দেহঘড়ি

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কী করবেন?

অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগেন। কোষ্ঠকাঠিন্য কাকে বলে? সাধারণত কারো যদি সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ হয় সেটাকে আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য বলে থাকি। শুষ্ক ও কঠিন মল নিষ্কাশনও কোষ্ঠকাঠিন্য। 

এ অবস্থায় পায়খানায় দীর্ঘক্ষণ বসে থেকেও মল পরিষ্কার হয় না। এ রকম উপসর্গের রোগীরাই আমাদের কাছে আসেন।

এখন কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কী করবেন? প্রাথমিক অবস্থায় কারো যদি কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, সে যদি প্রচুর পরিমাণে পানি, শাকসবজি খেয়ে থাকেন এবং নিয়মিত প্রত্যুষে মলত্যাগের অভ্যাস করেন; তাহলে অনেকক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সম্ভব।

অনেকক্ষেত্রে আমরা পায়খানা নরম করার জন্য ল্যাকটোলোজ জাতীয় ওষুধ দিয়ে থাকি। এতেও কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেল, দিনে যদি তিন চামচ করে দুইবার ইসুবগুলের ভূষি খান, প্রতিদিন ১০-১২ গ্লাস পানি খান, নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করেন, প্রতিদিন প্রত্যুষে নিয়মিত ঘুমান বা পরিপূর্ণ বিশ্রাম নেন, তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। 

এত কিছুর পরও যদি কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো না হয়, অনেকসময় মলদ্বারে শক্ত পায়খানা এসে আটকে থাকে, সেক্ষেত্রে আমরা মলদ্বারে গ্লিসারিন জাতীয় ওষুধ দিতে বলি। তাতেও যদি কাজ না হয়, সেক্ষেত্রে আমরা বলি এনেমা দিতে।

কিন্তু এই কোষ্ঠকাঠিন্যকে শুধু ‘কোষ্ঠকাঠিন্য’ ভেবে বসে থাকবেন না। অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য ভেবে ফার্মেসি থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ কিনে খায়, কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্যের আড়ালে অনেক সময় অনেক রকম রোগ থাকে। 

যেমন: বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় এমন একটি রোগ, যাকে আমরা বলে থাকি ‘হাসপ্রাঙ্ক ডিজিজ’। মলদ্বারের মাংসপেশীতে বিভিন্ন রকমের স্নায়ু থাকে, যা কিনা সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে আমাদের মলদ্বার থেকে মলগুলো বের হতে সাহায্য করে। সেই স্নায়ুগুলো যদি না থাকে অর্থাৎ শুকিয়ে যায়, তাহলে এই ডিজিজটা হয়ে থাকে-হাসপ্রাঙ্ক ডিজিজ।

কাজেই বাচ্চাদের যদি দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই একজন শিশু সার্জন বিশেষজ্ঞ বা কোলন ও রেকটাল সার্জন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।

আবার অনেকের দেখা যায়, আগে স্বাভাবিক পায়খানা হতো, হঠাৎ করে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিয়েছে, আবার নরম পায়খানা হচ্ছে। এ রকম সমস্যা যদি হয়, তাহলে দেখা যায় ক্ষেত্রবিশেষে কোলন বা রেক্টাল ক্যানসার হতে পারে। কাজেই কোষ্ঠকাঠিন্য ভেবে কারো এই রোগটিকে হেলাফেলা করা উচিত নয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য হলেই যে আপনার ক্যানসার হয়ে যাবে, এ রকম কথা নয়। কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্য দীর্ঘদিন চলতে থাকলে এবং  স্বাভাবিক নিয়ম-কানুনে যদি ভালো না হয় তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক রোগীদের রোগের বিবরণ নিয়ে, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে; কী কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে সেটি শনাক্ত করে যথাযথ চিকিৎসা দিবে।

লেখক: জেনারেল ও কোলো রেকটাল সার্জন, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