সাতসতেরো

‘আগুন পাখি’ না থাকার এক বছর

‘আগুন পাখি’ খ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ৮৩ বছর বয়সে গতবছরের ১৫ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা বিহাসের নিজ বাসায় মারা যান তিনি। পরদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। 

বরেণ্য এই কথাশিল্পীর মৃত্যুবার্ষিকীতে আজ (মঙ্গলবার) সকাল ৯ টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে।

কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৩১ বছর শিক্ষকতা করেছেন। একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বহু সম্মাননা পাওয়া গুণি এই কথাশিল্পীর জন্ম ১৯৩৯ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে। শিক্ষকতায় অবসর গ্রহণের পর তিনি বিহাসে নিজের ‘উজান’ নামের বাসাতেই থাকতেন।

মৃত্যুর আগে কিছুদিন ধরে ভুগছিলেন বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে। গত বছরের ২১ আগস্ট তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে রাজশাহী থেকে ঢাকায় নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯ দিন চিকিৎসা চলে। এরপর তাকে আবার রাজশাহীর বাসায় নেওয়া হয়। বাসায় এসে মাত্র সপ্তাহখানেক ভালো ছিলেন। তারপর আবার চেপে বসে অসুস্থতা। ১৫ নভেম্বর রাত পৌনে ৯টার দিকে তিনি মারা যান।

হাসান আজিজুল হক রাজশাহী কলেজে পড়ার সময় ১৯৬০ সালে ‘শকুন’ শিরোনামের গল্প প্রকাশ হয়। এটি তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য’ এর একটি গল্প। এই গল্পের মাধ্যমেই সাহিত্যিক মহলের নজরে আসেন তিনি। ১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। তার আলোচিত ‘আগুন পাখি’ উপন্যাস প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে।

হাসান আজিজুল হকের লেখা গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘তৃষ্ণা’, ‘উত্তরবসন্তে’, ‘বিমর্ষ রাত্রি, প্রথম প্রহর’, ‘পরবাসী’, ‘আমৃত্যু’, ‘আজীবন’, ‘জীবন ঘষে আগুন’, ‘খাঁচা’, ‘ভূষণের একদিন’, ‘ফেরা’, ‘মন তার শঙ্খিনী’, ‘মাটির তলার মাটি’, ‘শোণিত সেতু’, ‘ঘরগেরস্থি’, ‘সরল হিংসা’, ‘খনন’, ‘সমুখে শান্তির পারাবার’, ‘অচিন পাখি’, ‘মা-মেয়ের সংসার’, ‘বিধবাদের কথা’, ‘সারা দুপুর’ ও ‘কেউ আসেনি’। 

সাহিত্যে অবদানের জন্য হাসান আজিজুল হক ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। ২০১৯ সালে তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়।

চলে যাওয়ার আগে তিনি শেষ যে গল্পটি লিখেছিলেন, সেটি ছিলো তার জন্মস্থানকে নিয়ে। গল্পটির নাম ‘মাটির বাড়ি যতদিন চন্দ্র সূর্য’। গল্পটি পুরোপুরি শেষ হয়নি। অসমাপ্ত গল্পটিই রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমির লিটল ম্যাগাজিন ‘মহাকালগড়’-এ প্রকাশ হয়েছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। নিজের জন্মস্থানের ছোটবেলার গ্রাম, সেই বাড়ি, প্রকৃতি নিয়েই ‘মাটির বাড়ি যতদিন চন্দ্র সূর্য’ লিখেছিলেন তিনি।  ‘তরলা বালা’ নামে একটি উপন্যাস লেখার চিন্তা করেছিলেন। বিষয়বস্তুও ঠিক করেছিলেন। তবে সেটি আর লেখা হয়নি।