ফাগুনের মলাট

বইমেলায় ‘আজো দেহে বুলেটের দাগ’

নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বাঙালির জাতীয় জীবনে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে বড় ঘটনা আর নেই। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে হাজার বছরের শৃঙ্খল ও বন্দিদশা থেকে আমাদের মুক্তি মেলে। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধ, দীর্ঘ সংগ্রাম, নারীদের ইজ্জত ও ত্যাগ তিতিক্ষা ছিল আমাদের মুক্তির জন্য। সত্যিকারার্থে জীবন বাজি রেখে সম্মুখ যুদ্ধে যাঁপিয়ে পড়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের মধ্যে একদল হলো-‘গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা।’ বস্তুত, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গেরিলারাই মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

তেমনি একজন গেরিলাযোদ্ধা ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের বারাহিগোবিন্দ গ্রামের আবদুল হালিম। মুক্তিযুদ্ধের সময় হালিমের বয়স ২১।  জীবনের মায়া ত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। হালিমের বড় ভাই আবদুল মকিম একাত্তরে কুমিল্লা অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর একজন সংগঠক। ছোট ভাই আবুল খায়ের খালেদও যৌথ গেরিলা বাহিনী ফেনী অঞ্চলের সংগঠক। প্রায় জীবনের শেষ প্রান্তে ৭৩ বয়সে যুদ্ধদিনের কাহিনি নিয়ে তিনি লিখেছেন-‘আজও দেহে বুলেটের দাগ’ বইটি।

আবদুল হালিম মুক্তিযুদ্ধের সময় দাগনভূঞা রাজাপুর, জয়নারায়নপুর, পূর্ব জয়নারায়নপপুর, দিঘীর জান, দুই সতীনের দিঘী, কোরাইশমুন্সী, ফেনী সদরের পাঁছগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারাসহ বিভিন্ন এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

আবদুল হালিম ও তার বন্ধু আলী আরশাদ দাগনভূঞার রাজাপুরে রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে চরম নির্যাতনের শিকার হন। সেখানে পুরাতন বোর্ড অফিসের পেছনে নদীর পাড়ে গাছের সাথে বেঁধে গুলি চালায় রাজাকাররা। তার চোখের সামনে গুলিতে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটপট করতে প্রাণ হারান সহযোদ্ধা মাথিয়ারা গ্রামের আলী আরশাদ। আবদুল হালিমমের পিঠেও গুলি করা হয়, গুলি পিঠের চামড়া ভেদ করে মেরুদণ্ড   স্পর্শ করে একপাশ ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। অতিকষ্টে রক্ষা পান তিনি। এই বইয়ে সেসব দুঃসহ ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে বইটি নতুন প্রজন্মের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস স্পষ্ট হবে।

বইটি তথ্য অনুসন্ধান, সম্পাদনা ও অনুলিখন করেছেন সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী আসাদুজ্জামান দারা। প্রচ্ছদ এঁকেছেন গোপাল দাস। ৫৮ পৃষ্টার বইটির দাম রাখা হয়েছে ১৫০ টাকা। অমর একুশে বইমেলায় বইটি প্রকাশ করেছে সাহিত্যদেশ প্রকাশনী। স্টল নং -২৩৫-২৩৬।