শিল্প ও সাহিত্য

মীনাকুমারী: আবেগ ও অনুরাগে 

ভারতীয় উপমহাদেশের চলচ্চিত্রাকাশে মীনাকুমারী (১৯৩২-১৯৭২) উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো আলো ছড়াচ্ছেন। অভিনয়ের প্রথম  দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত অক্ষুণ্ন রেখেছিলেন নিজের খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা। কিন্তু এর আড়ালে লুকিয়ে ছিল গভীর দুঃখে ভরা একটি জীবন। প্রেমের ব্যর্থতায় সে জীবন ছিল মহান ও সুন্দর। অভিনয় সত্তার ভেতরে সুপ্ত তাঁর কবি পরিচয় শুকিয়ে গেলেও মরে যায়নি। অজস্র গজল, শের  আর নজমের ভেতর দিয়ে বিকশিত হয়েছিল তাঁর কবিসত্তা। এই লেখায় মীনাকুমারীর স্মৃতিচারণ করেছেন উপমহাদেশের খ্যাতনামা চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক  খাজা আহমাদ আব্বাস (১৯১৪- ১৯৮৭)। লেখাটি অনুবাদ করেছেন দিলওয়ার হাসান।

আমার সিনেমা ‘চার দিল চার রাহের’ (১৯৫৯) শুটিংয়ের প্রথম দিন। কাল সারারাত বৃষ্টি হয়েছে। স্টুডিওতে যাওয়ার রাস্তা জল থৈ থৈ। রাস্তার চিহ্নমাত্র দেখা যাচ্ছিল না। আমি পাজামা গুটিয়ে জুতো খুলে স্টুডিওতে ঢুকলাম। সহকারীদের একজনও আসেনি। এসেছে শুধু মেকআপ আর্টিস্ট পান্ধারি জুকার। সে আমাকে বলল, ‘আব্বাস সাহেব, আজ শুটিং বাতিল করতে হবে। এই বাদলা দিনে কোনো নায়িকা ঘরের বাইরে বেরুবে না।’ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘সাড়ে সাতটা তো বেজেই গেছে!’  তখনই জলে ডুবে থাকা মেকাপ রুমের আঙিনায় একটা গাড়ি এসে ভিড়ল। গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো সুন্দর পরিচ্ছন্ন দুটি খালি পা। তারপর এক জোড়া স্যান্ডেল। একটু পরে আভাসিত হলো ছিমছাম সাদা শাড়ি। তাঁর মাথা তোয়ালে দিয়ে ঢাকা। জল ভেঙে সোজা এসে ঢুকলেন মেকাপ রুমে। আয়নার সামনে বসতে-বসতে বললেন, ‘আব্বাস সাহেব, আশা করি দেরি করে ফেলিনি। সংলাপ ঠিক মতো মুখস্ত করেছি। খুব সুন্দর করে লিখেছেন আপনি। তবে হারিয়ানভি দলিত মেয়েরা কেমন করে কথা বলে তা কিন্তু আমাকে শিখিয়ে দিতে হবে।’

ভারত ভূষণের সঙ্গে ‘বৈজু বাওরা’ সিনেমায়

এই ছিল আমার ছবির নায়িকা মীনাকুমারী। লোকে বলে তিনি মারা গেছেন। কিন্তু আমার স্মৃতিতে আজও তিনি জ্বলজ্বল করে জ্বলছেন— একেবারে স্পষ্ট।

‘চার দিল চার রাহে’ ছবিতে তিনজন নায়িকা ছিলেন: মীনাকুমারী, নিম্মি আর কুমকুম। তিনজনই দারুণ অভিনয় করেছেন! তিনজনই চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলতে পরিপূর্ণ সুবিচার করেছেন; কিন্তু আমাদের ‘নয়া সংসার’ ফিল্ম ইউনিটের সবাই বলেছেন— তিনিই এক নম্বর। এভাবেই অভিহিত হবেন তিনি সবসময়। কেন? হয়তো তিনি দেখতে নায়িকাদের মতো ছিলেন না, কিংবা কখনও তিনি নায়িকাদের মতো আচরণ করেননি। তিনি অন্য চিত্রতারকাদের মতো কখনও চোখ ধাঁধানো ঝলমলে পোশাক পরেননি, তাঁর প্রিয় পোশাক ছিল ধবধবে সাদা ভয়েল শাড়ি। তিনি চঞ্চল বা চপল স্বভাবের নারী ছিলেন না। চলাফেরা বা হাবভাবে কখনও তা ফুটে ওঠেনি। স্টুডিওতে ঢোকার আগেই সংলাপ মুখস্ত করে ফেলতেন। কখনও বলতেন না, এখন কোন্ শট নেওয়া হবে? কিংবা বলতেন না— এই যা! ডায়ালগ-শিট বাড়িতে ফেলে এসেছি।

