দেহঘড়ি

হার্টের স্বাস্থ্য নিজেই পরীক্ষা করবেন যেভাবে

আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটার তথ্যানুসারে, বিশ্ব মৃত্যুর শীর্ষ কারণ হলো হার্টের রোগ। এ কারণে হার্টের স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে, যেমন- রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। হার্টকে সুস্থ রাখতে জীবনযাপনে সবসময় সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে।

হার্ট সংক্রান্ত সমস্যার লক্ষণসমূহ জেনে রাখতে হবে। যদি লক্ষণ অনুভব করেন, তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। তবে ঘরোয়া উপায় অবলম্বনেও হার্টের কিছু বিষয় সম্পর্কে জানা যেতে পারে। এমনকি যন্ত্রেরও প্রয়োজন নেই, যা প্রয়োজন তা হলো- কিছু সময় ও গণিত সংক্রান্ত কিছু জ্ঞান। এখানে ঘরে যন্ত্র ছাড়াই হার্টের স্বাস্থ্য পরিমাপের দুটি সহজ উপায় উল্লেখ করা হলো।

* সিঁড়ি পরীক্ষা

ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলজির এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ৪ ফ্লাইট সিঁড়ি আরোহণ করতে কত সময় লাগছে, তার মাধ্যমে নিজের হার্টের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে। চার ফ্লাইট সিঁড়ি আরোহণে দেড় মিনিটের বেশি লাগলে হার্টের স্বাস্থ্যকে গুরুতর বিবেচনা করতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়াই ভালো। 

* পালস পরীক্ষা

পালস নামেও পরিচিত হার্ট রেট হলো হার্টের স্বাস্থ্য বোঝার প্রাথমিক পরীক্ষা। ঘরে যন্ত্র ছাড়াই হার্ট রেট পরিমাপ করতে পারবেন। বেশি শারীরিক পরিশ্রম অথবা মানসিক চাপের সময় হার্ট বিট দ্রুত চলে (ম্যাক্সিমাম হার্ট রেট) এবং বিশ্রাম বা ঘুমের সময় হার্ট বিট ধীরে হয় (রেস্টিং হার্ট রেট)। এই দুই ধরনের হার্ট রেট ঘরেই পরিমাপ করা যায়।

শরীরের কিছু স্থান রয়েছে যেখানে আপনার পালস অনুভব করতে পারবেন। সহজেই পরিমাপযোগ্য একটি স্থান হলো, কবজি। হাতের কবজির ওপর তর্জনি ও মধ্যমা আঙুল রাখুন এবং ১৫ সেকেন্ড পর্যন্ত হার্টবিটের সংখ্যা গণনা করুন। এই সংখ্যাকে চার দিয়ে গুণ করলে প্রতিমিনিটের হার্ট রেট বের হবে।

রেস্টিং হার্ট রেট: রেস্টিং হার্ট রেট পরিমাপের সেরা সময় হলো সকাল- যখন ঘুম থেকে জাগেন ও বিছানায় থাকেন। গবেষণা বলছে- রেস্টিং হার্ট রেট উচ্চ হলে ফিজিক্যাল ফিটনেস কমে, রক্তচাপ বাড়ে এবং হার্ট অ্যাটাক ও মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। সাধারণত সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হার্ট রেটের রেঞ্জ প্রতিমিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বিট। এখানে বয়সভেদে রেস্টিং হার্ট রেট রেঞ্জ তথা বিশ্রামবস্থায় নিরাপদ হার্ট রেটের রেঞ্জ উল্লেখ করা হলো-

২০ বছর ১০০-১৭০ বিপিএম

৩০ বছর ৯৫-১৬২ বিপিএম

৪০ বছর ৯০-১৫৩ বিপিএম

৫০ বছর ৮৫-১৪৫ বিপিএম

৬০ বছর ৮০-১৩৬ বিপিএম

৭০ বছর ৭৫-১২৮ বিপিএম

ম্যাক্সিমাম হার্ট রেট: অতিরিক্ত পরিশ্রমের সময় হার্ট কত দ্রুত বিট করে এবং সর্বোচ্চ হার্ট রেটের কতটা কাছে, সে ধারণা পেতে শরীরচর্চার সময় হার্ট রেট মাপতে পারেন। শরীরচর্চার সময় হার্ট রেট মাপতে শরীরচর্চার মাঝখানে সংক্ষিপ্ত বিরতি নিন। সর্বোচ্চ সঠিক ফল পেতে হার্ট রেট মনিটর বা ফিটনেস ট্র্যাকার ব্যবহার করতে পারেন। 

অতিরিক্ত পরিশ্রমের সময় নিম্ন হার্ট রেট ভালো লক্ষণ নয়। আপনার সর্বোচ্চ হার্ট রেট বের করতে ২২০ থেকে আপনার বয়স বিয়োগ করুন। ধরুন, আপনার বয়স ৪০, তাহলে আপনার সর্বোচ্চ হার্ট রেট হবে ২২০-৪০=১৮০ বিপিএম।

আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের মতে, মাঝারি ব্যায়ামের সময় সর্বোচ্চ হার্ট রেটের ৬৪ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ অর্জিত হওয়া উচিত। অন্যদিকে ভারী ব্যায়ামের সময় সর্বোচ্চ হার্ট রেটের ৭৭ শতাংশ থেকে ৯৩ শতাংশ অর্জিত হওয়া উচিত।

সর্বোচ্চ হার্ট রেটই বলে দেবে আপনার কতটুকু শারীরিক সক্ষমতা রয়েছে। হার্ভার্ড হেলথের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যার শারীরিক সক্ষমতা যত বেশি তার হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ঝুঁকি তত কম।