সারা বাংলা

১২০ টাকায় চা শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়

হবিগঞ্জ জেলায় ছোট ও বড় মিলে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানে কাজ করেন ৩২ হাজার শ্রমিক। সারাদিন কাজ করে এসব শ্রমিকরা পান ১২০ টাকা মজুরি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে থাকায় এই মজুরিতে পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। 

মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০টাকা করার দাবিতে তাই গত কয়েকদিন ধরে কর্মবিরতিসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন শ্রমিকরা।

চা-বাগান মালিকদের সংগঠন চা-সংসদ ও বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে মজুরি বাড়ানো বিষয়ক দ্বিপক্ষীয় নতুন চুক্তিতে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয়। আগের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার ২১ মাস ১৫ দিন পর ১৫ অক্টোবর ২০২০ সালে শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে চুক্তি সই হয়েছিল দুই পক্ষের।

বাংলাদেশ চা বোর্ড ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সবমিলিয়ে ২৫৬ টি চা-বাগান আছে। এতে নিবন্ধিত শ্রমিকের সংখ্যা ১ লাখ ৩ হাজারের বেশি। অস্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৩০ হাজার। দেশে মোট চা শ্রমিক পরিবারের বাসিন্দা প্রায় ৮ লাখ। 

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘প্রতি দুই বছর অন্তর শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠন চা সংসদ ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির বৈঠক করে নতুন করে চুক্তি সই করার বিধান রয়েছে। চা-শ্রমিকদের বর্তমান মজুরি কাঠামো বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় এখনও চা-শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে না। প্রতিদিন একজন শ্রমিককে ২৩ কেজি চা-পাতা উত্তোলন করতে হয়। তবেই ওই শ্রমিক পায় ১২০ টাকা। মজুরি ও রেশন মিলিয়ে একজন শ্রমিক প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা পায়। যেখানে একজন খেতমজুরের বর্তমান আয় প্রতিদিন ৫০০ টাকা। একজন রিকশাচালকের প্রতিদিনের আয় প্রায় ৬০০ টাকা।’

চান্দপুর বাগানের শিলা উড়াং, রুমা উড়াং, সাগরী রায়, সন্ধ্যা মহালী, বিনা সাঁওতালসহ কয়েকজন চা শ্রমিক বলেন, আমরা দৈনিক বেতন পাই ১২০ টাকা। যে বেতন পাই তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। তাই খেয়ে না খেয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আমরা উন্নত জীবন থেকে বঞ্চিত। 

তারা আরও বলেন, ‘শ্রমিকরা ১৯৬৫ সালে দিনে মজুরি পেতেন ১ টাকা। এখন সেই মজুরি হয়েছে ১২০ টাকা। রেশন আগের মতই আছে। রেশনের আটা ও চালের মান ভালো না।

চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘চা-পাতা উৎপাদনে পুরুষের পাশাপাশি নারীও কঠোর শ্রম দিচ্ছে। একজন শ্রমিক ৬০ বছর পর্যন্ত বাগানে কর্মরত থাকেন। পরে অবসরে যান। নিত্যপণ্যের মূল্য দিন দিন বাড়ছে। এখানে শ্রমিকদের এ বেতনে চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অচিরেই জনপ্রতি শ্রমিকের বেতন ৩০০ টাকা করা হোক। এছাড়াও শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধা আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘লস্করপুর, সিলেট, জুড়ি, লংলা, মনু-ধলাই, বালিশিরা ও চট্টগ্রাম ৭টি ভ্যালির মাধ্যমে দেশের প্রায় ২৫৬টি বাগান পরিচালিত হচ্ছে।’