এই নায়িকার ওপর সবাই ছিলেন খুশি। প্রযোজক থেকে শুরু করে মেকাপ ম্যান, শিল্পী আর কলাকুশলী সবাই। কারণ তিনি ছিলেন সবার প্রতি সহানুভূতিশীল।  ছিলেন সহজ সরল। তিনি পরিচালকের কাজ শেখাতে যেতেন না, ক্যামেরাম্যানকে শেখাতে চেষ্টা করতেন না ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল। ক্যামেরা অন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁর চরিত্রের ভেতর ডুবে যেতেন। তিনি তখন আর মীনাকুমারী থাকতেন না। যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন সেই চরিত্রে পরিণত হতেন। আমি যখন তাঁকে ও তাঁর স্বামী আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু কামাল আমরোহির কাছে ‘চার দিল চার রাহে’ সিনেমার গল্পটা বর্ণনা করেছিলাম, আমার আন্তরিক ইচ্ছে ছিল মীনা যেন অস্পৃশ্য চামারনি শাভলি চরিত্রটি বেছে নেন। তবে আমি তাঁকে বলেছিলাম, ‘কোন্ চরিত্রে অভিনয় করতে চান আপনি প্রথমে বেছে নিন। আপনার পরে অন্য নায়িকারা বাছবেন।’

গল্প শুনে তিনি বললেন, ‘আমি শাভলি চরিত্রটি করতে চাই।’ কামাল মৃদু হেসে বললেন, ‘বেশ, সত্যি কথা বলতে কী চরিত্রটি তোমার জন্যে একেবারেই যথাযথ। তবে আব্বাস সাহেব যেমনটা বললেন, শর্ত থাকবে মেকাপ যেন শাভলি চামারনির মতো একেবারে কুচকুচে কালো হয়। তিনি খুব স্বাভাবিক কণ্ঠে বললেন, ‘সে তো অবশ্যই। যে কারণে এই চরিত্রটি আমি বেছে নিয়েছি।’

দীলিপ কুমারের সঙ্গে মীনাকুমারী

মীনাকুমারী আর শাভলি চামারনি। অভিনেত্রী আর ব্যক্তি। দুজনের অবস্থান দুই মেরুতে। রাত আর দিনের মতো বৈপরীত্য। যেন আকাশ আর মাটি। একজন লাখ টাকা আয় করা অভিনেত্রী, আর একজন অতি দরিদ্র এক নারী যার জীবন চলে ঘুটে বিক্রি করে। একজনের নাম মেহজাবিন (চন্দ্রমুখী), কারণ তার গায়ের রং ফরসা আর তিনি নিখুঁত সুন্দর; অন্যজন একেবারে কুচকুচে কালো— যতটা কালো হতে পারে জগতের সবচেয়ে কালো। একজনের শিক্ষাদীক্ষা সব আছে— বইপড়া বিদ্বান, কবিতা আবৃত্তি জানেন; নিজেও কবি, কবি প্রতিভার অধিকারী, অন্যজন অক্ষরজ্ঞানহীন, ছ্যাতলা-পরা যাকে বলে, সর্বোপরি অচ্ছুত।

মীনাকুমারীর মতো ফরসা, শিক্ষিত আর অভিজাত অভিনেত্রীর পক্ষে কি ওই নিরক্ষর, মরচে-পরা আর কুচকুচে কালো অচ্ছুত চরিত্রে অভিনয় করা সম্ভব হবে? এ ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ ছিল না। কিন্তু আমার অনেক বন্ধু ও সহকর্মীর শঙ্কা ছিল মীনাকুমারী অভিজাত নায়িকাই থেকে যাবেন, কখনও নিম্নবর্গের ওই নারীর মতো হাঁটতে, তাকাতে বা চলতে ফিরতে সক্ষম হবেন না। কিন্তু প্রথম দিনই তিনি মেকাপ রুম থেকে কালো ত্বক, মোটা কাপড় আর সস্তা গয়না পরে বেরিয়ে এসে  শাভলিতে রূপান্তরিত হলেন। সেই দিন থেকে তিনি নায়িকাদের জন্যে সংরক্ষিত চেয়ারে বসা বন্ধ করে দিলেন। তিনি বসতে লাগলেন একটা ভাঙা চারপেয়েতে, আসনপিঁড়ির ঢংয়ে গ্রামের মেয়েদের মতো ।

শুটিংয়ের প্রথম দিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসে কোনো একজন সরাসরি তাঁর কাছেই জিজ্ঞেস করলেন, ‘আজ মীনাকুমারী আসেননি?’ আমি বললাম, ‘আপনি তো জানেনই নায়িকারা সময়মতো শুটিংয়ে আসেন না। তবে আপনি যদি শাভলির সঙ্গে কথা বলতে চান বলতে পারেন, তিনি আপনার সামনেই বসে আছেন।’ এই পর্যায়ে এসে মীনা হাসিতে ফেটে পড়লে রহস্য উদ্ঘাটিত হলো। স্টুডিওতে প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটতো।

