সারা বাংলা

উত্তরে জেঁকে বসেছে শীত, হাসপাতালে রোগীদের ভিড়

গত কয়েক দিন ধরে উত্তরের জেলাগুলোতে তীব্র শীত জেঁকে বসেছে। এর প্রভাব পড়েছে জনস্বাস্থ্যের ওপর।

গত এক সপ্তাহে রংপুর মেডিক‌্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডসহ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন তিন শতাধিক। রোগীর চাপ বেশি থাকায় সঠিক চিকিৎসা সেবা পাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্নতা বাড়ছে স্বজনদের।

এছাড়া, শীত থেকে রক্ষা পেতে আগুন পোহানোর প্রবণতাও বেড়েছে এ অঞ্চলে কয়েকগুণ। এতে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।

চলতি শীত মৌসুমে বুধবার (৪ জানুয়ারি) পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে রংপুর মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে শরীরে সর্বোচ্চ প্রায় ৪৫ ভাগ দগ্ধ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন প্রায় শতাধিক রোগী। এদের মধ্যে মারা গেছেন ৩ জন। আর ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে ৫ জন দগ্ধ রোগীকে। বাকিরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. শরিফুল হাসান অগ্নিদগ্ধ রোগীর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

রমেক পরিচালক আরও বলেন, শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশু ওয়ার্ডসহ বার্ন ইউনিটেও অগ্নিদগ্ধ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। খড়কুটো না জ্বালিয়ে গরম কাপড় পরে সবাইকে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে আগুন পোহাতে গিয়ে প্রাণহানীর সংখ্যা কমবে।

রমেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি শয্যায় একাধিক শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। শয্যা না পেয়ে মেঝেতে বিছানা পেতে রাখা হয়েছে অনেক শিশুকে। প্রতি শয্যায় মায়েরা সন্তান নিয়ে বসে আছেন। কোনো শয্যায় দুজন, কোথাও তিন জন। অনেকে সন্তানের চিকিৎসা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওয়ার্ডের বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন। শিশুর সঙ্গে অভিভাবকের এমন ভিড়ে নার্স ও চিকিৎসকরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।

হাসপাতালের শিশু বিভাগের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স আরজু আক্তার আখি জানান, এবার ঠাণ্ডাজনিত ডায়রিয়ায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। চলতি মাসে প্রতিদিন কম বেশি ৫০-৬০টি শিশু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে এই ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছে।

শিশু বিভাগ সূত্র জানায়, দুটি শিশু ওয়ার্ডে গত দুই সপ্তাহ ধরে শিশু রোগী ভর্তির সংখ্যা শয্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। যাদের বয়স একদিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত। শীতের আগে এই ওয়ার্ডে এভাবে এত রোগী থাকতে দেখা যায়নি বলে চিকিৎসক ও নার্সরা জানান। শীত যতই বাড়ছে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাও বাড়ছে।

এদিকে, শুধু রংপুর মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালেই এমন চিত্র নয়, উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও গাদাগাদি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গুরুতর অসুস্থ শিশু ও বৃদ্ধদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রংপুর মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে।

রমেক ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার তাহমিনা আক্তার বলেন, প্রতিদিন অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তি হচ্ছে। এর প্রায় সবগুলোই শীতজনিত কারণে আগুন পোহানোসহ অন্যান্য কারণে দগ্ধ। এখন ওয়ার্ডটিতে ৩৫ জন রোগী ভর্তি আছে।

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থেকে অগ্নিদগ্ধ ভাগ্নিকে চিকিৎসা নিতে আসা নাজিনুর রহমান জানান, পাঁচ দিন আগে সকালে বাড়ির বাইরে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয় তার ১১ বছর বয়সী ভাগ্নি।

এদিকে, ঠিক মতো সূর্যের দেখা না মেলায় নগরীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে উত্তরাঞ্চলে শীতের এই চিত্র বিরাজমান।

তীব্র শীতে বৃদ্ধ ও শিশুসহ বিভিন্ন বয়সীরা জ্বর, সর্দি, কাশিসহ নানা রোগে ভুগছেন। শহরের তুলনায় গ্রামে শীতের প্রকোপ বেশি। গ্রামের শিশু-বৃদ্ধরা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডিসেম্বরের শেষে উত্তরাঞ্চলে মৃদু শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়েছে। এর সাথে শীতের তীব্রতাও খুব বেড়েছে। এই অঞ্চলে গত তিন চার দিন থেকে তাপমাত্রা ১০-১১ ডিগ্রির মধ্যে ওঠা-নামা করছে। দিনে ও রাতের তাপমাত্রা কাছাকাছি হওয়ায় এ অঞ্চলে ঘনকুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়াসহ শৈত্য প্রবাহ আরও তীব্র হতে পারে। তবে এই তাপমাত্রা আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে কিছুটা উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।