ক্যাম্পাস

খেলার মাঝেই দর্শকের প্রবেশ, নিরাপত্তার একটি বড় প্রশ্ন নয় কি?

বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু হলেও একসময় বেশ সাড়া ফেলেছিল ফুটবল। তখন আবাহনী মোহামেডান ম্যাচ মানে চরম উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠার একটি স্বাভাবিক চিত্র।

কিন্তু বিশ শতকে এসে আমদের জনপ্রিয় খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রিকেট। যেখানে রয়েছে আমাদের অসীম ভালোবাসা, আবেগ, অনুভূতি ও অনুপ্রেরণার গল্প। যেন বাংলাদেশ হারলে লজ্জায় লুকায়িত হয় আমাদের মুখগুলো। আর জিতলে আনন্দ মিছিল করতে দেখা যায় বাংলার পথে-ঘাটে। আর হবেই বা না কেন, বাংলাদেশ সম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটে যেভাবে উন্নতি করছিল তা চোখে পড়ার মতো। ক্রিকেট বাংলাদেশকে চিনিয়ে দিয়েছে বিশ্ববাসীর কাছে। কিন্তু সম্প্রতিক সময়ে খেলা চলাকালীন সময়ে দর্শকের মাঠে প্রবেশের দৃশ্য চোখে পড়ছে। কেন ঘটছে এমন দৃশ্য?

সাধারণত নিরাপত্তা ও খেলা নির্বিঘ্নে চলার লক্ষে দর্শকের মাঠে প্রবেশের অনুমতি নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় দেখা মিলছে, নিরাপত্তা কর্মীদের ফাঁকি দিয়ে ম্যাচ চলাকালীন সময়ে মাঠে প্রবেশের বিস্ময়কর দৃশ্য। মিরপুরে শেরে-বাংলা স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে গ্যালারি থেকে লোহার গ্রিল পেরিয়ে মাঠে ঢুকে পড়লেন এক দর্শক। দৌড়ে এসেই বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের পায়ে লুটিয়ে পড়েন ওই দর্শক। এতে কিছু সময়ের জন্য খেলা বন্ধ থাকে। তবে নিরাপত্তাকর্মীরা দ্রুতই তাকে স্টেডিয়ামের বাইরে নিয়ে যায়।

এর আগে গত ২০ নভেম্বর ২০২১ সালে বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তানের মধ্যকার টি২০ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে খেলার মাঝে মাঠে প্রবেশ করে জৈব সুরক্ষা বলয়ই ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলেছেন পাগলাটে এক দর্শক। পাকিস্তানের ইনিংসে ১৩ ওভার পর নর্দার্ন গ্যালারি থেকে কাঁটা তারের বেড়া ডিঙিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন এক দর্শক। ৭ জন মাঠ কর্মীকে ফাঁকি দিয়ে দৌড়ে ছুটে যান মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে। মোস্তাফিজের পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়েন তিনি। তার মাথায় স্পর্শ করতে দেখা যায় মোস্তাফিজকে। পরে নিরাপত্তাকর্মীরা মাঠে প্রবেশ করে তাকে ধরে বের করে নিয়ে যান। এ সময় দুহাত উঁচিয়ে বিজয়ের ভঙ্গি করতে দেখা যায় ওই যুবককে।

এই ঘটনার পর মাঠে থাকা ক্রিকেটার ও ম্যাচ অফিসিয়ালদের করতে হয়েছিল বাড়তি এক দফা কোভিড-১৯ পরীক্ষা। শুধু যে তারা নিরাপত্তা বলয় ভেঙেছে তা নয়, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি করছে। মিরপুর স্টেডিয়ামের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন ছিল। এর আগেও অসংখ্যবার গ্যালারি থেকে দর্শক মাঠে ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে।

দর্শকের এমন আচরণ আমরা দেশের মানুষ ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখলেও বিদেশিদের কাছে তা নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি বিশেষ ঝুঁকি হয়ে দাড়াচ্ছে। বরাবর এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রশ্নবৃদ্ধ করে তুলছে নিরাপত্তা ইস্যুকে। ভবিষ্যতে কোনো দেশ বাংলাদেশ সফরে আসার জন্য নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা স্বাভাবিক নয় কি?

এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে অন্য কেউ এমন কাজ করতে সাহস না করে। তা না হলে একজনকে দেখে দশজন শিখবে এবং যখন দেখবে তাদের বিচারে আওতায় আনা হচ্ছে না তখন অন্যরাও এমন কাণ্ড ঘটাবেই। তাই এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করে দ্রুত কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আর তাহলেই বাংলাদেশ হবে বিশ্ব ক্রিকেটে বিশেষ নিরাপত্তার এক উজ্জ্বলতম দেশ।

লেখক: শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ ১ম বর্ষ, ফেনী সরকারি কলেজ, ফেনী