পজিটিভ বাংলাদেশ

এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু চার লেন প্রকল্প, কাজ শেষে কম‌বে দুর্ভোগ

যানজটে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক চারলেন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে যানজট, সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি দুর্ঘটনা কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) সড়ক সংযোগ প্রকল্প ফেইজ-২ এর অধীনে কাজ চলছে। এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব চারলেন প্রকল্পে ১৩.৬ কিলোমিটার মহাসড়কে একটি ফ্লাইওভার, আটটি ব্রিজ, ১০টি কালভার্ট ও দুইটি আন্ডারপাসসহ একটি সার্ভিস লেন নির্মাণ করা হবে। এ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০১ কোটি টাকা। প্যাকেজ-৫ এর অধীনে আব্দুল মোনেম লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি বাস্তবায়ন করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পর উত্তরবঙ্গের ১৭টিসহ মোট ২৩টি জেলার গাড়ি ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে চলাচল শুরু করে। এতে মহাসড়কে গাড়ির চাপ ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। গাড়ির তুলনায় মহাসড়কটি সম্প্রসারিত না থাকায় প্রতিদিনই যানজটসহ দুর্ঘটনার কবলে পরে প্রাণ দিতে হতো যাত্রী ও চালকদের। বিশেষ করে ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে এই সড়কে জন ভোগান্তি বেড়ে যায় বহুগুণে। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার সড়কটি চার লেনে উন্নতি করণের প্রকল্প হাতে নেয়। 

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারলেও বর্তমানে মহাসড়কের পুরো কাজই শেষ হয়েছে। ফলে মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত কোনো প্রকার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না যাত্রী ও চালকদের। একই সঙ্গে এই সড়ক দুর্ঘটনার হারও কমে গেছে। 

তবে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড় পর্যন্ত দুইলেনের মহাসড়কের কারণে এই অংশে এখনও ভোগান্তি রয়ে গেছে। প্রায় প্রতিনিয়তই যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পাড়ছেন না যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন। ফলে এসব ভোগান্তির অবসান করতে সরকার নতুন করে আবারও এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩. ৬ কিলোমিটার সড়ক প্রায় ৬০১ কোটি টাকা ব্যায়ে ৪ লেনসহ এসএমভিটি (সার্ভিস লেন) করার উদ্যোগ নেয়। 

ইতোমধ্যেই চারলেন প্রকল্পে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেড। ২০২৪ সালের জুন মাসে কাজটি শেষ করার কথা রয়েছে। প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাবে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ২৩ জেলার মানুষ।

সরেজমিন মহসড়কের এলেঙ্গা ও আনালিয়াবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মহাসড়কের দক্ষিণপাশে কাজ শুরু হয়েছে। দিনরাত পাইপযোগে সড়ক নির্মাণের জন্য ফেলা হচ্ছে বালু মাটি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই অংশের কাজ শেষ করার দাবি চালক ও যাত্রীদের। 

দিনাজপুরগামী হানিফ পরিবহনের চালক রুস্তম আলী বলেন, ‘আগে প্রতিনিয়ত টাঙ্গাইলে এসে যানজট আটকা পড়তে হতো। অনেক সময় চোখের সামনেই দুর্ঘটনা দেখেছি। মহাসড়কটির চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চারলেন বাস্তবায়ন হওয়ায় এখন খুব বেশি দুর্ঘটনা ঘটে না। কমেছে ভোগান্তিও। কিন্তু গত ঈদে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার দুইলেনের মহাসড়কে যানজটের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটির কাজ বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।’

পাবনা সদরের বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমি ব্যবসায়িক কাজে মাসে ৩/৪ বার ঢাকায় যাতায়াত করি। আসার পথে এলেঙ্গা পর্যন্ত দ্রুত সময়ে পৌঁছাতে পারি। তবে এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত যানজট হয়। তাই সড়কটি বাস্তবায়িত হলে আমার মতো যাত্রীদের সময় অনেকটা বেঁচে যাবে। স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পারবো।’

এই মহাসড়কের এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহুরুল হক বলেন, ‘গাজীপুরের ভোগরা পর্যন্ত ৪ লেন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় যাত্রী ভোগান্তি ও সড়ক দুর্ঘটনা কমে গেছে। দ্বিতীয় ফেইজের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত চারলেনের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হলে আর কোনো ভোগান্তি থাকবে না।’ 

এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব চারলেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আহসান মাসুদ বাপ্পী বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ে মহাসড়কের চারলেনের কাজ শেষ করার আশা করছি। মহাসড়ক নির্মাণ কাজের ব্যয় বাড়বে কিনা সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত পয়েন্ট ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। মূল কাজ শুরু হতে আরো সময় লাগবে।’