ক্যাম্পাস

দৃষ্টিনন্দন মণ্ডপ তৈরি করে প্রশংসায় ভাসছেন জবি ছাত্রলীগকর্মী সেতু

করোনা মহামারি কাটিয়ে দুই বছর পর আবারও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) প্রাণবন্তভাবে সরস্বতী পূজা উদযাপন করা হয়েছে। এই পূজায় নিজ প্রতিভায় দৃষ্টিনন্দন মণ্ডপ তৈরি করে সকলের নজর কেড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকর্মী সেতু রায়।

মেধা আর শৈল্পিক কলাকৌশলের সমন্বয়ে স্বল্প সময়ে বেশ কয়েকটি বিভাগের পূজার মণ্ডপ তৈরি করে দেন সেতু। আর এই কাজের জন্য কুড়িয়েছেন প্রশংসা ও শুভেচ্ছা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইনের অনুসারী এই ছাত্রলীগকর্মী আগে কখনো মণ্ডপ কিংবা স্টেজ তৈরি না করলেও অভিষেকেই সাজানো গুছানো কাজের মাধ্যমে পূজার সার্বিক মোহে যোগ করেছেন ভিন্ন মাত্রা। পরিসংখ্যান বিভাগের এই শিক্ষার্থী চারুকলা বিভাগে পড়ুয়া বন্ধুবান্ধবদের উৎসাহেই নিজ বিভাগের পূজার প্রতিমার মণ্ডপ তৈরি ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব নেন। পূজার মাত্র তিন দিন আগে (২৩ জানুয়ারি) দুইজন বন্ধু রানা ও সাগরকে নিয়ে কাজ শুরু করেন সেতু। ২৩, ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি অনেক পরিশ্রম করে, এমনকি রাতে না ঘুমিয়েও কাজ চালিয়ে যান। আর এর মাধ্যমেই মন্দিরের ফ্রেম বানানো, ককশিট কাটা, ফুলের আল্পনা তৈরি থেকে শুরু করে স্টেজ ও মণ্ডপ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করেন তারা।

অন্যদিকে একদম শেষ মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের পূজার মণ্ডপ ও সংশ্লিষ্ট কাজ করার দায়িত্ব পান তিনি। তার সহপাঠীদেরকে সঙ্গে নিয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় সেই কাজটিও পূজার আগেই সম্পন্ন করেন। শুধু কাজ সমাপ্তিতেই ক্ষান্ত থাকেনি সেতু। দৃষ্টিনন্দন কাজ করায় প্রশংসা কুড়িয়েছেন পরিসংখ্যান বিভাগ ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয়েরই। তবে এসবের পেছনে সেতু তার সহপাঠীদের ভূমিকার কথা বলছেন।

সেতু রায় বলেন, নিজ বিভাগের মণ্ডপ তৈরি ও সংশ্লিষ্ট সবগুলো কাজের দায়িত্ব সাহস করেই আমি নিয়েছিলাম। এক্ষেত্রে আমার দুই বন্ধু রানা ও সাগরকে নিয়ে কাজ শুরু করি। ৩-৪ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা কাজ সম্পন্ন করি। ২৫ তারিখ সারারাত ধরে কাজ করার পর ২৬ তারিখ সকালে প্রথম প্রহরে আমি আমার কাজটা পূজার দায়িত্বরত ব্যক্তি (পার্থ সরকার, অমিত পাল, ইমন মিত্র, শুভংকর সরকার, বাবুরাম সিংহ, তাপস রায়) এদের হাতে বুঝিয়ে দিয়েছি। সারাদিন দর্শনার্থীদের পরিসংখ্যান বিভাগের মন্দিরের প্রতি উৎসাহ, উদ্দীপনা, মুগ্ধতা, স্যার ও সংশ্লিষ্টদের আমাদের আয়োজিত মন্দির সম্পর্কে প্রশংসনীয় মন্তব্য আমার হৃদয় কেড়েছে। এটিই যেন আমাদের কাজের স্বার্থকতা। এছাড়াও বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে আমাদের মন্দিরের ছবি দেখে শুধু সেটি দেখার উদ্দেশ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

তিনি বলেন, ২৬ তারিখ পূজা হলেও তার একদম আগ-মুহূর্তে বাংলা বিভাগের মণ্ডপ তৈরির দায়িত্ব পাই। সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় সেই কাজটিও সম্পন্ন করি। প্রথমবারের মতো কাজ করে এত স্বল্প সময়ে সব গুছিয়ে নিতে পারব ভাবিনি। কাজ করার সময় এই কয়দিন আমরা ভাত না খেয়ে রুটি, কলা আর অনেক ডাব খেতাম। কারণ ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম আর পটাশিয়াম থাকে। কারণ ভাত খেলে ঘুম পায় আর এই কাজগুলো নিরিবিলি ছাড়া করা যায় না তাই রাতে কাজ করতে হয়। মন্দিরের ফ্রেম বানানো, ককশিট কাটা, ফুলের আলপনা তৈরি থেকে সব আমরা নিজেই করেছি। যেখানে চারুকলার বন্ধু নাইম আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। নাইমও রাতে ক্যাম্পাসে ছিল কারণ চারুকলার মন্দির বা ইভেন্ট ওরা নিজেই করেছে। তার সুবাদে আমি প্রতি মুহূর্তে নাইমকে কাছে পেয়েছি। ২৫ তারিখ রাতে সারারাত করার পর ২৬ তারিখ সকালে প্রথম প্রহরে আমি আমার কাজটা পূজার দায়িত্বরত ব্যক্তিদের হাতে বুঝিয়ে দিয়েছি।

এই ছাত্রলীগকর্মী বলেন, আমার এই কাজে উৎসাহ, উদ্দীপনা, মানসিক সাপোর্ট দেয়ার একমাত্র ব্যক্তি আমার অহংকার ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন আদর্শের প্রতীক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইন ভাই আমাকে ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়েছেন। এছাড়াও নরসিংদী-৩ আসনের সাবেক এমপি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম মোল্লা স্যার আমাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আরো অনেক মানুষের অভিনন্দন ও সাপোর্ট আমাকে সামনের দিকে আরো ভালো কিছু করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আমি সবার সমর্থন পেলে সামনে এমন কাজে আরও এগিয়ে যাব।