জাতীয়

বিমানের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তখন প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল অ্যারো বাংলা ইন্টারন্যাশনাল। পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নাম দেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই প্রখ্যাত শিল্পী কামরুল হাসান বিমানের লোগো ডিজাইন করেন।

সংস্থাটি ঢাকায় অবস্থিত হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করে। চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেও এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক রুটের পাশপাশি অভ্যন্তরীণ রুটেও যাত্রী এবং মালামাল পরিবহন করে। বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সেবা চুক্তি রয়েছে। বর্তমানে ১৬টি দেশে এটি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিমানের প্রধান কার্যালয়ের নাম বলাকা ভবন, যেটি ঢাকার কুর্মিটোলায় অবস্থিত। বিমানের বহরে আছে ছয়টি ব্রান্ড নিউ বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার এবং তিনটি ড্যাশ ৮-৪০০ সহ মোট ২১টি উড়োজাহাজ।

রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ নম্বর ১২৬ অনুসারে ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স গঠিত হয়। এ দিন ভারত থেকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য নিয়ে আসা ম্যাকডনেল ডগলাস ডিসি-৩ বিমান নিয়ে জাতির বাহন হিসেবে বাংলাদেশ বিমান যাত্রা শুরু করে। এরপর, ১৯৭২ সালের ৭ মার্চ চট্টগ্রাম ও সিলেটে এবং ৯ মার্চ যশোরে একটি ফ্লাইটের মাধ্যমে আকাশে উড়ে বিমান। এভাবেই শুরু হয়েছিল বিমানের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের তিন দিন আগে অর্থাৎ ৪ মার্চ তারিখে ১৭৯ জন যাত্রীকে লন্ডন থেকে ঢাকায় নিয়ে আসার মাধ্যমে বিমানের প্রথম আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সম্পন্ন হয়।

২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী বিমান ২৫টি গন্তব্যে সেবা প্রদান করছে, যার মধ্যে ১৭টি আন্তর্জাতিক গন্তব্য। ভবিষ্যতে আরও ৪৩টি দেশে গন্তব্য সম্প্রসারণের জন্য বিমান বাংলাদেশের পরিসেবা চুক্তি রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৬টি শহরে ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাদের সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।

১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ১৯৯৬ পর্যন্ত দেশে উড়োজাহাজ খাতের একক সংস্থা হিসেবে ব্যবসা চালায়। বিভিন্ন সময়ে উড়োজাহাজ বহর ও গন্তব্য বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও দুর্নীতি আর অদক্ষতার জন্য বিমান বার বার পিছিয়ে পড়ে। বাংলাদেশ বিমান তার সুসময়ে সর্বোচ্চ ২৯টি গন্তব্যে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করত যা পশ্চিমে নিউইয়র্ক শহর থেকে পূর্বে টোকিও পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ২০০৭ সালের আগ পর্যন্ত বিমান পুরোপুরি একটি সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা ছিল। সে বছরের জুলাই মাসের ২৯ তারিখ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রুপান্তরিত হয় সংস্থাটি।

কোম্পানিতে রূপান্তরিত হওয়ার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা কমিয়ে আনার পাশাপাশি উড়োজাহাজ বহর আধুনিকায়নের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ২০০৮ সালে বিমান সংস্থাটি বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে দশটি বিকল্পের পাশাপাশি নতুন ১০টি বিমানের জন্য চুক্তি করে। নতুন উড়োজাহাজ হাতে পাওয়ার পর বিমান তার গন্তব্যের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ফ্লাইট চলাকালীন ইন্টারনেট, ওয়াই-ফাই, মোবাইল যোগাযোগ এবং টেলিভিশন দেখাসহ অন্যান্য যাত্রী সুবিধা উন্নত করেছে।

ইউরোপিয়ান এভিয়েশন সেফটি এজেন্সি নিরাপদ সংস্থা হিসেবে বিমান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এছাড়া, আইএটিএ-এর নিরাপত্তা নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় বিমান। এরপর বিমান, এশিয়া এবং ইউরোপে তাদের পূর্ববর্তী কয়েকটি গন্তব্যে পুনরায় ফ্লাইট চালু করে। সাম্প্রতিক সময়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাদের নতুন পরিচালনা দলের অধীনে অন-টাইম ফ্লাইটের কর্মক্ষমতায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে।

এদিকে, বিমানের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে যাত্রীসেবার আধুনিকায়নে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নতুন আঙ্গিকে মোবাইল অ্যাপস ও লয়্যালটি ক্লাবের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এ অ্যাপসের মাধ্যমে বিমানের যাত্রীরা টিকিট কেনার পাশাপাশি ফ্লাইট সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন ফ্লাইট স্ট্যাটাস, শিডিউল ইত্যাদি খুব সহজেই জানতে পারবেন। এছাড়া, লয়্যালটি ক্লাবের সদস্যরা নানা সুবিধা পাবেন।

গুগল প্লে-স্টোর অথবা অ্যাপল অ্যাপ-স্টোর থেকে যেকোনো স্মার্টফোনে Biman নামের অ্যাপটি ডাউনলোড করে যাত্রীরা নিজেই বিমানের সব গন্তব্যের টিকিট কিনতে পারবেন।  

অন্যদিকে, বিমান লয়্যালটি ক্লাবের মাধ্যমে যাত্রীরা বিমানের বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণের মাধ্যমে যে মাইলেজ পাবেন তা ব্যবহার করে রিওয়ার্ড টিকিট, সিট আপগ্রেডেশন, বাড়তি ব্যাগেজ সুবিধাসহ লাউঞ্জ ব্যবহারের সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। গোল্ড ও সিলভার স্তরের সদস্যরা বিমানের একই ফ্লাইটে ভ্রমণকারী একজন সফরসঙ্গীসহ লাউঞ্জ ব্যবহার ও বিভিন্ন সুবিধা পাবেন বলে বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।