খেলাধুলা

মোস্তাফিজকে ইনসুইং শিখতে হবে: ওয়াসিম আকরাম

চাইলে ওভারের ছয়টা বল ছয় রকমভাবে করতে পারেন তিনি- পাকিস্তানের সাবেক পেসার ওয়াসিম আকরামকে নিয়ে এমন কথা বেশ প্রচলিত। গতির সঙ্গে দুই দিকেই বল সুইং করাতে বেশ পারদর্শী এই বোলার ছিলেন বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের যম। আর যে কোনও পেসারের জন্য তিনি একজন আদর্শ গুরু।

চলমান এশিয়া কাপে স্টার স্পোর্টসের ধারাভাষ্যকার হিসেবে আছেন কিংবদন্তি এই ক্রিকেটার। ম্যাচ চলাকালে দুবাই স্টেডিয়ামে প্রেসবক্স এলাকায় দেখা মেলে হরহামেশাই। শুধু চোখেই দেখা, কথা বলতে গেলেই যেন হয়ে যান রুঢ়। তাই তো প্রেসবক্সে ওয়াসিমের পেছনে হেঁটে যেতেই এক সংবাদকর্মী বলে দিলেন, ‘তার সঙ্গে কথা বলতে গেলেই বকা দেবে কিন্তু।’  

শেষ পর্যন্ত একটু দূরে তার দেখা পেয়েই কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই বোঝা গেলো, একটু গম্ভীর তিনি। রাগী রাগী ভাব নিয়ে বললেন, ‘আমি ভালো আছি।’ মিনিট দুয়েক পর ছবি তুলতে চাইলে যেন সুর নরম হয় তার। এই গ্রেটকে তো আর প্রতিদিন পাওয়া যাবে না। একটু নরম হতেই যেন পেয়ে বসলাম। পিছু নিলাম ওয়াসিমের। হাঁটতে হাঁটতে বললাম, একটা প্রশ্ন করবো শুধু! মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো অবস্থা। ওয়াসিম বললেন, ‘বলো।’

একমাত্র প্রশ্ন ছিল মোস্তাফিজুর রহমানের সাম্প্রতিক বোলিং নিয়ে। হঠাৎ যেন ছন্দহীন এই পেসার। ডেথ ওভারে যে কোনও দলের জন্য সেরা অস্ত্র যাকে বলা হতো, তিনিই এখন মার খান সাধারণ অনভিজ্ঞ কোনও বোলারের মতোই।  

প্রশ্নের উত্তরে একটু হতভম্বই হতে হলো। জানালেন মোস্তাফিজের বোলিং দীর্ঘদিন দেখেননি তিনি। অকপটে ওয়াসিম বলেন, ‘আমি তো মোস্তাফিজের বোলিং শেষ কিছুদিন দেখতে পারিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচে আমি হোটেলে ছিলাম। সেখানে খেলা দেখতে পারিনি। তবে এই ম্যাচে (বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা) তাকে দেখবো দীর্ঘদিন পর।’

এরপর মোস্তাফিজের সাম্প্রতিক এলোমেলো বোলিংয়ের কারণ কী জানতে চাইলে উন্নতির মন্ত্র বলে দিলেন, ইনসুইং শিখতে হবে, আনতে হবে বৈচিত্র। এবার উত্তরটা একটু যেন ভেবেচিন্তে দিলেন। মোস্তাফিজের বোলিং দীর্ঘদিন না দেখলেও ধারাভাষ্য দিয়ে বেড়ানো ওয়াসিমের সেটি অজানা নয়।  

ওয়াসিম বলেন, ‘ক্রিকেট এখন পরিবর্তন হয়েছে। নতুন-নতুন বিষয় শিখতে হবে, উন্নতি করতে হবে। তাকে অবশ্যই ইনসুইং শিখতে হবে। বলের বৈচিত্র বাড়াতে হবে। শুরুতে তার যে ধার ছিল এখন সেটা অনেকে বুঝে ফেলেছে, ব্যাটসম্যানরা এসব দেখে বোলারের কারিশমা আবিষ্কার করে ফেলে। যত দ্রুত সে এটা আয়ত্ত করতে পারবে তার জন্যই ভালো হবে।’

সাদা বলে বাংলাদেশ দলের প্রধান পেসার মোস্তাফিজ। দলে আছেন অটোচয়েজ হিসেবে। ধীরে ধীরে সেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। উইন্ডিজে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে রান দিয়েছেন যথাক্রমে ওভার প্রতি ৯.২৫ ও ১৩.৫০। দ্বিতীয় ম্যাচে কোটা পূর্ণ করলেও তৃতীয় ম্যাচে তাকে শেষ করতে দেওয়ার সাহস পাননি অধিনায়ক। কারণ উইকেট পাননি একটিও। 

এরপর বাঁহাতি পেসার জিম্বাবুয়ে সিরিজে তিন ম্যাচে যথাক্রমে ওভার প্রতি  রান দিয়েছেন ১২.৫০, ৭.৫০ ও ৫.৫০। উইকেট নিয়েছেন ৪টি। এশিয়া কাপের আগে এই দুটি সিরিজই হেরেছে বাংলাদেশ। এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে ডেথ ওভারে ১৭ রান দেন। তাতে ম্যাচের চিত্রই বদলে যায়। আর দ্বিতীয় ম্যাচে ছিলেন মন্দের ভালো। ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। পারফরম্যান্সই বলছে ছন্দহীন মোস্তাফিজ।

শুরু থেকেই মোস্তাফিজের অস্ত্র ছিল স্লোয়ার কাটার। বিশ্ব ক্রিকেটের তারকা ব্যাটসম্যানরাও তাতে পরাস্ত হয়েছেন। তবে স্লো কিংবা মন্থর উইকেটের জন্য একজন আদর্শ বোলার তিনি। ব্যাটিং উইকেট হলে যেন কোথায় হারিয়ে যান এই বাঁহাতি পেসার। সম্প্রতি যেটির দৈন্যদশা ফুটে উঠছে বেশ করুণভাবে।

সাবেক পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসনও জানিয়েছিলেন, মোস্তাফিজের উন্নতির প্রয়োজনের কথা। পরামর্শ দিয়েছিলেন বোলিংয়ে বৈচিত্র আনার জন্য, এবার দিলেন কিংবদন্তি ওয়াসিম। মোস্তাফিজ সেটা গ্রহণ করবেন তো?