মতামত

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন: গণতন্ত্র ফেরানোর লড়াই 

বিশ্বের অন্যতম গণতান্ত্রিক এবং পরাশক্তির দেশের নির্বাচন মানেই অনেক হিসাব-নিকাশ। এ কারণে মধ্যবর্তী নির্বাচন ঘিরেও বিশ্ববাসীর কৌতূহল রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচন গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই। এর আগের অর্থাৎ ৬ নভেম্বর ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনও এমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। কারণ তখন যুক্তরাষ্ট্রের এবং বিশ্বের পরিস্থিতি এতটা উত্তেজনাপূর্ণ এবং আর্থিক মন্দাবস্থায় ছিল না।

বর্তমানে পরিস্থিতি একটু বেশিই ঘোলাটে। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করে ডেমোক্রেটরা আমেরিকার ক্ষমতাসীন দল। জো বাইডেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। এখন মধ্যবর্তী নির্বাচনে তার জনপ্রিয়তা প্রমাণের সময় উপস্থিত হয়েছে। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই কঠিন সময়ে রয়েছেন তিনি। চীন ও রাশিয়ার সাথে প্রতিযোগিতা, নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখা, করোনা ও যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির দুঃসময়, বেকারত্ব প্রভৃতি নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে।

এই প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও আমেরিকার অর্থনীতি গত এক দশক ধরে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি ফেডারেল রিজার্ভের নির্ধারিত ২ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি কমানোর লক্ষ্য পূরণ করেছে। চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ডেমোক্র্যাটদের অবস্থান ভালো হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ নিয়ে বছরের শুরু থেকেই বিভিন্ন জরিপ করা হয়েছে। গত জুলাইয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস-সিয়েনা কলেজের জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৩৩ শতাংশ ভোট মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পক্ষে আছে। অর্থাৎ বিগত নির্বাচনে বাইডেন যে সমর্থন পেয়েছিলেন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। অবশ্য পরবর্তীতে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। 

ঠিক মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগেই বাইডেন জনপ্রিয়তা ফিরে পেয়েছেন। রয়টার্স-ইপসোস পরিচালিত এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৪০ শতাংশ মার্কিনি বাইডেনের পারফরম্যান্সে খুশি। গত জুন মাসের শুরুর দিকে থেকে যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। দেশজুড়ে পরিচালিত দুদিনের এ জরিপে দেখা গেছে, এতে অংশ নেওয়া ডেমোক্রেটিক পার্টির ৭৮ শতাংশ সমর্থক বাইডেনের ওপর খুশি। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল ৬৯ শতাংশ। গত বছর আগস্ট থেকেই বাইডেনের জনপ্রিয়তা পড়তির দিকে ছিল। তখন থেকেই তা ৫০ শতাংশের নিচে। সবচেয়ে বেশি নেমেছিল গত মে মাসে; ৩৬ শতাংশ। 

উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং কোভিড-১৯ মূলত এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। আবার গ্যালাপের জরিপে দেখা গেছে, মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন। যদি রিপাবলিকান প্রার্থীরা বিজয়ী হয় তাহলে পরবর্তী নির্বাচনেও প্রভাব ফেলতে পারে। ক্যাপিটেল হিলে দাঙ্গার ঘটনা এখনও ভাবাচ্ছে। নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেওয়া না-নেওয়া নিয়ে রয়েছে সংশয়। আমেরিকার মতো গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের ঘটনা ছিল নজিরবিহীন এবং লজ্জাজনক। এই যে গণতন্ত্র ফেরানোর কথা বলা হচ্ছে তা এই ঘটনার পর থেকে আরও গুরুত্ব পাচ্ছে। পরের নির্বাচনেও যে প্রার্থীরা মেনে নেওয়া সংস্কৃতি বজায় রাখবেন তার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। 

২০২০ সালের নির্বাচনের ফল এখন পর্যন্ত মেনে নিতে পারেননি তাদের অন্তত ১৮৯ জন এ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। ৮ নভেম্বর কংগ্রেসের আসন ছাড়াও ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ৩৬টি গভর্নর পদের নির্বাচন হবে। এতে কংগ্রেসের ৪৩৫টি আসনের সবকটি এবং সিনেটে ৩৪টি আসনে ভোট হবে। এই ৩৬টির মধ্যে এখন ২০টি রিপাবলিকানদের দখলে। এই নির্বাচন শেষে মনোযোগ যাবে পরবর্তী নির্বাচনে যা ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে প্রার্থী হওয়ার কথা রয়েছে জো বাইডেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের। বিগত নির্বাচনেও এই দু’জন প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল। 

এরপর ট্রাম্পের পরাজয় এবং তার পরবর্তী ঘটনা তো এখন ইতিহাস এবং একইসাথে সংশয়ের। গণমাধ্যমের তথ্যে জানা যায়, সাধারণত যে দল হোয়াইট হাউজে থাকে, তারা মধ্যবর্তী নির্বাচনে ফল খারাপ করে। এই যদি রেকর্ড হয় তাহলে ডেমোক্রেটদের ভাগ্যে কি ঘটবে তার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে। 

এদিকে নির্বাচনের আগের জরিপগুলোও বাইডেনের পক্ষে ওঠানামা করেছে। তাছাড়া কংগ্রেসের স্পিকারের পরিবারের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব বিষয় এই মধ্যবর্তী নির্বাচন এবং আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। বিপরীতে কিছু সিদ্ধান্ত যেমন গত ৭ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে একটি ঐতিহাসিক বিল অনুমোদন পায়। সে সাথে ওষুধের মূল্যহ্রাস এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে করপোরেট কর বাড়ানোর প্রস্তাব রেখে করা বিলেও অনুমোদন দেন সেনেটররা। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট সবসময় পরিবর্তনশীল। তবে আভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর সমাধানের সাফল্যই বড় হয়ে ওঠে নির্বাচনের সময়। যে সমস্যাগুলো এখন বিদ্যমান রয়েছে জো বাইডেন তা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তারপরও মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফল ২০২৪ এর নির্বাচনেও প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে। 

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট