সারা বাংলা

খড়ের ছাউনির মাটির ঘর

সময় বদলে গেছে। এখন গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন। ডিজিটাল এ সময়ে ঘরবাড়ির চেহারাও পাল্টে গেছে। গ্রামে কাঁচাঘর রূপান্তর হয়েছে পাকা ঘরে। এমন বদলে যাওয়া সময়েও দিনাজপুরের হিলিতে গ্রাম-বাংলার পুরনো ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ‘খড়ের ছাউনির মাটির ঘর’। 

দিনাজপুরে ২০০০ সালের আগে গ্রাম, এমন কি শহরেও চোখে পড়তো খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘর। কালের স্রোতে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় এসব বসবাসকৃত স্থাপনা হারিয়ে গেছে।

হিলির গোহাড়ার আদিবাসী পাড়ায় গিয়ে চোখে পড়ে বীরেন হাস্তার ছোট একটি মাটির বাড়ি। বাড়িতে দুইটি ঘর। একটি রান্না ও গোয়াল ঘর এবং প্রাচীরটিও মাটির তৈরি। তাতে ছাউনি হিসেবে আছে খড়। মাটি এবং খড়ের বাড়িটি তৈরি হয়েছে প্রায় ২৫ বছর আগে। দুই বছর পর পর ঘরের ছাউনি পরিবর্তন করতে হয়। 

তারা জানালেন, মাটি আর খড়ের ছাউনি ঘরের অনেক উপকার আছে। ঝড়-বৃষ্টি হলে তেমন বোঝা যায় না, এতে ভয়ও লাগে কম। এছাড়াও খড়ের ছাউনির এই মাটির ঘর আধুনিক যুগের এসি ঘরের মতো। এঘর গরমকালে ঠাণ্ডা এবং শীতকালে গরম থাকে। তবে মাটির ঘর তৈরিতে খরচের পরিমাণও অনেক কম।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় এসব ঘর-বাড়ি আর চোখে পড়ে না। মানুষ এখন ইট বালু সিমেন্ট টিন আর লোহা দিয়ে তৈরি বাড়ি ব্যবহার করে। তাতে আবার আধুনিক যন্ত্র এসি লাগিয়ে বসবাস করছেন।

হিলি সাতনী গ্রামের ৮০ বছর বয়সী রোস্তম আলী বলেন, আমাদের সময় ইটের দালান বাড়ি খুবই কম ছিলো। মাটির বাড়িতেই আমরা বসবাস করতাম। তখন দোতলা বাড়িও ছিলো মাটির। আমাদের একটা মাটির দোতলা ছিলো, তা বাপ-দাদার আমলের। 

বীরেন হাস্তা বলেন, অভাবের কারণে আজও মাটি আর খড়ের ছাউনি ঘরে বসবাস করে আসছি। পাকা বাড়ি করতে অনেক টাকা পয়সা লাগে। তবে ছোট বেলা থেকে এই মাটির ঘরে বাস করে আসছি। এই ঘর আমার কাছে বড়লোকের এসি ঘরের মতো লাগে। শীতকালে গরম লাগে আর গরমকালে ঠাণ্ডা। ঝড়-বৃষ্টিতেও তেমন কোন অসুবিধা হয় না, সব মিলে মাটির ঘরে সুখে-শান্তিতে আছি।