পজিটিভ বাংলাদেশ

চায়ের দোকান থেকে আয় ৯০ হাজার টাকা 

ছয় কাপ চা, চিনি ছাড়া লাল চা তিনটা, বাকিটা দুধের। অর্ডার দেওয়া মাত্র ক্রেতাদের কাছে চা নিয়ে হাজির কর্মচারী নাহিদ। বলছি দিনাজপুরের হিলি গোডাউন মোড়ের খাদেমুল ইসলামের চায়ের দোকানের কথা। তার চায়ের স্বাদ সবার মুখে মুখে। দিনে প্রায় এক হাজারের বেশি কাপ চা বিক্রি হয় তার দোকানে। তাতে যে পরিমাণ লাভ হয় তা দিয়ে সুন্দরভাবেই চলছে খাদেমুলের সংসার।

সীমান্তবর্তী শহর হিলির এলএসডি গোডাউন মোড়ে অবস্থিত খাদেমুলের চায়ের দোকান। প্রতিদিন সকাল ৮টায় দোকানে শুরু হয় চা বিক্রি। রাত পর্যন্ত এই দোকানে প্রায় সব বয়সী লোক চা পানের জন্য ভিড় করেন। 

খাদেমুলের দোকানে লাল চা, দুধ চা ও কফি বিক্রি হয়। এই দোকানে লাল আর দুধ চায়ের মূল্য মাত্র ৫ টাকা। কফি বিক্রি হয় ১০ টাকা কাপ। আবার দুই রকমের লাড্ডু ও বলক্রিম পাওয়া যায় দোকানে। যার দাম ৫ টাকা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হিলি সীমান্তবর্তী শহর হওয়ায় খাদেমুলের দোকানে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ চা পানের জন্য আসেন। এই দোকানে দিনে এক হাজার থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ কাপ চা বিক্রি হয়। এ থেকে খাদেমুলের প্রতিদিন খরচ বাদে লাভ হয় ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। অর্থ্যাৎ তার মাসে আয় থাকে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। 

খাদেমুলের চায়ের দোকানে বাসার জায়গাসহ চারপাশে রয়েছে আরও বসার স্থান। এসব স্থানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে মানুষের আড্ডা। ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে আড্ডা দিতে আসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাও। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি পেশাজীবীসহ সাংবাদিকরাও আসেন চা পানের জন্য।

সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় ভারতীয় পণ্যসামগ্রী কিনতে আসা ব্যবসায়ীরা তাদের মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন রাখেন গোডাউন মোড়ে। কাজ ও দুপুরের খাওয়া শেষে ফিরে যাওয়ার আগে তারাও পান করে যান খাদেমুলের দোকানের চা।

চা খেতে এসে মশিউর রহমান সুজন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘খাদেমুলের চা মাশাল্লা খুবি টেস্টি। আমরা বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে আসি চা খেতে। চায়ের স্বাদ আলাদা, অন্য দোকানের চায়ের সঙ্গে খাদেমুলের চায়ের তুলনা চলে না।’

লুৎফর রহমান বলেন, ‘খাদেমুলের চায়ের দোকানে সবসময় কাস্টমারের প্রচুর ভিড় থাকে। বিভিন্ন পেশার লোকজন চা খেতে আসেন। আমিও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে এখানে আসি। চা আর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা এই দুইয়ের কোনো তুলনা হয় না।’

সোহেল রানা এক মিডিয়া কর্মী বলেন, ‘গোডাউন মোড়ের কাছেই আমাদের প্রেসক্লাব। কাজের ফাকে আমরা খাদেমুলের চায়ের দোকানে আসি। তার চায়ের স্বাদ অনেক সুন্দর। এছাড়াও দূর দূরান্ত থেকে সব ধরনের লোকজন এই দোকানে চা পানের জন্য ছুটে আসেন।

চা বিক্রেতা খাদেমুল বলেন, ‘আল্লাহ দিলে সারাদিন এক হাজার থেকে  ১ হাজার ২০০ কাপ চা বিক্রি করি। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চা বিক্রি করি। এতে ভালোই লাভ থাকে। অনেক মানুষ আছেন চা পান শেষে টাকা না দিয়ে পালিয়ে যান। তখন মনটা খুব খারাপ হয়। আমার দোকানে সারাক্ষণ লোকজন থাকে, মানুষের সেবা করতে খুবি ভালো লাগে। দোকানে দুইজন কর্মচারী আছে। তাদের প্রতিদিনের মজুরি দিয়ে যা থাকে তাই দিয়ে ভাই-বোন মা বাবাকে নিয়ে অনেক ভালো আছি।’

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর দুলাল হোসেন বলেন, ‘খাদেমুলের দোকানের চায়ের স্বাদ অনেক সুন্দর। মানুষ এখানে চায়ের পাশাপাশি আড্ডা দিয়ে থাকে, আমিও আসি।’

হাকিমপুর (হিলি) পৌরসভার মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত বলেন, ‘আমাদের পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র গোডাউন মোড়। আর এখানেই চা বিক্রি করেন খাদেমুল। এই দোকানে দলমত নির্বিশেষে সবাই চায়ের আড্ডা দিতে আসেন। আমিও দিনে একবার হলেও সেখানে সবার সঙ্গে গিয়ে চায়ের আড্ডা দিয়ে আসি। চায়ের দোকান হলেও পৌরসভা থেকে খাদেমুল ট্রেড লাইসেন্স করেছেন।’   তিনি আরও বলেন, চায়ের দোকানের আয় দিয়েই খাদেমুল তার বাবার ক্যানসার রোগের চিকিৎসা করেছেন। আমি তার সাফলতা কামনা করি।’

হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন উর রশিদ হারুন বলেন, ‘দেশের মধ্যে হিলি একটি প্রসিদ্ধ স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আর হিলির মধ্যে নামকরা গোডাউন মোড়। এই মোড়ে ব্যবসয়ী, সরকারি-বেসরকারি সব অফিসের কর্মজীবী মানুষসহ আমরা নেতা-কর্মীরা আড্ডা দিয়ে থাকি। এখানে খাদেমুলের চায়ের দোকান আছে। মূলত গোডাউন মোড়ে চায়ের আড্ডা হয়ে থাকে। খাদেমুল নামটি ব্যাপক পরিচিত। আমরা সবাই বলি খাদেমুলের চায়ের দোকানে আছি। সে একজন ভালো ছেলে।’