সারা বাংলা

ভুল প্রার্থীতে রসিক নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবি

সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি গত তিন যুগেরও অধিক সময় রংপুরে, বিশেষ করে মহানগরের রাজনীতিতে নিজেদের শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। সম্প্রতি রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে দলের প্রার্থীর বড় বিজয় এ কথার সাক্ষ্য দিচ্ছে। বিপরীতে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়ার পরাজয়ের চেয়েও প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচনে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া নিয়ে। নগরবাসীসহ আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও এই ফলে বিস্মিত। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতাসীন দলের ভুল প্রার্থী নির্বাচন এবং মাঠ পর্যায়ে নির্বাচন নিয়ে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় ডালিয়ার শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। 

সদ্য সমাপ্ত রসিক নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে আ. লীগ সমর্থিত প্রার্থী ভোট না পাওয়ায় জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। যা রংপুরের ভোটের রাজনীতিতে বিরল দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন অনেকে। এমনকি আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী তার নিজ কেন্দ্রে ভোটে তৃতীয় হয়েছেন।

সচেতন নগরবাসী বলছেন, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি। তাকে কখনো জনগণের পাশে দেখা যায়নি। নির্বাচনের আগে তার দৃশ্যমান কোনও কর্মকাণ্ড ছিল না। এছাড়া দলের নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের অনেকেই তাকে ভোট না দেওয়ায় শোচনীয় পরাজয় হয়েছে।  উল্লেখ্য গত ২০১৮ সালের রসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অর্ধেকেরও কম ভোট পেয়েছেন ডালিয়া। তাহলে বাকি ভোট গেল কোথায় এমন প্রশ্ন অনেকের।

মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশ কয়েকটি কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। তারা মনে করছেন, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় নাম না থাকার পরেও ডালিয়াকে মনোনীত করা, তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা, প্রার্থীর সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের সমন্বয় না থাকা, নির্বাচনী প্রচারণায় সময় স্বল্পতা, ওয়ার্ড পর্যায়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়সারা কার্যক্রম এবং অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দায়সারা অংশগ্রহণ এই পরাজয়ের মূলে কাজ করেছে। 

এ প্রসঙ্গে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি বলেন, আমরা দিনরাত মাঠে কাজ করেছি। শুধু দলীয় মার্কা হলেই হবে না, প্রার্থীর ওপর ভোট নির্ভর করে। মার্কা অবশ্যই লাগবে, তবে মার্কার সঙ্গে প্রয়োজন প্রার্থীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা। নেতাকর্মীদের নিয়ে আমরা নির্বাচনী মাঠে কাজ করার পরেও কেন তিনি (ডালিয়া) এত কম ভোট পেলেন, বুঝতে পারছি না।

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল বলেন, মনোনয়ন দাখিলের আগের দিন আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়। এরপর স্বল্প সময়ে সব সাধারণ ভোটারের কাছে প্রার্থীর যাওয়া সম্ভব হয়নি। দলের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে কাজ করলেও সময় স্বল্পতার কারণে এমনটা হয়েছে বলে আমি মনে করি।

নির্বাচনের ফলে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফার ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেননি কোনো প্রার্থী। মেয়র পদে নয়জন প্রার্থীর মধ্যে চতুর্থ হয়েছেন নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। বেসরকারি ফলে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট। ডালিয়া পেয়েছেন ২২ হাজার ৩০৬ ভোট।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৮ জুন পৌরসভা থেকে ১৮টি ওয়ার্ড বর্ধিত করে ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। এরপর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর দ্বিতীয় নির্বাচনে ঝন্টুকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।