খেলাধুলা

ফিল্ডিং ‘কাল হলো’ মাহমু্দউল্লাহর 

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে স্কোয়াডে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নাম না দেখে এক সাবেক অধিনায়কের মন্তব্য, ‘হাথুরুসিংহে ফিরে একটা সিরিজে ওকে শুধু দেখেছে। ব্যাটিংয়ে কেমন করে সেটা নিশ্চিতভাবেই তার কাছে বিবেচ্য ছিল না। মাহমুদউল্লাহ ফিল্ডিং কেমন করে সেটা ছিল বড় ইস্যু।’

বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন যে থমথমে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সেখানে সাবেক ক্রিকেটার নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। অনিচ্ছুক এই কারণে যে, সম্পর্ক ফাটল ধরার ভয়! কিন্তু নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে তার মন্তব্য, ‘ওর ফিল্ডিংটাই শাপে বর হয়েছে। ব্যাটিং প্রতিদিন কেউ ভালো করে না। এমনকি বিরাট কোহলিও না। কিন্তু ফিল্ডিংটাই সবকিছু। গ্রাউন্ডে যে অ্যাটিটিউড থাকা উচিৎ সেটা মিসিং।’ 

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের ফিল্ডিং ছিল যাচ্ছেতাই। সহজ ক্যাচ মিস হয়েছে। গ্রাউন্ড ফিল্ডিং হয়েছে বাজে। রান আউটের সহজ সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। ফিল্ডারের হাতে নাগালে বল পাঠিয়ে এক রানকে দুই রান বানিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। 

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে এক ইংলিশ ব্যাটসম্যান আলতো টোকায় বল পাঠান স্কয়ার লেগে। সীমানার কাছে ফিল্ডিংয়ে থাকা মাহমুদউল্লাহ অনেকটাই ‘জগিং’ করে বল কুড়াতে আসেন। লং অন থেকে অধিনায়ক তামিম তাকে জোড়ে দৌড়ের তাড়া দিলে ভ্রুক্ষেপ ছিল না মাহমুদউল্লাহর। এক রানের জায়গায় দুই রান হয়ে যায় সহজেই। তামিম হাত উঠিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছিলেন। 

এ তো এক সিরিজের চিত্র। এর আগে একাধিক ম্যাচে এরকম ছোট-বড় ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে চেপে ধরে রাখতে পারেনি।

মাহমুদউল্লাহকে বাদ দেওয়া হয়নি বলে দাবি নির্বাচকদের। আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্রামে পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু তার ফেরার পথ কি খোলা? বর্তমান বাস্তবতায়, প্রেক্ষাপটে মাহমুদউল্লাহর জন্য সব দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। অতীত বলছে, টিম ম্যানেজমেন্ট এরকম যাদেরকে বিশ্রামে পাঠিয়ে তাদের ফেরার পথ আর মসৃণ হয়নি। হলেও তারা থিতু হতে পারেননি। 

২০২১ সালে ঠিক একইভাবে জিম্বাবুয়ে সফরের আগে টি-টোয়েন্টি দল থেকে মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিককে একসঙ্গে বিশ্রাম দেওয়ার কথা বলেছিলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। ফিরে এসে তারা টি-টোয়েন্টি খেললেও জায়গা থিতু করতে পারেননি। মুশফিক অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। মাহমুদউল্লাহ আড়াল হয়ে যান। তামিমও ‘স্বেচ্ছা অবসর’ কাটিয়ে ফিরতে পারেননি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে।

ব্যাটিং নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু পরিসংখ্যান তার পক্ষে কথা বলছে। গত দুই বছরে দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৮০৭ রান করেছেন মাহমুদউল্লাহর। গড় সর্বোচ্চ ৪২.৪৭। কিন্তু রান করা মানেই যে পারফর্ম করা নয় সেটা নির্বাচকরা বুঝিয়ে দিয়েছেন সোজাসাপ্টা। সঙ্গে ভবিষ্যতের চিন্তায় বিভোর টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকরা। 

মাহমুদউল্লাহর জায়গায় ফেরানো হয়েছে ইয়াসির আলী চৌধুরীকে। সঙ্গে আগে থেকে আছেন তৌহিদ হৃদয়। ইয়াসির ও হৃদয়রা যদি পারফর্ম করতে পারে তাহলে মাহমুদউল্লাহর বিশ্রাম পাকাপাকি হয়ে যাবে। বিশেষ করে হাথুরুসিংহে পুরনো কাউকে দলে রাখবেন না তা জোর দিয়ে বলা যায়। এখানে ভবিষ্যৎ ভাবনাও যুক্ত হচ্ছে। 

দ্বিতীয় মেয়াদে ফিরে হাথুরুসিংহে সাকিবকে তার পুরনো পাঁচ নম্বর পজিশনে পাঠিয়েছেন। তামিমের মতে, ‘সাকিবের ওই ব্যাটিং পজিশন ফিক্সড।’ নতুন কাউকে টপ অর্ডারে লাগাতার সুযোগ দিয়ে তৈরি করার প্রয়াস থেকেই সাকিবের পজিশন অদলবদল হয়েছে। সাকিব ব্যাটিং-বোলিংয়ে পারফর্ম করে উজ্জ্বল এবং অপ্রতিদ্বন্দ্বী। সেখানে মাহমুদউল্লাহর পায়ের নিজের জমিন এখন নড়বড়ে। তাই তাকে বিশ্রাম দিয়ে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়াই শুরু করলো টিম ম্যানেজমেন্ট।

তবে বল এখন মাহমুদউল্লাহর কোর্টে। ইয়াসির-হৃদয়রা আস্থার প্রতিদান দিতে না পারলে এবং আসন্ন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট হাসলে পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়াতে খুব বেশি সময় নেবে না। ভারতের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনী যেমন একবার বলেছিলেন, ‘টিল দ্য ফুল স্টপ ডাজেন্ট কাম দ্য সেনটেন্স ইজ নট কমপ্লিট।’ ক্রিকেটে শেষ বলতে কিছু নেই।