খেলাধুলা

মেসির আর্জেন্টিনার সামনে ডাচ দুর্গ ভাঙার চ্যালেঞ্জ

তিন তিনবার ফাইনালে হেরে বিশ্বকাপ ট্রফি জেতা হয়নি নেদারল্যান্ডসের। এর মধ্যে একবার তাদের স্বপ্ন ভেঙেছে আর্জেন্টিনা। ১৯৭৮ সালের ফাইনালে স্বাগতিকদের কাছে ৩-১ গোলে হেরেছিল ডাচরা। ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত তাদের শেষ বিশ্বকাপ ২০১৪-তে এই আর্জেন্টাইনদের কাছে পেনাল্টি শুটআউটে হেরে সেমিফাইনালে নিতে হয় বিদায়। এবার আরও এক ধাপ আগে, মানে কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে অপ্রতিরোধ্য নেদারল্যান্ডস ও লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত ১টায় লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে হচ্ছে দুই দলের সেমিফাইনালে ওঠার লড়াই।

অপেক্ষাকৃত সহজ গ্রুপে সেনেগালকে ২-০ গোলে হারায় নেদারল্যান্ডস। ইকুয়েডরের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র আর শেষ ম্যাচে কাতারকে ২-০ তে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোতে ওঠে তারা। রক্ষণাত্মক কৌশলে খেলায় কম সমালোচনা শুনতে হয়নি কোচ লুইস ফন গালকে। নকআউটে যুক্তরাষ্ট্রকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সমালোচকদের মন কিছুটা হলেও গলাতে পেরেছে ডাচরা।

অন্যদিকে আর্জেন্টিনা সৌদি আরবের কাছে হেরে গ্রুপ পর্বে বিদায়ের সাইরেন শুনতে পাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত মেক্সিকো ও পোল্যান্ডকে হারিয়ে মেসির অধরা বিশ্বকাপ ছোঁয়ার মিশন বাঁচিয়ে রাখে আলবিসেলেস্তেরা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতলেও সকারুরা গোল শোধ করায় সম্ভবত শেষ কয়েক মিনিট দম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল লিওনেল স্কালোনির দলের। 

সে যাই হোক, দুই দলই একে অন্যের কাছ থেকে পাচ্ছে সমীহ। তবে আলোচনায় মেসিকে থামানোর কী কৌশল অবলম্বন করছেন ফন গাল। ম্যাচের আগের সংবাদ সম্মেলনে সেটি প্রকাশ করে বোকামি করতে চাইলেন না বিশ্বকাপ শেষে ডাচদের দায়িত্ব ছাড়তে যাওয়া কোচ, ‘বোকা নাকি, আমরা আপনাদের কাছে আমাদের ট্যাকটিকস প্রকাশ করবো? (মেসিকে) ব্লক করা এবং পাস লাইন বন্ধ করতেই তো চাইবেন। আমি মনে করি না এনিয়ে বেশি বেশি কথা বলার প্রয়োজন।’

নেদারল্যান্ডসের ডিফেন্ডাররাও মেসি চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে ভীত নয়। সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ীর মুখোমুখি হওয়ার আগে কাঁপছেন না জুরিয়েন ট্রিম্বার, আরেক ডিফেন্ডার নাথান আকেকে পাশে নিয়ে তিনি বললেন, ‘আমি কি কাঁপছি (মেসির মুখোমুখি হওয়া নিয়ে)? সৌভাগ্যবশত না। তার বিরুদ্ধে খেলা দারুণ চ্যালেঞ্জ। মেসি চমৎকার ফুটবলার। কিন্তু আমরা শুধু মেসির বিপক্ষে খেলবো না। এই সমস্যার সমাধান শুধু আমরা দুজন করবো না। পুরো দল নিয়ে করতে হবে।’

আকে বললেন, ‘তাকে থামানো খুব কঠিন। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় সম্ভবত সে কিন্তু আমাদের অন্য খেলোয়াড়দের নিয়েও ভাবতে হবে।’ ডাচদের রক্ষণের আরেক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ভার্জিল ফন ডাইক, ‘এটা মেসি বনাম আমার কিংবা নেদারল্যান্ডসের নয়, লড়াইটা নেদারল্যান্ডস বনাম আর্জেন্টিনার।’ মেসিকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দুশ্চিন্তা নেই। কিন্তু আর্জেন্টিনা ম্যাচে কী করতে পারে সেটা নিয়ে সতর্ক। তারা অসাধারণ খেলোয়াড়দের নিয়ে দারুণ একটি দল। ম্যাচের সব বিভাগে আমাদের ভালো করতে হবে।’  