সব চলচ্চিত্র অভিনেতা বা অভিনেত্রী সম্পর্কে বলা হয়, তারা অভিনয়ের সময় একবারে ডুবে থাকেন তাদের চরিত্রের ভেতর। কিন্তু মীনাকুমারীর বেলায় এটা কতটুকু সত্য? তিনি যে পুরোপুরি অভিনয়ের ভেতর নিমগ্ন থাকতেন এই বিষয়টা আমি নিশ্চিত করতে পারি। শুধু আমি কেন পারে আমার ইউনিটের সবাই, পারে আমাদের পায়ের পুড়ে যাওয়া, ছিঁড়ে যাওয়া চামড়া।

‘আজাদ’ ‘পাকিজা’র দর্শক কখনো কমবে না 

মে মাসের রৌদ্রতপ্ত একটি দিন। মাথার ওপরে সূর্য। আমরা আন্ধেরির কাছে একটা পাথরখনিতে শুটিং করছিলাম। পাথরগুলো তাতানো লোহার মতো পুড়ছিল। শত শত শ্রমিক পাথর ভাঙ্গতে-ভাঙ্গতে গলদঘর্ম হচ্ছিল। তাদের সঙ্গে ছিল আমাদের অভিনেতা-অভিনেত্রী, জনতার ভূমিকায় অবতীর্ণ এক্সট্রারা। সবাই তৃষ্ণার্ত। বারবার তারা আইসক্রিম আর বরফ চাইছিল। খালি পায়ে তপ্ত পাথরের ওপর অভিনয় করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছিল। এমন সময় খালি পায়ে গাড়ি থেকে নামলেন মীনা। তিনি শুটিংয়ে অংশ নিতে এসেছেন।

‘আমরা এখন ক্লোজআপ শটগুলো নেব। আপনি স্যান্ডেল পরতে পারেন।’ বললাম আমি। ‘স্যান্ডেল? হতভাগী শাভলি। তার মতো এক গরিব মেয়ে কী করে স্যান্ডেল পরার স্বপ্ন দেখতে পারে? স্যান্ডেল থাকলে কি পাথর ভাঙতে এই খনিতে আসতো?’ আমাকে জিজ্ঞেস করলেন তিনি।

আমি নির্বাক। পা দিয়ে পাথর স্পর্শ করে দেখলাম আগুনের মতো জ্বলছে। জুতা-মোজা খুলে ফেললাম। আমার দেখাদেখি ক্যামেরাম্যান তার চপ্পল খুলে ফেললেন। জুতা-স্যান্ডেল খুলে ফেললেন সহকারীরা। আর সারা দিন ওই তপ্ত পাথরের ওপর দিয়ে হেঁটে আর দৌঁড়ে বেড়ালেন তিনি। একটা হাতুড়ি-বাটাল দিয়ে ভাঙলেন গরম পাথর। লাঞ্চের সময়টুকুতেও স্যান্ডেল পরলেন না। সন্ধ্যা নাগাদ তাঁর নাজুক পা দুটোর কী হাল হয়েছিল তিনি আমাদের কাউকে কোনো দিন বলেননি। কিন্তু আমরা তো ভুলিনি সেদিন তাঁর পা কতটা পুড়েছিল, ফোস্কা পড়েছিল, কালশিটে পড়ে কী অবস্থা হয়েছিল, কতটা রক্তাক্ত হয়েছিল তার নাজুক দুটি পা।

এই ছিলেন মীনাকুমারী। তাঁর মৃত্যুতে চলচ্চিত্র জগতের কে চোখের জল ফেলেনি? হাজার-হাজার ভক্ত অনুরাগী কেঁদে বুক ভাসিয়েছে। শিল্প ভালবেসেছিলেন আবেগ ও নিষ্ঠায়। মনপ্রাণ দিয়ে। একেবারে পাগলের মতো। এই আবেগ ও অনুরাগ ছিল একই সঙ্গে তাঁর রোগ ও নিরাময়। মৃত্যুর সাত বছর আগে লন্ডনের এক চিকিৎসক তাঁর লিভারের রোগ সনাক্ত করে বলেছিলেন, আর মাত্র এক বছর বাঁচবেন তিনি। রোগের সঙ্গে লড়াই করে পাঁচ- ছ’বছর বেঁচে ছিলেন মীনা। ‘পাকিজা’ ও হাতে থাকা কয়েকটি ছবি শেষ হলে মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। তখন বয়স মাত্র চল্লিশ।

নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। ছবি ছোট হোক কিংবা বড়। পরিচালক বিখ্যাত কিংবা অখ্যাত সেসব না ভেবে নিষ্ঠা ও দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করে গেছেন। তাঁর নিখুঁত অভিনয়গুণে চিত্রনাট্যের দুর্বলতা ঘুঁচে যেত। যে সত্তরটি অদ্ভুত ধরনের ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন তার ডজনখানেক নির্দ্বিধায় মাস্টারপিস বলে গণ্য হতে পারে। শেষ ছবি ‘পাকিজা’ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। একটা কথা খুবই সত্য— একজন শিল্পী কোনো ছবির মান উচ্চ পর্যায়ে রাখার ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে সামান্যই ভূমিকা পালন করতে পারে। একটি চলচ্চিত্রকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে বেশ কিছু ফ্যাক্টর কাজ করে। আমাদের দেশের একশোটা চলচ্চিত্রের মধ্যে নব্বইটির মানই নিচের দিকে। সবারই তা জানা। জানতেন মীনাও। তারপরও তিনি যখনই নিজের দক্ষতা  প্রদর্শনের সুযোগ পেয়েছেন সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে নিজের আগের কাজের চেয়ে বেশি নৈপুণ্য দেখিয়েছেন।

এই হচ্ছে মীনাকুমারী। খুবই বিখ্যাত চিত্রতারকা। যাঁর নামেই সিনেমাগুলো সাফল্যের মুখ দেখে। হাজার হাজার লোক হলের সামনে ভিড় জমায়। এখনও। কিন্তু এই মীনাকুমারীর ভেতরে লুকিয়ে ছিল আর এক মীনাকুমারী। একটা রুশি পুতুল— মাতরুশকা। এই পুতুলের ভেতরে ছিল আর একটা পুতুল। এমনি করে অনেক মীনাকুমারী একটার ভেতরে আর একটা লুকিয়েছিল। একটা মীনাকুমারী ছিলেন অভিনেত্রী। সব সময় নিজের কাজের ভেতর ডুবে থাকতেন, ভুলে যেতেন দুনিয়াদারি। টাকা কিংবা যশ খ্যাতির জন্যে অভিনয় করতেন না, অভিনয়ে নিবিষ্ট হতেন আত্মার শান্তির জন্যে।

মীনাকুমারী

তাঁর ভেতরে ছিল এক সংবেদনশীল কবিসত্তা। ব্যথিত  হৃদয় আর অস্থির আত্মার যন্ত্রণা ঘোঁচাতে গোপনে তুলে নিতেন কবিতার খাতা। জীবনের একবারে শেষ সীমায় এসে লিপিবদ্ধ করতেন নিজ আত্মার অমোঘ সঙ্গীত, হয়তো উত্তরকালের মানুষের জন্যে। লুক্কায়িত নানা স্তরে খুঁজে পাওয়া যেত ছোট্ট একটা মেয়েকে, যার নাম মেহজাবিন— নিদারুণ দারিদ্রের মধ্যে কেটেছে যাঁর শৈশব। সব শিশুদের মতো পুতুল নিয়ে খেলার শখ ছিল তাঁর। ইচ্ছে ছিল স্কুল কলেজে পড়ার; সাধ ছিল বিয়ের পিঁড়িতে বসার, মা হওয়ার। পরিবারের দুর্দশার কারণে  এসব কিছুই হয়ে ওঠেনি। সব আশা, আকাঙ্ক্ষা আর ছোট ছোট স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয়েছিল। মাত্র সাত বছর বয়সে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে সিনেমায় নামতে হয়েছিল।

আজ আর তিনি নেই। আমার সব সময়ই মনে হয়েছে, মীনাকুমারী সারা জীবন ধরে সেই ছোট্ট মেহজাবিনকে খুঁজে ফিরেছেন। ছোট্ট নিষ্পাপ এক বালিকা নিজেকে নিজের ভেতর লুকিয়ে রেখে না জানি কতো স্বপ্নের জাল বুনতো। কতো আশা, কতো আকাঙ্ক্ষা, কতো ইচ্ছে ডানা মেলতো। শুধু আল্লাহ-ই তা জানতেন। হয়তো তাঁর অস্থির আত্মা, কবি সত্তার হাহাকার ডুবে যেত মদের পেয়ালায়। তাঁর তিক্ত-মধুর হাসি, অসীমতা, গাম্ভীর্য, অভিনয়ের সংযত ভাব সবই যেন ছিল ছোট্ট মেহজাবিনকে খুঁজে ফেরার তাগিদে। আজ সেই অন্বেষণের সমাপ্তি ঘটেছে। মৃত্যুর মধ্যে একাকার হয়ে গেছেন মীনা আর মেহজাবিন।

শুধু গল্পটা পড়ে আছে, আর কিছু বেদনাবিধুর স্মৃতি।