ক্যাম্পাস

বসন্ত এসে গেছে!

শীত আছে, আবার শীত নেই। এ সময়ে আবহাওয়ার মেজাজ বোঝা বেশ মুশকিল! ধূসর শীতের আড়মোড়া ভেঙে প্রকৃতিতে উঁকি দিচ্ছে ঋতুরাজ। শীতের হিমেল হাওয়া যেন বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে, আসছে বসন্ত। সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) আঙিনায়ও এই দৃশ্য চলমান। শীতের রুক্ষতাকে হার মানিয়ে যৌবনপ্রাপ্ত হয়ে উঠছে ৩২ একরের এই ক্যাম্পাস।

গ্রাম ও শহরের মিশেলে তৈরি এই প্রতিষ্ঠানে বছরের সকল ঋতুর পালাবদলই বেশ টের পাওয়া যায়। প্রতিটি ঋতুতেই ক্যাম্পাস সাজে একেক রঙঢঙে। বর্ষায় নবযৌবনা, গ্রীষ্মে নিস্তব্ধ। শরৎ আসলেই দেখা মেলে কাশবন আর উলুফুলের। শুভ্রতায় নজর কাড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। যেন সাদার সাগর! আবার শীতে কুয়াশার চাদর মুড়ে জবুথবু হয়ে বসে থাকা বৃদ্ধের ন্যায়। আর বসন্ত যেন তার রূপের পসরা নিয়ে হাজির হয় গবির দুয়ারে।

শীতের ভয়ে জবুথবু হয়েছিল যে ক্যাম্পাস, তার জীর্ণতা যেন মিলিয়ে যাচ্ছে দূরে। ক্যাম্পাসের প্রাণকেন্দ্র বাদামতলা হয়েছে পাতাশূন্য। তার সামনের রাস্তা যেন লালচে পাতার বাহারি লালগালিচা হয়ে আছে। গাছে গাছে নতুন কুড়ি আর ফুলের বাগানে রঙিন নানা ফুলের দেখা মিলতে শুরু করেছে। যেন পুরাতনেরা জায়গা করে দিয়ে যাচ্ছে নতুনদের জন্য।

আচমকা দমকা হাওয়া যেন বলে দিচ্ছে, ক্যাম্পাসে বসন্তের বেশি বাকি নেই। শীতের আলস্য ও অসাড়তাকে গা ঝাড়া দিয়ে এবার বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার পালা।

হরেক রকমের বাহারি ফুল প্রকৃতিতে রূপের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। মূল ফটক দিয়ে প্রবেশেই চোখ ধাঁধানো ফুলের বাগান, মাঠের কোণার আগুনজ্বলা পলাশ ফুল, বাদামতলায় গাছে গাছে নতুন পাতার কুড়ি, সব যেন জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তার। সময়ে অসময়ে বসন্ত দূত কোকিলের কুহু কুহু ডাক যেন বলে যায় ‘বসন্ত এসে গেছে।’

প্রকৃতির গর্ভে থাকা এই ক্যাম্পাসের দৃষ্টিনন্দন রূপ দেখে মুগ্ধ হবেন যেকোনো সৌন্দর্যপ্রেমী। সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি চলে শিক্ষার্থীদের কোলাহল। আড্ডা, গানের আসর, খেলাধুলায় মেতে থাকে গবির প্রাঙ্গন।

এ ক্যাম্পাসের যেদিকে চোখ যায়, মনে হয় প্রকৃতির ফুল-পাতা দিয়ে গড়া স্বর্গরাজ্য। ক্লাসের অবসরে কেউবা ছবি তোলে, আবার কেউ কেউ বাদামতলায় বসে নীরবে আস্বাদন করেন ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য। বিশেষ করে বিকেল কিংবা গোধূলি বেলায় যেন হলুদের ছটা পড়ে এ আঙ্গিনা জুড়ে।

হরেক রকম জাতের ফুল তাদের সৌরভে মাতিয়ে রেখেছে গবি ক্যাম্পাস। নজরকাড়া, নয়নাভিরাম সে সৌন্দর্য। এখানে হাঁটলে যেমন চোখ জুড়ায়, তেমন প্রাণ জুড়ায় সুবাসে। বাদামতলায় একাকী বসে গুনগুনিয়ে, ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে, বহে কিবা মৃদু বায়...’ গাচ্ছিলেন আফরা।

আইনের এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘ফুলের বাগান ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। শিক্ষার পরিবেশকেও সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে। ক্যাম্পাসের এই সবুজ রূপেই বেঁচে থাকার তাগিদ পাই প্রতিনিয়ত। আমরা সবুজকে নিয়েই বাঁচি, সবুজকে নিয়েই সাজি। ক্যাম্পাসের এই নয়ানাভিরাম প্রাঙ্গণ দেখতেই যেন বাড়ি থেকে রোজ ছুটে আসি। ক্লাসের শেষে বাদামতলায় এসে বসলে এই চোখ জুড়ানো দৃশ্য দেখলেই জীবনের সব ক্লান্তি ভুলে বাড়ি ফেরা যায়।’

লেখক: শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।