টাঙ্গাইলে গত কয়েকদিন ধরেই বাড়ছে শীতের তীব্রতা। এতে করে ভোগান্তি বেড়েছে সাধারণ খেটে খাওয়া নিন্ম আয়ের মানুষজনের। এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে সরিষা ও বোরো মৌসুমের বীজতলার ক্ষতির আশংকা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। তবে এই শীতে ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন যাবত টাঙ্গাইলে উত্তরের বাতাস বইছে। আরও ৪/৫ দিন এই বাতাস থাকতে পারে। বুধবার (৪ জানুয়ারি) টাঙ্গাইলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সরেজমিনে টাঙ্গাইল পৌরসভার আকুর টাকুর পাড়া, কাগমারা, এনায়েতপুর, বাঘিল ইউনিয়নের দুরিয়াবাড়ী, ধরেরবাড়ী, টাবলাপাড়া, যুগনী, দাইন্যা ইউনিয়নের বাউসা, বাইমাইল ও পোড়াবাড়ী ইউনিয়নের খাড়জানাসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি এলাকাতেই উত্তরের তীব্র ঠান্ডা বাতাস বইছে। শীতের কারণে অনেকেই ঘর থেকে বাইরে যাচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ গরম পোশাক পড়ে বাড়ি থেকে বাইরে গেলেও তাদের পোহাতে হচ্ছে কষ্ট। এছাড়া ছিন্নমূল অনেক মানুষকেই খড় ও কাঠে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
টাঙ্গাইল জেলা সদরের বস্তি এলাকার বাসিন্দা কাশেম মিয়া বলেন, ‘শীতের কারণে সকালে রিকশা নিয়ে বের হয়নি। জমানো টাকা দিয়ে বাজার করে খেতে হচ্ছে। অন্য বছর এই মৌসুমে শীত বস্ত্র পেলেও এ বছর কেউ কোনো সহযোগিতা করেননি।’
রাশেদা বেগম বলেন, ‘আমরা অনেকেই ঠান্ডা থেকে বাঁচতে দিনের বেলায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছি। শীতের কারণে আমাদের এই বস্তির অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা দরকার।’
এনায়েতপুর গ্রামের আনিসুর রহমান নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমি বোরো ধানের বীজতলা করেছি। কিন্তু শীতের কারণে তেমন ভাল হচ্ছে না। এই এলাকার কৃষি অফিসার পরিবর্তন হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর ধরে কৃষি অফিসারের কোনো পরামর্শ আমরা পাই না। এর ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’
দুরিয়াবাড়ী গ্রামের মো. শাহিন মিয়া নামের অপর এক কৃষক বলেন, ‘আমি এবছর দেড় বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। গাছে ফুল ধরেছে। তবে কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাসের কারণে গাছের ফুল ঝড়ে যেতে পারে। এতে আমার অনেক ক্ষতি হবে।’
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আহসানুল বাসার বলেন, ‘বর্তমানে টাঙ্গাইলে যে তাপমাত্রা আছে, এতে ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না। বরং সরিষা ও গমের উপকার হবে। কয়েক দিন রোদ উঠলে সবজির জন্যও উপকার হবে। তবে টানা ১০ দিন এই অবস্থা থাকলে বোরো বীজতলা ‘কোল্ড ইনজুরিতে’ পড়তে পারে।’
টাঙ্গাইল আবহাওয়া অধিদপ্তরের ইনচার্জ জামাল উদ্দিন বলেন, ‘টাঙ্গাইলে যে বাতাস বইছে এটাকে শৈত প্রবাহ বলা যায় না। ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সেটাকে শৈত প্রবাহ বলে। দিনের বেলায় সূর্যের আলো না দেখার কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে না। তাপমাত্রা না বাড়ার কারণে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে।’
টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, ‘ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও আরও দুই হাজার কম্বল দুই একদিনের মধ্যে পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে বিতরণ করা হবে।’ তীব্র শীতে জনপ্রতিনিধিদের শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৬০ হাজার কম্বল ১২ উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে পাঁচ হাজার কম্বল ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্রুত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ও জনসাধারণের মাঝে এসব কম্বল বিতরণ করা হবে।’