মেসিকে ঠেকাতে তো শুধু রক্ষণ নয়, প্রস্তুত থাকতে হবে গোলকিপারকেও। চার ম্যাচে প্রতিপক্ষের ১৭টি শটে মাত্র দুইবার জালে বল ঢুকতে দেওয়া ডাচ কিপার আন্দ্রিয়াস নোপার্ট সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ীকে নিয়ে একবাক্যে বললেন, ‘সে আমাদের মতোই একজন, সেও একজন মানুষ।’

মেসির ভালো করে জানা, তার প্রতিপক্ষরা তাকে থামাতে পারলেই জিতে যাবে এমন মন্ত্রে বিশ্বাসী। তারপরও চার ম্যাচে তিন গোল করে ফেলেছেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। শেষ ষোলোতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম গোল তো ছিল চোখ ধাঁধানো। পোল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস না করলে চার ম্যাচেই স্কোরশিটে থাকতো তার নাম। এবার ডাচ দুর্গ ভাঙার মিশন ৩৫ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের সামনে।

এই অভিযানে মেসি সমর্থন পাবেন জুলিয়ান আলভারেজের কাছ থেকে। ইনজুরিতে ধুঁকতে থাকা লাউতারো মার্তিনেজের জায়গায় নেমে পোল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গোল করে নজর কেড়েছেন তিনি। চতুর্থ আর্জেন্টাইন হিসেবে বিশ্বমঞ্চে প্রথম তিন ম্যাচে গোল করে গুইলেরমো স্তাবিল, ওরেস্তে কোরবাত্তা ও হার্নান ক্রেসপোকে ছোঁয়ার সুযোগ তার সামনে। এই ম্যাচে মূল একাদশে থেকে গোল করলে ১৯৭০ সালে পেরুর টিওফিলো কুবিলাসের পর সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম তিন বিশ্বকাপে গোলের রেকর্ড গড়বেন ২২ বছর ও ৩১২ দিন বয়সী ফরোয়ার্ড।

শোনা যাচ্ছে, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াকে এই ম্যাচে খেলাবেন স্কালোনি। রদ্রিগো ডি পলও ফিট। এই দুজনকে একাদশে পেলে আর্জেন্টিনার মাঝমাঠও ফিরে পাবে ছন্দ। প্রতিপক্ষকে নিয়ে ফরোয়ার্ড ম্যাক অ্যালিস্টার বললেন, ‘তারা ভালো দল। আমরা তাদের ম্যাচ দেখেছি এবং খেলা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা সেরা খেলোয়াড়রা দলে আছে। তবে আমরা সেদিকে মন দিচ্ছি না, আমরা খেলতে চাই নিজেদের খেলা।’

সব মিলিয়ে দুই দলের দেখা হয়েছে ৯ বার, ৪-৩ এ এগিয়ে ডাচরা। বিশ্বকাপে তো তারা চেনা প্রতিদ্বন্দ্বী, এনিয়ে ষষ্ঠবার মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল, যার শুরু ১৯৭৪ সালে। গ্রুপ ম্যাচে ৪-০ গোলে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। চার বছর পরের বিশ্বকাপ ফাইনালে ডাচদের হারিয়ে প্রথম বিশ্বকাপ জেতে তারা। আর ৯৮-এর কোয়ার্টার ফাইনালে ২-১ গোলে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় আলবিসেলেস্তেদের। এরপর বিশ্বমঞ্চে শেষ দুইবারের দেখায় নির্ধারিত সময় হয়েছে ড্র। ২০০৬ সালে গ্রুপ পর্বে গোলশূন্য ড্র হয়। ২০১৪-তে গোলশূন্য নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় শেষে পেনাল্টিতে ৪-২ গোলে জেতে আলবিসেলেস্তেরা। এবারের ফল কোনদিকে গড়ায় সেটাই দেখার অপেক্ষা।