দেহঘড়ি

চোখের রঙ স্বাস্থ্য সম্পর্কে যা বলে

চোখ শুধু মনের কথা বলে না, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্যও জানান দেয়। বিভিন্ন রোগের লক্ষণ চোখে প্রকাশ পায়, এটা আমরা প্রত্যেকেই জানি।

তবে অনেকেরই হয়তো এটা জানা নেই যে, চোখের প্রাকৃতিক রঙ তথা আইরিসের রঙ থেকেও স্বাস্থ্য ধারণা পাওয়া যায়। কালো বা বাদামীসহ নানা রঙের আইরিস দেখা যায় ব্যক্তিভেদে। চোখের রঙ প্রধানত জিনগত প্রভাবে নির্ধারিত হয়ে থাকে।

চোখ সুস্থ রাখা ও দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর উপায় থাকলেও, চোখ তথা আইরিসের রঙ পরিবর্তনের জন্য তেমন করণীয় কিছু নেই। গবেষকদের মতে, আইরিসের রঙ ব্যক্তির স্বাস্থ্য সম্পর্কে কিছু ধারণা দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, চোখের রঙের ভিত্তিতে ভয়ানক রোগ মেলানোমার ঝুঁকি সম্পর্কে অনুমান করা যায়। এখানে চোখের রঙ স্বাস্থ্য সম্পর্কে বলতে পারে এমন তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হলো।

* কালো চোখ: ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের ঝুঁকি কম

চোখের রঙ চোখের সার্বিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভালো ধারণা দিতে পারে। আইরিস যত কালো হবে ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের ঝুঁকি তত কম। ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হলো রেটিনা সংক্রান্ত সমস্যা। রেটিনার একটি অংশ হলো ম্যাকুলা, যা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সমস্যাটি হয়ে থাকে। এই রোগ স্থায়ী অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে অবস্থিত ওমনি আই সার্ভিসেসের সভাপতি ক্রিস্টোপার কুইন বলেন, কালো আইরিস সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বাধা দিতে পারে। অতিবেগুনি রশ্মি হলো ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের ঝুঁকিবর্ধক। অন্যদিকে হালকা রঙের আইরিসের মধ্য দিয়ে অতিরিক্ত আলো প্রবেশ করে রেটিনাল ডিজেনারেশনের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

* কালো চোখ: মেলানোমার ঝুঁকি কম

কালো রঙের আইরিস ইঙ্গিত দেয় যে, মেলানোমা নামক স্কিন ক্যানসারের ঝুঁকি কম। সবচেয়ে মারাত্মক স্কিন ক্যানসার হলো মেলানোমা। ক্যানসার এপিডেমিওলজি, বায়োমার্কারস অ্যান্ড প্রিভেনশনে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুদের নীল চোখের জিন ছিল তাদের ত্বকে আঁচিলের হার সেসব শিশুদের তুলনায় বেশি ছিল যাদের জিনটি ছিল না।উল্লেখ্য, শৈশবের আঁচিল সংখ্যার ভিত্তিতে বয়সকালে মেলানোমার ঝুঁকি সম্পর্কে অনুমান করা যায়। আরেকটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, নীল বা সবুজ চোখের লোকেদের আই মেলানোমার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। এর কারণ হলো, তাদের চোখে আলোক-শোষক রঞ্জক কম বিধায় অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, চোখের রঙ যাই হোক না কেন, চোখের সুরক্ষায় এমন সানগ্লাস পরা ভালো যা ৯৯ থেকে ১০০ শতাংশ অতিবেগুনি রশ্মি আটকাতে পারে। অথবা ইউভি ব্লকিং কনটাক্ট লেন্স পরতে পারেন।

* হালকা রঙের চোখ: শ্বেতরোগের ঝুঁকি কম

ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো স্কুল অব মেডিসিনের একটি গবেষণায় গবেষকরা প্রায় ৩,০০০ শ্বেতরোগীর উপাত্ত বিশ্লেষণ করেন। শ্বেতরোগ (ভিটিলিগো) হলো একটি অটোইমিউন ডিজিজ। এই রোগে ত্বক সাদা হয়ে যায়। গবেষণা উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নীল বা ধূসর চোখের লোকেদের মধ্যে শ্বেতরোগের হার কালো চোখের লোকেদের তুলনায় কম ছিল।  তবে শ্বেতরোগীদের অন্যান্য অটোইমিউন ডিজিজের ঝুঁকি বেশি, যেমন- লুপাস, টাইপ ১ ডায়াবেটিস ও থাইরয়েড রোগ।

তথ্যসূত্র: দ্য হেলদি