রাইজিংবিডি স্পেশাল

এনআইডি জটিলতায় মাধ্যমিকে ভর্তি আবেদনে বিড়ম্বনা

মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির আবেদনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বর দেওয়ার নির্দেশনা আছে। কিন্তু, অনেক শিক্ষার্থীর বাবা-মায়ের এনআইডি কার্ড না থাকায় আবেদন করা যাচ্ছে না। এতিম শিশুর আবেদনের ক্ষেত্রে দেখা দিচ্ছে জটিলতা। এ অবস্থায় ভর্তির সময় বাড়ানোর পাশাপাশি এনআইডি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) ছিল আবেদনের শেষ দিন। কিন্তু, অভিভাবকদের অভিযোগ, সার্ভার ও এনআইডি জটিলতায় অনলাইনে স্কুলে ভর্তির আবেদন করতে পারেননি অনেকে। ফলে, অনিশ্চয়তায় পড়েছে অনেক কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত অভিভাবকরাও।

মূলত, স্কুলে অনলাইনে ভর্তির আবেদন করতে ফরমে বাবা-মায়ের এনআইডি নম্বর দেওয়া বাধ্যতামূলক হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। রাজধানীর মগবাজার এলাকার জেসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি কম্পিউটারের দোকানে এসেছিলাম ভর্তির আবেদন করতে। কিন্তু, আমার মায়ের এনআইডি কার্ড না থাকায় ভর্তি ফরম সাবমিট হয়নি। এখন শুনছি, সময়ও বাড়ানো হবে না। তাহলে, আমি এখন কোথায় কিভাবে ভর্তি হবো?’

জেসমনিরে মা সালমা আক্তার বলেন, ‘আমার এনআইডি এখনও হয়নি। আমি জানতাম, বাবা অথবা মা যেকোনো একজনের এনআইডি থাকলেই সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করা যাবে। কিন্তু, এখানে এসে জানতে পারলাম, দুজনের এনআইডি নম্বরই লাগবে। নাহলে আবেদন করা যাবে না। এখন আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। আমার ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে আমার কোমলমতি সন্তানকে।’

কাকরাইলের বাসন্দিা উম্মে হানী বলেন, ‘আমার স্বামী দীর্ঘদিন দেশের বাইরে। তিনি অবৈধভাবে থাকায় দেশে আসতে পারেন না। ফলে, তার কোনো এনআইডি নেই। এখন আমি কিভাবে আমার ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করব?’

তিনি বলেন, ‘অনেকের ডিভোর্স হতে পারে। তাহলে সেই নারী কি তার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করতে পারবে না? এমন হলে তো অনেকেই সন্তানকে লেখাপড়া করাতে পারবে না।  সামান্য সমস্যার কারণে শিশুদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।’

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তির অনলাইন আবেদন গত ১৬ নভেম্বর বেলা ১১টায় শুরু হয়। শেষ হয় মঙ্গলবার বিকেল ৫টায়। এবার সারা দেশে ৫৫০টি সরকারি বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ১ লাখ ৭ হাজার ৮৯টি শূন্য আসনে ছাত্র-ছাত্রী নেওয়া হবে। ২ হাজার ৮৫২টি বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি নেওয়া হবে ৯ লাখ ২৫ হাজার ৬৬টি আসনে। সে অনুপাতে আবেদনের সংখ্যা অনেক কম। যে পরিমাণ আবেদন জমা হয়েছে, তাতে সরকারি স্কুলে আসন পূর্ণ হলেও বেসরকারি বিদ্যালয়ে বেশিরভাগ আসন খালি থাকার আশঙ্কা আছে। এদিকে, আবেদন ফরমে রাত ১২টা পর্যন্ত সময় উল্লেখ করা হলেও অনেকেই বিকেল ৫টার পর আবেদন করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন।

সার্বিক বিষয়ে মাউশি’র মাধ্যমিক শাখার পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেছেন, ‘ভর্তি ফরমে বাবা-মায়ের এনআইডি নম্বর উল্লেখ করা থকালেও তা বাধ্যতামূলক হওয়ার কথা নয়। যেকোনো একজনের এনআইডি নম্বর হলেই ভর্তি করা যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাত ১২টা পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করার নির্দেশ আছে। তবে, সার্ভার জটিলতায় অনেকে ভোগান্তিতে পড়তে পারেন।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আ ন ম আল ফিরোজ বলেন, ‘ভর্তির সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি মন্ত্রণালয় ভেবে দেখবে।’