সারা বাংলা

ভ্যানে সবজি বিক্রি করে কর্মসংস্থান কয়েক হাজার মানুষের 

শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভ্যানে সবজি কেনাবেচা। কর্মব্যস্ত জীবনে নগরীর শ্রমজীবী মানুষেরা বাসায় ফেরার পথে নিত্যপ্রয়োজনীয় যাবতীয় সবজি কিনে থাকে এই ভাসমান ভ্যান থেকেই। 

এতে একদিকে যেমন শ্রমিকদের বাজারে যাওয়ার কষ্ট লাঘব হয়েছে। তেমনি ভ্যানে সবজি বিক্রি করে কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক হাজার মানুষের। 

শিল্প নগরী গাজীপুরে পোশাক শিল্পসহ ছোট-বড় প্রায়  পাঁচ হাজার কারখানা গড়ে উঠেছে।  শিল্প-কারখানার কারণে গাজীপুর জেলায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ লোকের বসবাস। এখানকার অধিকাংশ মানুষ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত সময় পার করেন। বিশেষ করে যারা পোশাক শিল্প কারখানায় কাজ করে তারা আরও বেশি ব্যস্ত। তারা সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া বাজারে গিয়ে কেনাকাটা করার সুযোগ পায় কম। এসব ভাসমান সবজি বাজারই তাদের একমাত্র ভরসা। 

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, টঙ্গী, কোনাবাড়ি, কালিয়াকৈরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি কারখানার সামনে ১০ থেকে ১২ টি ভাসমান সবজির দোকান রয়েছে। সেই হিসাবে এমন ভাসমান সবজি দোকান আছে ৫ থেকে ৭ হাজারের বেশি।  এরা দুপুরে লান্স টাইম ও অফিস ছুটির সময় ভ্যানে বিভিন্ন সবজি নিয়ে দাড়িয়ে থাকে। অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে শ্রমিকেরা পছন্দের সবজি দরদাম করে কিনে নেয়।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন তিনসড়ক এলাকার স্প্যারো ও স্টাইলকাপ কারখানার সামনে কথা হয় সবজি বিক্রেতা হায়দারের সাথে। তিনি বলেন, আজ ৪ বছর ধরে বিভিন্ন কারখার সামনে ভ্যানে সবজি বিক্রি করে আসছি। বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, আলু, পেয়াজ, বেগুন এসবের চাহিদা বেশি। সবচেয়ে সুবিধা হচ্ছে যা বিক্রি হয় সব নগদে। যার কারনে লাভ একটু কম হলেও ঝামেলা কম।

ভোগরা বাইপাস এলাকার কলম্বিয়া গার্মেন্সের সামনে সবজি বিক্রি করেন মো. জিন্নাহ। তিনি বলেন, প্রতিদিন বিকেল ৫ টায় সবজি নিয়ে গেটে আসি। মাঝেমধ্যে সব বিক্রি হয়ে যায়, আবার মাঝেমধ্যে থেকে যায়। তবে মাসের ৮ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত বেশি বিক্রি হয়। এখানে আমার মতো আরও ৯ টি দোকান রয়েছে। 

কোনাবাড়ি তুষুকা গার্মেন্টের সামনে কথা হয় সবজি বিক্রেতা কাওসারের সাথে। তিনি বলেন, সবজি বিক্রি করেই আমার সংসার ভালো চলছে। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। এটি দিয়ে দুই সন্তান নিয়ে খেয়েপড়ে বেশ আছি। সকালে কোনাবাড়ি কাঁচাবাজার থেকে সবজি কিনে ভ্যানে করে বিক্রি করি সারাদিন। 

কাশিমপুর এলাকার সবজি বিক্রেতা লুৎফর রহমান বলেন, কারখানা ছুটির সময় গেটে এসে সবজি বিক্রি করি। পরে ভ্যানে করে সবজি নিয়ে বিভিন্ন বাসাবাড়ি, মহল্লার মধ্যে চলে যাই। এতে আমাদের দোকান ভাড়া দেওয়া লাগে না। লাভ একটু বেশি হয়, তয় মাঝেমধ্যে মহল্লার কিছু পোলাপান চান্দা চায়।

কালিয়াকৈর এপেক্স, নিট এশিয়া, ফারিস্ট কারখানার সামনে কথা হয় নাহিদ, বক্কর ও বাবুল হকের সাথে। তারা জানান, সবজি পচনশীল তবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করায় তাদের পরিমাপ হয়ে গেছে। সেই পরিমাপের আলোকেই সবজি কিনে থাকে। এদের অনেকেই দীর্ঘ দিন একই যায়গায় ব্যবসা করায় শ্রমিকদের বাকিতে সবজি দেয়। বেতনের পর মুখ চিনে বাকি দেওয়া টাকা আদায় করেন।

পোশাক শ্রমিক রত্না খাতুন বলেন, আমাদের বাজারে যাওয়ার সময় সবসময় হয়না। রাত ৭ টা ৮ টার দিকে ছুটি হলে ভ্যান থেকেই তরিতরকারি কিনে নেই। বাজার থেকে এখানে দামেও কম পাওয়া যায়। টাকা না থাকলেও অনেক সময় সবজি নিয়ে যাই, পরে বেতন পেলে টাকা দিয়ে দেই।

স্থানীয় বাসিন্দা ফজর আলী বলেন, এলাকায় বিভিন্ন কারখানায় হাজার মানুষের বসবাস। ছুটি হলে সবজি বিক্রেতারা ভ্যান নিয়ে গেটে আসে। বেচাবিক্রি শেষে ভ্যানে সবজি নিয়ে মহল্লায় বিক্রি করে। এতে আসলে সবারই লাভ। দাম কম এবং টাটকা সবজি পাওয়া যায়। সেই সাথে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও হচ্ছে।