উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

কর্মীদের মাসে ৯০ লাখ টাকা বেতন দেন সম্রাট

২৩ বছর বয়সী তরুণের নাম সম্রাট হলেও ছিল না সাম্রাজ্য। তিন বছরের কঠোর পরিশ্রমে এখন তার সবই আছে। তার নিজস্ব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘এস আর সলিউশন’। এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ১৮০ জন কর্মী। এখানে প্রতি মাসে কর্মীদের বেতন বাবদ সম্রাট ব্যয় করেন ৮০-৯০ লাখ টাকা। 

শুরুর পথ অসমৃণ

শরীয়তপুরের চিকন্দী ইউনিয়নের এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম সম্রাটের। স্বপ্ন দেখতেন, একদিন বড় হবেন। ‘স্বপ্নের পাহাড়’ নিয়ে ২০১৮ সালের অক্টোবরে ঢাকায় পাড়ি জমান। এরপর এই শহরে টিকে থাকতে হন্য হয়ে কাজ খুঁজতে থাকেন। এসময় এক বড় ভাই রেস্টুরেন্টে কাজের সুযোগ করে দেন। 

সম্রাটের ভাষ্য, একটা কাজের ব্যবস্থা হলেও শুরুটা এতটাও ভালো ছিল না। সেখানে ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার জন্য আমাকে ফরমাল পোশাক পরে যেতে হবে। কিন্তু আমার কাছে সেসব কিছুই ছিল না। এমনকি সেই রেস্টুরেন্টে যাওয়ার ভাড়াটাও ছিল না। 

ওই মুহূর্তে কাজটি খুবই দরকার ছিল। তাই সে এক আত্মীয়ের কাছ থেকে ৮০০ টাকা ধার নেয়। বলেন, নিউ মার্কেট এলাকার ফুটপাত থেকে শার্ট,প্যান্ট ও জুতা কিনে ইন্টারভিউ দিই। সাত হাজার টাকা বেতনে চাকরি শুরু করি। প্রতিদিন প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় দিতে হতো। কাজ চলাকালে আমাকে জুতা-শার্ট’র জন্য অনেকের কাছে হাসি-ঠাট্টার পাত্রে পরিণত হতে হয়েছে। তবুও চুপ করেই থাকতাম। 

সম্রাট বলেন, রেস্টুরেন্টে চাকরি করার সময় হঠাৎ চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হই। এতে প্রায় ১৫ দিন অসুস্থ ছিলাম। ডিউটি করতে পারিনি। এক মাসের বেতন পাওনা থাকলেও সেটা আর দেয়নি। এরপর বেশ কয়েকদিন বাইরে ঘুরতে হয়েছিল কাজের জন্য।

আশা জাগিয়েও হলো না

নিজে কিছু একটা করবেন, এমন স্বপ্ন নিয়েই তার ঢাকায় আসা। অনলাইন মাধ্যমে কাজের সুযোগের বিষয়ে ধারণা ছিল সম্রাটের। এসময় বিশ্বখ্যাত অনলাইন জনপ্রিয় প্লাটফর্ম অ্যামাজনে ই-কমার্স নিয়ে একটি কোম্পানির সাথে তার পরিচয় হয়। এটার মাধ্যমেই সে কাজ শুরু করে। হঠাৎ কোনও এক সমস্যায় এ কাজটিও ছেড়ে দিতে হয়। এরপর অনেকটাই ভেঙে পড়েন তিনি। সেসময় তার থাকা-খাওয়া এবং চলার মত অবস্থা খুবই করুণ ছিল।

স্বপ্নের পথচলা

এরপর সম্রাট তার এক পরিচিত বড় ভাইয়ের অফিসে সময় দিত। সেখানে অনলাইন মাধ্যমে কাজ করতো। অনলাইন কাজ সম্পর্কে বিশদ ধারণা নেয় এবং সেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে থাকে। সেসময় এক আমেরিকান ক্লায়েন্টের সাথে তার পরিচয় ও কাজ নিয়ে কথা হয়। তখন সেই ক্লায়েন্ট তাকে অ্যামাজন আর ওয়ালমার্ট নিয়ে বেশকিছু কাজ দেন। অ্যামাজন স্টোরের যাবতীয় (যেমন- স্টোরের অর্ডার হিসাব, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট পণ্য বাছাইকরণ, কত ডলার খরচ ও প্রফিট হচ্ছে) কাজের হিসাব করতে হতো রাত জেগে।

সেখান থেকে শুরু হলো সম্রাটের নতুন পথচলা। ই-কমার্স নিয়ে কাজ শুরু করা। প্রথম দিকটা খুবই কষ্টের ছিল। প্রথম মাসে কাজের জন্য সে ১৮ ডলার পায়। দৈনিক ১৬-১৮ ঘণ্টা কাজ করে দুই/তিন মাস এভাবেই চলতে থাকে। এরপর ধীরে ধীরে কাজ ভালোভাবে চলতে থাকে। এসময় তার বাল্যকালের বন্ধু রায়হান সহযোগিতা করতে লাগলো। তাদের কাজ বাড়লো। সঙ্গে যুক্ত হয় আরও একজন। তিন জনের একটি টিম নিয়েই তাদের ই-কমার্স যাত্রার শুরু।  

নিজের প্রতিষ্ঠান

২০১৯ সালের ২০ জুন সম্রাট প্রতিষ্ঠা করে তার নিজস্ব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘এস আর সলিউশন’। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সম্রাটের প্রতিষ্ঠানে এখন কাজ করেন ১৮০ জন কর্মী। যাদের প্রত্যেকেই বাংলাদেশি। যাদের প্রত্যেকেই ভালো অংকের টাকা আয় করেন। এদের মধ্যে যারা একটু বেশি দক্ষ তারা প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকাও আয় করে থাকেন। সম্রাট জানান, প্রতি মাসে সকল কর্মীদের বেতন বাবদ ব্যয় করেন ৮০-৯০ লাখ টাকা। 

পড়াশোনা

সম্রাট চিকন্দী সরফ আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তিনি এখন এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত রয়েছেন। তার ইচ্ছা আগামীতে আরও মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন এবং তার কর্মীদের একটা অফিসের আওতায় নিয়ে আসবেন।