দেহঘড়ি

তলপেটের ডানদিকে ব্যথা মানেই অ্যাপেন্ডিসাইটিস?

অ্যাপেন্ডিসাইটিস একটি অত্যন্ত সাধারণ সার্জিক্যাল সমস্যা। অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে প্রথমে নাভীর চারপাশে ব্যথা করে। তারপর সে ব্যথা তলপেটের ডান দিকে চলে যায়। ব্যথার সঙ্গে হালকা জ্বর থাকতে পারে, বমি বমি ভাবও থাকতে পারে। এগুলোই অ্যাপেন্ডিসাইটিসের সাধারণ লক্ষণ।

এ ছাড়াও তলপেটের ডান দিকে বিভিন্ন কারণে ব্যথা হতে পারে। যেমন কারো যদি ডান আর্টার অথবা প্রস্রাবের নালীতে পাথর থাকে, সেক্ষেত্রেও ব্যথা থাকতে পারে। এ ছাড়া কারো যদি হঠাৎ করে গ্যাস্ট্রোএন্টারেটিস্ট অর্থাৎ পেট খারাপ হয়, সেক্ষেত্রেও তলপেটে ব্যথা হতে পারে। 

নারীদের ক্ষেত্রে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি যদি হয় অর্থাৎ কারো গর্ভধারণ যদি জরায়ুতে না হয়ে একটি নালীতে হয়ে যায়, বিশেষ করে ডান দিকের নালীতে যদি হয়, সেক্ষেত্রেও কিন্তু তলপেটে হঠাৎ করে ব্যথা হতে পারে। কারো যদি ডান ওভারিতে ব্যথা হয় তাহলেও তলপেটে ব্যথা হতে পারে। কাজেই ডান দিকে ব্যথা হলেই যে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হবে, বিষয়টি সেরকম নয়।

অ্যাপেন্ডিসাইটিস বিভিন্ন রকম হতে পারে, কারো অ্যাকুউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস হতে পারে। কারো দেখা যায় বারে বারে ব্যথা হয়, সেটাকে রিকোয়াররেন্ট অ্যাপেন্ডিসাইটিস বলা হয়। কারো যদি অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয় এবং তার যদি শারীরিক অবস্থা ভালো থাকে, ডায়াবেটিস না থাকে, যদি গর্ভবতী না হন কিংবা শারীরিক দুর্বলতা না থাকে অনেক ক্ষেত্রে ওষুধের মাধ্যমেও অ্যাপেন্ডিসাইটিস নিরাময় সম্ভব।

কিন্তু অ্যাপেন্ডিসাইটিস ক্ষেত্রে যথাসময়ে অপারেশন না করালে অ্যাপেন্ডিসাইটিস অ্যাবসাস বা অ্যাপেনডিকুলার লাম্ব হতে পারে। কিংবা ব্রাস্ট অ্যাপেনডিস্ক হতে পারে। সে জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ধরন নির্ণয় করতে পারলে দ্রুত অপারেশন করে রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব। কেননা সঠিক সময় অপারেশন না করলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে।

অনেকক্ষেত্রে তলপেটের ডানদিকে ব্যথা হলে তাকে অ্যাপেন্ডিসাইটিস বলা হয়। তবে তলপেটের ডানদিকে ব্যথা মানেই কিন্তু অ্যাপেন্ডিসাইটিস নয়। বিভিন্ন কারণে তলপেটে ব্যথা হতে পারে। যেমন: নারীদের মূত্রথলিতে পাথর, এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি, প্রস্রাবের সমস্যা বা ইনফেকশন, শ্রোণীর প্রদাহ বা জরায়ু, ডিম্বনালী ও অন্যান্য প্রজনন অঙ্গের সংক্রামণ ইত্যাদি। এ রকম সমস্যা হলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করতে হবে। চিকিৎসক যদি অপারেশনের পরামর্শ দেন তাহলে দ্রুততম সময়ে অপারেশন করতে হবে। নইলে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে। 

বর্তমানে অ্যাপেনডিক্সের অপারেশন অত্যন্ত সহজভাবে করা সম্ভব। অপারেশনের ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কপিক করা যায়। কয়েকটি ছিদ্র করেই সেটি করা সম্ভব। এতে সুবিধা হচ্ছে, রোগীর অ্যাপেন্ডিসাইটিস আছে কি-না, সেটি ল্যাপারোস্কপিকের মাধ্যমে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়। 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (সার্জারি), জেনারেল ও কোলে-রেকটাল সার্জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল e-mail: nazmul53yahoo.com