ক্যাম্পাস

স্নিগ্ধ বাদলে ‘চড়ুইভাতি’

সুন্দর প্রকৃতি। দিনের শুরুতেই বাদলের ছোঁয়ায় প্রকৃতির স্নিগ্ধ সাজ। ঋতুচক্রের হাজিরা খাতায় তারিখটি ভাদ্র মাসের ২০। বৃষ্টিস্নাত অনুভূতির জোয়ারে মন কবি-সাহিত্যিক। মধ্যবর্তী আষাঢ় দিনে নানা বিস্ময় নিয়ে আবির্ভূত প্রায় শ’খানেক শিক্ষার্থী। সমগ্র স্নেহে ও অবিরাম ভালোবাসা একত্র, তারা বন্ধু। বলছিলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে চড়ুইভাতি’র কথা।

অঝোরে বৃষ্টি হয়েছে সারা রাত। সারা দেশে মেঘ থেকে জলের পতন শেষে নিদ্রার অবসান। প্রকৃতি সেজেছে সজীবতায়। মনে ভোরের সূর্যের এক প্রেমময় বার্তা। প্রভাতেই তাড়াতাড়ি করে বাজারে গিয়ে সদাই আনা। ঝাল-লবণের প্যাকেট, কাটা মুরগি, তোড়জোড়ে গোছানো চুলা, পারিবারিক গণ্ডির বাইরে ছাত্রবয়সে আত্মতৃপ্তি, এরই নাম বুঝি চড়ুইভাতি। এ গল্প চলতে থাক অবিরাম।

‘চড়ুইভাতি’ কথাটা শুনলেই ধুলো জমানো আগুনের উষ্ণময় দুরন্ত শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়। শহুরে জীবনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘চড়ুইভাতি’র গল্প একটু অন্যরকম। হইহই-রইরই করতে করতে সারা দিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সকাল সকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ইতোমধ্যে অনেকে চলে এসেছে।

চড়ুইভাতি আয়োজনের অন্যতম কাজ হলো সবার থেকে চাঁদার টাকা উত্তোলন করা। সেই কাজে দক্ষতার প্রমাণ ফিয়ে আয়োজনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আব্দুল জলিল, শারমিন কেয়া ও রাকিবুল ইসলাম।

আনোয়ার, জলিল, উৎস ও রাকিবের নেতৃত্বে বাজারে যাওয়া যেন তৈরি করেছে আরও বেশি আমেজ। তারা বাজার নিয়ে যথাসময়ে হাজির প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে। তারপর শুরু হয় কাজের ধুম। দায়িত্ব অনুযায়ী সকলে যে যার মতো শুরু করল কাজ। কেউ পানি আনা, কেউ কাটাকাটি, কেউবা চুলা জ্বালানো, কেউ আবার হাঁড়ি-পাতিল পরিষ্কারের কাজে নেমে গেল। কাঠ কুড়ানো, চুলা বানানো, চাল ধোয়া, মাংস কাটাসহ সব কাজই করা হলো মিলেমিশে। 

সাদিয়া, মুন, তানজিলা ও কেয়া উৎসবমুখর করে তুলে এসব কাজে। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেলো রান্নার তোড়জোড়। অপ্সরা, ইমা, হাসান, আনোয়ার ও রাকিব সাহসিকতার পরিচয় দিলেন এই কাজে। সবাই মিলে একসাথে উৎসবমুখর পরিবেশে রান্না, বাকিদের সহায়তায় জমে উঠলো চড়ুইভাতি। আশিক, রাফি, শাকিল, ফয়সাল, মুহিব ও আব্দুল্লাহ’র অবদান যেন আরও অনবদ্য। 

রান্নার পাশাপাশি গান, গল্প, আড্ডা ও ছবি তোলার কাজ চলতে থাকল সমানতালে। রান্নার সুগন্ধ আর আড্ডাবাজিতে এক অন্যরকম ভালোলাগার পরিবেশ সৃষ্টি হলো। বিকেল আড়াইটার দিকে শুরু হলো ভোজন পর্ব। 

পাশাপাশি গল্প, একে অপরের সাথে খোশগল্পে মেতে রোমাঞ্চকর এক মুহূর্ত পার করছে সবাই। বিভাগে একসাথে ৬ বছরের পথচলার সমাপ্তির ঠিক আগ মুহূর্তে এমন রোমাঞ্চকর আয়োজনে মাতোয়ারা সবাই। যেন নিজ পরিবারের বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে, গল্প করছে। সবার অনুভূতি প্রকাশে উঠে এলো এমন কথা। সব মিলিয়ে শৈশবের সেই রোমাঞ্চকর দিনগুলোতে যেন ফিরে গেল সবাই আরেকবার।

এই আয়োজনে বিভাগের শিক্ষকবৃন্দের অংশগ্রহণ যেন এক অন্যমাত্রার যোগান দিল। লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আছমা বিনতে ইকবাল, সহযোগী অধ্যাপক শামীমা আক্তার, সহকারী অধ্যাপক রিফাত ফারহানা, সহকারী অধ্যাপক নুমান মাহফুজ, সহকারী অধ্যাপক রিতু কুণ্ডু, প্রভাষক শাহ মো. আজিমুল এহসান, প্রভাষক তাহমিনা ফেরদৌস তান্নি এবং প্রভাষক শাকিলা আক্তারের উপস্থিতি প্রাণবন্ত করে তুলে চড়ুইভাতির আয়োজনকে। বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে এই আয়োজন হয়ে উঠে আরও বেশি উৎসবমুখর। 

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।