এসব বন্ধ করতে হবে। কিশোর অপরাধ আইন সংশোধন করা উচিত। আমরা যা করতে পারি যেমন: শিক্ষকদের আরো আন্তরিক হতে হবে। ছাত্রদের সাথে আরো মিশতে হবে। তাদের কাছে যেতে হবে। ক্লাশে শিক্ষকদের উত্তম ব্যবহার করা উচিত। নৈতিকতা শিক্ষা দিতে হবে। পাঠ্যসূচিতে নৈতিকতা শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনন্দ-বিনোদনমূলক ব্যবস্থা করতে হবে। একইসঙ্গে সাইকোলজিস্ট থাকা উচিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্টুডেন্ট ক্যাবিনেট-এর ভূমিকা গতিশীল ও নৈতিকতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে হবে। এক কথায় ছাত্র ও শিক্ষকদের সম্পর্ক মধুর হতে হবে।