পুঁজিবাজারের ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে তালিকাভুক্ত আল আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ৪৮.১৭৫ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করেছে পাঁচজন ব্যক্তিসহ বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের দুইটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। তবে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও কোম্পানিটিকে ওটিসি থেকে এসএমই প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরের আগে ৪টি শর্ত পরিপালনের নির্দেশ দিয়েছে। শর্তগুলোসহ অন্যান্য সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই কোম্পানিটিকে এসএমই প্ল্যাটফর্মে লেননদেনের সুযোগ দিবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সম্প্রতি আল আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পোঠানো হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্র নিশ্চিত করেছে। একইসঙ্গে বিষয়টি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।
তথ্য মতে, আল আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পনর্গঠিত নতুন পর্ষদ উৎপাদন চালু করা কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে কোম্পানিটির একটি ইউনিটে উৎপাদন কাজ চলছে। আরো দুই ইউনিট চালু করার প্রস্তুতি রয়েছে। একইসঙ্গে কোম্পানিটির এলসি খোলার কাজ চলছে। এলসি খোলা সম্পন্ন হলেই শিগগিরই কোম্পানিটির কাজ শুরু হবে। বিএসইসির সকল শর্ত পরিপালন করে কোম্পানিটি এসএমই প্ল্যাটফর্মে শিগগিরই লেনদেন শুরু করবে।
বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আল আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারগুলো ওটিসি মার্কেট থেকে স্টক এক্সচেঞ্জের এসএমই প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তর করা হবে। স্টক এক্সচেঞ্জের শর্তগুলো মেনে চলা সাপেক্ষে এসএমই প্ল্যাটফর্মে আল আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার লেনদেনের সুবিধা প্রদান করা হবে।
শতর্গুলো হলো- কোম্পানির শেয়ারের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ডিম্যাট আকারে হতে হবে, কমিশনের কাছে পূর্বে জমা দেওয়া কৌশলগত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা অনুযায়ী কোম্পানির উৎপাদন পুনরায় শুরু করার ঘোষণা দিতে হবে, আল আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজকে কোম্পানির ঋণদাতা ব্যাংক থেকে একটি অনাপত্তি সনদ (এনওসি) জমা দিতে হবে এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (লিস্টিং অব স্মল ক্যাপিটাল কোম্পানিস) রেগুলেশন- ২০১৯, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (লিস্টিং অব স্মল ক্যাপিটাল কোম্পানিস) রেগুলেশন- ২০১৯ এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক সিকিউরিটিজ আইনগুলো কোম্পানিটিকে যথাযথভাবে পরিপালন করতে হবে।
এর আগে গত ৩০ বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের দুইটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানসহ আরো পাঁচ জন ব্যক্তিকে আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ৪৮.১৭৫ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করার অনুমতি দেয় বিএসইসি। এর মধ্যে সাকিবের প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে মোনার্ক মার্ট (জাভেদ এ মতিন প্রতিনিধিত্বকারী) ২.৪০ শতাংশ এবং মোনার্ক এক্সপ্রেস ৪.৮০ শতাংশ আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার কিনবেন। এ ছাড়া আমিনুল ইসলাম সিকদার এবং মো. খায়রুল বাশার (ইশাল কমিউনিকেশনের প্রতিনিধিত্বকারী) ১৪.৪ শতাংশ, এএফএম রফিকুজ্জামান ১০ শতাংশ, মাশুক আলম ৬ শতাংশ, মো. হুমায়ুন কবির (লাভা ইলেকট্রোডস ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিনিধিত্বকারী) ২.৪০ শতাংশ এবং মুন্সী শফিউদ্দিন ৮.১৭৫ শতাংশ আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার কিনেছেন।
অপরদিকে, আল-আমিন কেমিক্যালের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ আশিক ১৮.৪০ শতাংশ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আতিকা ১৫.৯৭৫ শতাংশ ও তাজাক্কা তানজিম ১৩.৮০ শতাংশ শেয়ার ওই দুই প্রতিষ্ঠান ও পাঁচ ব্যক্তির কাছে বিক্রি করবেন।
আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোক্তা/পরিচালকদের মোট ২৪ লাখ ৮ হাজার ৭৫০টি শেয়ার, যা কোম্পানির মোট শেয়ারের ৪৮.১৭৫ শতাংশ চিঠিতে উল্লেখিত ক্রেতা ও কোম্পানির কাছে উল্লেখিত শর্তাবলী মেনে চলার সাপেক্ষে বিক্রি বা স্থানান্তর করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্সি শফিউদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কোম্পানিটিকে অধিগ্রহণের কাজ গত এক মাস আগে সম্পন্ন হয়েছে। এখানে আমাদের বিনিয়োগ রয়েছে এবং কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডারা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থা রয়েছেন। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে অমরা দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছি। আশা করছি বিএসইসির বেধে দেয়া তিন মাসের মধ্যে আমরা সম্পন্ন করতে পারব। এ কাজটি আমরা নিজস্ব তাগিদেই করছি। কারণ এখানে আমাদের বিনিয়োগ রয়েছে এবং কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডারা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থা রয়েছেন। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে অমরা দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছি। ইতোমধ্যে আমদের ৭০ শতাংশ শেয়ার ডিমেট বা ইলেক্ট্রোনিক শেয়ারে রূপান্তর হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। আশা করছি সকল শর্ত পরিপালন করে কোম্পানিটি এসএমই প্ল্যাটফর্মে শিগগিরই লেনদেন শুরু করবে।’
আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ ২০০২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি টাকা। সেহিসেবে বর্তমানে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৫০ লাখ। এরমধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৫০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২.৫৪ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৭.৪৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বুধবার (২০ জুলাই) ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ ১৬ টাকায় লেনদেন হয়েছে।