রাইজিংবিডি স্পেশাল

আটা-ময়দার বাড়তি দামে উদ্বেগে ক্রেতা

বেড়েছে আটা ও ময়দার দাম। টিসিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে খোলা আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৬.৯৬ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৭৯ দশমিক ১০ শতাংশ।

আটা ময়দার সাথে জড়িত বেশি ভাগ খাদ্যপণ্য তৈরির। আর আটা ও ময়দা তৈরি হয় গম দিয়ে। বাংলাদেশে প্রতি বছর গমের চাহিদা ৭৫ লাখ টন। এদেশে উৎপাদন হয় মাত্র ১০ লাখ টন। চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের চাহিদার সিংহভাগ গম আসে রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে। এ বছরের শুরুতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরু হলে প্রভাব ফেলে বাংলাদেশের গম আমদানিতে। কারণ যুদ্ধের জন্য ইউক্রেন গম রপ্তানি করতে পারছে না। তাই এই যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বাংলাদেশের গমের বাজারে দাম বাড়ছে।

বৈশ্বিক উৎপাদন ও সরবরাহ সংকটের কারণে গমের আন্তর্জাতিক বাজার অস্থিতিশীল গত কয়েক মাস ধরে। এর মধ্যে মে মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম বেড়ে দাঁড়ায় রেকর্ড সর্বোচ্চে। সেখান থেকে বর্তমানে কিছুটা কমে এলেও এখনো স্থিতিশীলতা ফেরেনি বাজারে। আন্তর্জাতিক বাজারের এ অস্থিরতার কারণেই দেশের বাজারে গম ও গমজাত পণ্যের দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা জানান, গত অর্থবছরেও দেশে গম আমদানি হয়েছে চাহিদার চেয়ে কম। এতে বাজারে এখন গমের সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। এরই প্রভাব পড়েছে আটা-ময়দার উৎপাদন খরচে, যার ধারাবাহিকতায় গত কয়েক সপ্তাহে দেশের বাজারে আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে মণপ্রতি কয়েকশ টাকা।

এদিকে হঠাৎ করে বাজারে বেড়েছে আটা ও ময়দার দাম। অনেক দোকানে এখন বেশি দামেও পাওয়া যাচ্ছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় এ দুইটি পণ্য। তবে যেখানে আটা-ময়দা পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। সীমিত আয়ের ও সাধারণ মানুষের পক্ষে এ দামে কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে রাজধানীতে খোলা ময়দা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে এই ময়দার দাম ছিল ৬৮ টাকা কেজি। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে প্যাকেট ময়দার দাম ছিল ৭৭ টাকা কেজি। এখন বিক্রি হচ্ছে ৮২ টাকা কেজি দরে। আর গত সপ্তাহের ৬৮ টাকা কেজি দরের খোলা ময়দা এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজি দরে। টিসিবির হিসাবে গত এক সপ্তাহে খোলা আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৬.৯৬ শতাংশ।

টিসিবির তথ্য বলছে, গত এক বছরের ব্যবধানে বাজারে আটার দাম ৭৯ দশমিক ১০ শতাংশ বেড়েছে। বছরের ব্যবধানে ময়দার দাম ৭০ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেড়েছে। খোলা ময়দার দাম গত বছরের এই সময়ে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে।

রাজধানীর আজিমপুর এলাকার সজিব জেনারেল স্টোরের দোকানি রাইজিংবিডিকে বলেন, আটার দাম বেড়ে গেছে। এখন ১ কেজির প্যাকেট ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। আমরা আটার বস্তা কিনতে পারছি না, তাহলে সাধারণ মানুষ কিনবে কি করে। আটা নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আটার দাম বেশি তাই রাখি না। আবার কোম্পানিও ছোট দোকানে দিতে চায় না। কখন আসে বোঝা যায় না। এসে বড় দোকানগুলাতে আটার ১২-২৪ পিসের বস্তা দিয়ে চলে যায়। আমাদের দোকান ছোট বলে তাদের আগ্রহ কম।’ 

রাজধানীর জিগাতলার শাহিন স্টোরের দোকানি শাহিন মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, আমি গত কয়েকদিন ধরে দোকানে আটা রাখি না। কারণ আটার যে দাম আটা রাখলে অনান্য জিনিস রাখার টাকা থাকে না৷ আমাদের মতো যারা স্বল্প পুঁজি নিয়ে ব্যাবসা করে এখন তাদের রাস্তায় বসার পথে। দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি খরচ বহন করে আর লাভ থাকে না। সব মিলিয়ে দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী ও সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া আর কেউ ভালো নেই।

হাজারীবাগের বাসিন্দা শফিক শাহজাহান রাইজিংবিডিকে বলেন, গিয়েছিলাম আটা কিনতে। এক কেজি আটার দাম ৮০ টাকা, দাম শুনে চলে আসছি। এখন আমাদের কি করার আছে। আমাদের এখন বেঁচে থাকাটাই বড় যুদ্ধ।