পজিটিভ বাংলাদেশ

বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোরআন হাতে লেখার দাবি হাবিবুরের

ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, সেটি আবারও প্রমাণ হলো। মাদরাসার শিক্ষার্থী না হয়েও নিজ হাতে আরবি ভাষাতে কোরআন শরিফ লিখেছেন সাতক্ষীরার উদ্দামী যুবক মো. হাবিবুর রহমান। এই কোরআনকে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাতে লেখা কোরআন বলে দাবি করেছেন। 

৩৩৫ সেন্টিমিটার (১০ ফুট) দৈর্ঘ্য ও ২৬৪ সেন্টিমিটার (৮ ফুট) প্রস্থ হাতে লেখা এই কোরআনে রয়েছে ১৪২টি পাতা। আর এই কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হাবিবুরের সময় লেগেছে ৬ বছর ৮ মাস ২৩ দিন। পাতার যে অংশে সূরা বা পারা শেষ হয়েছে সেখানের বাকি অংশে লেখা হয়েছে আল্লাহর নাম। মার্জিন ও পেইজ ডিজাইনের জন্য মধুর এ নামটি এসেছে ৩ লাখ ৫০ হাজার বার। ৩০ পারার ঝকঝকে হরফে লেখা ১১৪টি সূরা’র এই কোরআন দেখে বোঝার উপায় নেই এটি ছাপা নাকি হাতে লেখা।

দুবাই এক্সপোতে ২০২০ বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোরআনা প্রদর্শিত হয় বলে জানিয়েছিল আরব নিউজ। ওই কোরআনের দৈর্ঘ্য ছিল ২৫৯ সেন্টিমিটার (৮. ৫ ফুট) ও প্রস্থ ছিল ১৯৮ সেন্টিমিটার (৬.৫ ফুট)। 

হাবিবুর রহমানের বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পলাশপোল এলাকায়। তার বাবার নাম মো. আজিজুর রহমান। হাবিবুর ২০০৩ সালে সাতক্ষীরা শহরের পিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। ২০০৫ সালে এইচএসসি ও পরবর্তিতে এলএলবি সম্পন্ন করেন তিনি।

জীবনে কখনও মাদ্রাসায় না যেয়েও হাবিবুর ইউটিউব দেখে আয়ত্ব করেছেন আরবিসহ কয়েকটি ভাষা। মানবতার জন্য কিছু করার ইচ্ছা থেকেই তিনি পুরো কোরআন হাতে লিখেছেন।

কেন তার এই প্রচেষ্টা এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিবুর বলেন, ‘২০১৩ সালের দিকে আমি সাতক্ষীরা শহরের সমাজ সেবা অফিসে কম্পিউটার ইনস্ট্রাকটর হিসেবে কাজ শুরু করি। সে সময় সমাজের অসহায় অবহেলিত গরীব মানুষের দূরবস্থা দেখে তাদের পাশে থেকে চিকিৎসা সেবার জন্য কিছু একটা করার আগ্রহ জাগে। তখন থেকে আমি চিন্তা করি এমন কিছু করবো যেটি বিশ্ব রেকর্ড করবে। সেই চিন্তা থেকেই মাথায় আসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোরআন হাতে লেখার বুদ্ধি।’

তিনি আরও বলেন, জীবনে কখনো মাদরাসায় যায়নি। ইউটিউব দেখেই আরবি ভাষা আয়ত্ব করেছি। আল্লাহর বাণীকে ভালোবেসে সেই বিদেশি ভাষাতেই নিজের হাতে লিখেছি আল কোরআন। শুধু লেখা নয় নিজ সাধনায় মুখস্ত করেছি কোরআনের দুইটি পারাও। এবার মানবতার জন্য কিছু করতে চাই।’

হামিদুর ৩ হাজার ৪০৮টি আর্ট পেপারকে আঠা দিয়ে জোড়া লাগিয়ে ১৪২টি পাতায় রূপান্তর করেছেন। এরপর কোরআনটি লেখেন তিনি। তার তৈরি হাতে লেখা এই কোরআনের ওজন ৪০৫ কেজি। লাল, নীল, সবুজ ও কালো রঙের পাতা ঐশী বাণীর শোভা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

হাবিবুরের মা ফিরোজা পারভীন বলেন, ‘২০১৬ সালের ১ জানুয়ারিতে আমার ছেলে এই পবিত্র কোরআন হাতে লেখা শুরু করে। চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর তার লেখা সম্পন্ন হয়। অতিরিক্ত পরিশ্রম করে ও সারা রাত জেগে সে এই কোরআন শরিফটি নিজের হাতে লিখেছে। আমার সন্তানকে যাতে আল্লাহ সব সময় ভালো রাখেন সেই দোয়াই করি।’

সাতক্ষীরা আহছানিয়া জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ ইব্রাহীম খলিল ও সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খরিয়াটি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আজিজুর রহমান জানান, আরবি ভাষায় অভিজ্ঞ আলেমরাও তার কোরআন পড়ে নির্ভুল বলেছেন। তার এই উদ্যেগের সবাই প্রশংসা করেছেন। 

তারা আরও জানান, দীর্ঘ ৬ বছর ৮মাস ২৩ দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে ৬ হাজার ৬৬৬টি আয়াত লিখেছেন হাবিবুর।

প্রসঙ্গত, প্রায় সাড়ে ১৪০০ বছর আগে হজরত জিবরাইল (আ.) এর মাধ্যমে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ওপর কোরআনের আয়াতগুলো নাজিল করেন আল্লাহ। আয়াত অবতরণের পর সেগুলো হাতে লিখে রাখতেন সাহাবারা। প্রাচীনতম কোরআন শরিফের হাতে লেখা এমন বহু পান্ডুলিপি সংরক্ষিত রয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন জাদুঘরে।